শবে কদর ও আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার নিবিড় ইবাদত

0

লাইলাতুল কদর তালাশের দশক পার করছেন রোজাদার। ইতিমধ্যে রমজানের রহমত ও মাগফেরাতের দশকের চলে গেছে। নাজাতের দশকে রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য- লাইলাতুল কদর পাওয়া। নাজাতের এ দশকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কদরের রাত পাওয়াই উম্মতের একান্ত আকাঙ্ক্ষা।

মুমিনের দরজায় কীভাবে আসবে এ রাত? এ রাত পেতে রোজাদার বান্দাই বা কী করবেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া এ রাত পেতে কোমড়ে কাপড় বেঁধে ইবাদত করতে বলেছেন। শেষ দশকে ইতেকাফ করতে বলেছেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
‘তোমাদের জীবনে আগত প্রতিটি রমজানের শেষ দশকের কোনো এক বেজোড় রাতে এ সম্মানিত রাতকে তালাশ কর।’

রমজানের ৩০ দিনের মধ্যে শেষ ১০ দিন অসম্ভব কঠোর সাধনায় অবিরাম ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর একান্ত রহমতেই সম্ভব এ রাত পাওয়া। এ জন্যই নবজিী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিবিড় ও একনিষ্ঠ ইবাদতের কথা বলেছেন।

রমজানের যতসব কল্যাণ তার সবটুকুই সে মাসের শেষ দশকে এসে সঞ্চিত হয় আর সেই অংশের কোনো বেজোড় রাতগুলোর মধ্যেই আত্মগোপন করে আছে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত- লাইলাতুল কদর।

মনে রাখতে হবে
নেকিতে পরিপূর্ণ এ রাতের সন্ধান পাওয়া কোনো সাধারণ বিষয় নয় এবং এটা কোনো সাধারণ কাজও নয়। যারা নবিজীর দিকনির্দেশনায় রমজানের শেষ দশকের দিন-রাত অতিশয় সাধনায় নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করবে তারাই পাবে মহান রবের সন্তুষ্টি ও মর্যাদার রাত ‘লাইলাতুল কদর।’

নবিজী শেষ দশকে নিবিড় ইবাদত করতেন এভাবে-
রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বেশি পরিশ্রম করতেন, আরও অধিক ইবাদতে মশগুল হতেন। নিজের পরিবার-পরিজনকে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন। হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রমজানের শেষ দশকে নবিজী যত পরিশ্রম করতেন, অন্য দশকে বা সময়ে তা করতেন না’ অর্থাৎ, তিন দশকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি পরিশ্রম করতেন শেষ দশকে, আর তা অবশ্যই ইবাদতের মাধ্যমে।’ (মুসলিম)

২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও বর্ণনা করেছেন, ‘শেষ দশক শুরু হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণরাত জেগে থাকতেন, পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে দিতেন এবং নিজে কোমর-বেঁধে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।’ (বুখারি)

বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া
শেষ দশকে লাইলাতুল কদরে পড়ার জন্য নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে একটি দোয়া বেশি বেশি পড়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাহলো-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোর রোজা যথাযথভাবে আদায় করা। যথাসময়ে ইতফতার করা। শেষ রাতে সেহরি খাওয়া। তারাকিব, তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করা। নবিজীর শেখানো দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। এ দশকই বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে রোজা পালন ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মাধ্যমে আত্মাকে সাজানোর সেরা সময়। কারণ রোজা ও কোরআন তেলাওয়াত হাশরের ময়দানে সুপারিশ করবেন। আর তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। হাদিসে পাকে তা এভাবে এসেছে-

রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার এবং কু-প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি, এ কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করো আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, সুতরাং এই কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো।’ (বায়হাকি)

তাই শেষ দশকের ইবাদত হবে নিবিড়। এ ইবাদতই হবে রোজাদারের জন্য কল্যাণকর। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সৎকর্মশীলতার দিক দিয়ে আল্লাহর দৃষ্টিতে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে মহৎ ও প্রিয় আর কোনো দিন নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ)

শেষ দশকে রোজাদারের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক যতো নিবিড় হবে, বান্দাও ততো মহান বান্দায় পরিণত হতে থাকবে। তাই রমজানের অবশিষ্ট এ দিনগুলো আল্লাহর বিশেষ সন্তুষ্টি কামনায় অতিবাহিত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের রোজা গ্রহণ করে নিন আর আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের বাকি দিনগুলো যথাযথ হক আদায় করে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। রোজা পালন, তারাবি, তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইসতেগফার বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। লাইলাতুল কদর পেতে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com