আলোচিত সাত খুনের আট বছর, রায় দ্রুত কার্যকর চান স্বজনরা

0

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাত খুনের আট বছর পূর্ণ হচ্ছে বুধবার। নিম্ন আদালতে সাত খুনের মামলাটির রায়ের পর উচ্চ আদালতে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখা হয়।

মামলাটি সাড়ে তিন বছর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় থাকায় নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নিহতদের পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জবাসী সাত খুনের মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাতজন অপহৃত হন। অপহরণের তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যা ব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন।

এরপর হাইকোর্ট ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

সাত খুনে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদিনী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, সাত খুন মামলায় রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। উচ্চ আদালত থেকে সাত খুনের আসামিদের ফাঁসি দণ্ডাদেশসহ যে রায়টি হয়েছে সেই রায়টিই যেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকে।

সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে সাত খুনের মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ্যার্টনি জেনারেলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি তিনি বলেছেন, করোনার মহামারি শেষ হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাত খুনের মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ অপেক্ষাই আমরা এখন প্রহর গুনছি।

সাত খুনে নিহত যুবলীগ নেতা মনিররুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রিপন বলেন, সাত খুনের মামলাটি উচ্চ আদালতে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখেন। আশা করি উচ্চ আদালতের রায়টিই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকবে এবং রায়টি দ্রুত কার্যকর করার দাবিও জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপিল বিভাগে মামলাটি সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে আছে। আমরা আশঙ্কায় আছি আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে সাত খুন মামলার রায়টি কার্যকর হবে কি না? আমরা আওয়ামী লীগের পরিবারের সদস্য হয়েও কেন এ মামলাটির রায় পেতে এতো দেরি হচ্ছে তাও জানি না।

নিহত তাজুল ইসলামের পিতা আবুল খায়ের বলেন, সাত খুন মামলাটির রায় কার্যকরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে রায়টি কার্যকর হবে কিনা জানি না। কেন বিলম্ব হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না। আমি সন্তান হারিয়েছি। সন্তানের লাশের বোঝা পিতার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোঝা। সরকার যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ রায়টি কার্যকর করেন। হাইকোর্টের রায়টি যেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।

তিনি আপেক্ষ করে বলেন, কিছু দিন আগে পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছি সাত খুনের মামলার ফাঁসি আসামি জেলখানায় বসে ফোনের মাধ্যমে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এতো সুযোগ-সুবিধা কি তারা পাচ্ছেন, আসলে তারা কি ফাঁসির আসামি, না জামাই হিসেবে জেলখানায় আদর পাচ্ছেন তা কিছুই বুঝতেছি না।

তিনি বলেন, তাজুলের মা সাত খুনের মামলার রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন কবে ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাবেন। আবুল খায়ের আপিল বিভাগে দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হেসেন খান বলেন, সাত খুনের মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আশা রাখি সরকার সাত খুনের মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবেন।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৬ জনের ফাঁসি ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়। আসামিপক্ষের আপিলের পর হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালতে যেখানে ২৬ জনের ফাঁসি আদেশ ছিল সেখানে হাইকোর্ট ১৫ জনকে ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন। মৃত্যুদণ্ড ১০ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। অন্যান্য আসামিদের সাজাও বহাল রেখেছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com