রমজান মাসে ভ্রমণ

0

‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না।’- আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে মানুষের কষ্টকে সহজ করার জন্য এ ঘোষণা দিয়েছেন। ভ্রমণের কষ্ট কমাতে রমজানের ফরজ রোজায় ছাড় দিয়েছেন আল্লাহ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তাহলে রমজান মাসে সফরের মুসলিম উম্মাহর করণীয় কী?

আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরূপ এবং হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটি পাবে, সে যেন তাতে রোজা পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিনে (এ রোজার) সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হেদায়েত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা শোকর করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

ভ্রমণে রোজা পালনে নবিজীর ঘোষণা
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, হামজাহ ইবনে আমর আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, আমি কি সফরে রোজা রাখবো? তাঁর রোজা রাখার অভ্যাস ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি চাও রাখ, অন্যথায় ইফতার করো।’ (বুখারি, মুসলিম)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদিসে সামর্থ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। যারা সফরে রোজা রাখতে সক্ষম তারা রোজা রাখতে পারেন। আর না পারলে রোজা ভাঙতে পারেন।

২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে সফর করে রোজাবস্থায় ‘উসফান’ নামক স্থানে পৌঁছান। এরপর (সেখানে তিনি) পানির পাত্র ডেকে পাঠালেন ও দিনে পান করলেন, যেন লোকেরা তাকে দেখে। তিনি ইফতার করে মক্কায় গমন করেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে রোজা রেখেছেন ও ইফতার করেছেন। অতএব যার ইচ্ছা রোজা রাখ, যার ইচ্ছা ইফতার করো।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রমজানে যুদ্ধ করতাম, আমাদের মধ্য থেকে কেউ রোজা রাখতো, কেউ রোজা রাখতো না। রোজাদার রোজাভঙ্গকারীদের, আবার রোজাভঙ্গকারী রোজাদারকে তিরস্কার করতেন না। তারা মনে করতেন, যার শক্তি আছে সে রোজা রাখবে, এটার তার জন্য ভালো, আর যে দুর্বল সে রোজা ভাঙবে, এটাও তার জন্য ভালো।’ (মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)।

৪. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রোজাবস্থায় মক্কার দিকে সফর করছি, আমরা একস্থানে অবতরণ করলাম, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের শত্রুদের কাছাকাছি হয়েছো, পানাহার তোমাদের শক্তির জন্য সহায়ক। এটা ছিল রুখসাত (ছাড়)। আমাদের কেউ রোজা রাখলেন, কেউ ভাঙলেন। এরপর আমরা অন্য স্থানে অবতরণ করলাম। তিনি বললেন, সকালে তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হবে, ইফতার তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে। এটা চূড়ান্ত নির্দেশ ছিল। আমরা সকলে ইফতার করলাম। এরপর তিনি বলেন, আমরা নিজেদের দেখেছি, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সফরে রোজা রাখতাম।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

৫. হজরত আছিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সফরকালে রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘যে রোজা রাখবে না সে অবকাশ গ্রহণ করলো। আর যে রোজা রাখলো সে উত্তম কাজ করলো।’

সাধারণভাবে মুসাফির বা ভ্রমণকারীর জন্য সফর বা ভ্রমণ অবস্থায় রোজা না রাখাই উত্তম। আর রমজানের সময় সফরের হালতে রোজা রাখা ও না রাখা যদি বরাবর হয় তবে রোজা রাখাই উত্তম। আর যদি রোজা রাখা কষ্টকর হয় তবে না রাখাই উত্তম। কিন্তু ‘যদি বেশি কষ্ট হয়, তবে রোজা না রাখা ওয়াজিব বা আবশ্যক।

পরিশেষে…
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট হাদিসটি পুনরায় উল্লেখ করে শেষ করতে চাই; যা হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম। রোজাদার বে-রোজাদরকে এবং বে-রোজাদর রোজাদারকে কোনো প্রকার দোষারোপ করেন নাই।’ তাই সফরে কষ্টকর হলে রোজা ভাঙতে কোনো দোষ নেই। সম্ভব হলে রোজা রাখাই উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সফরের সময় অবস্থানুযায়ী রোজার হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com