বিপদসীমার কাছাকাছি পদ্মার পানি, প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার দুপুরে পদ্মার পানি ছিল বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার নিচে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গেল এক সপ্তাহ ধরেই পদ্মা নদীতে পানি হু হু করে বাড়ছে। ফলে রাজশাহীর নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতিদিন পদ্মার পানির উচ্চতা পরিমাপ করে আসছেন। তিনি বলেন, এখন যেভাবে পানি বাড়ছে সেটা ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার কারণে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার দিকে গেট খুলে দেয়া হয়েছে।এনামুল হক জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। সর্বশেষ রবিবার দুপুর ১২টায় রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৭ দশমিক ৩৪ মিটার। এর আগে ভোর ৬টায় ১৭ দশমিক ৩০ মিটার। আর শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি পাওয়া গেছে ১৭ দশমিক ২২ মিটার।
রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। সে অনুযায়ী পানি এখন বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার নিচে। তবে এখনই রাজশাহীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে পদ্মার নদীর ওপারে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চরআষাড়িয়াদহ, পবার চরখিদিরপুর এবং বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকের বসতবাড়িও প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। আর নদীর এ পারে পাড় ছুঁই ছুঁই করছে পদ্মার পানি। এতে বন্যার আশঙ্কায় পড়েছেন পদ্মা নদী এ পারের বাসিন্দারা।
গেল ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি প্রবাহ বিপদসীমা অতিক্রম করেছে মাত্র দুইবার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর পানি বাড়লেও আর ওই রেকর্ড ভাঙেনি।
বর্ষা শেষে এ বছর যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে পানি বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, এখন ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলা রয়েছে। তাই পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। বিপদসীমাও অতিক্রম করতে পারে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে এ সপ্তাহের শেষ অথবা সামনে সপ্তাহের প্রথম দিকে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকার কথা জানিয়েছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া বন্যার আশঙ্কায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই প্রতিটি উপজেলায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। আরও প্রয়োজন হলে তা পাঠানো হবে।