কে হচ্ছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী?
পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে যে সিদ্ধান্ত ডেপুটি স্পিকার দিয়েছিলেন তাকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে বাতিল করে দিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ইমরান খানের আহ্বানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার জাতীয় পরিষদ পুনরুজ্জীবিত করে অধিবেশন শুরুর পাশাপাশি আস্থা ভোটের ফয়সালা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
পার্লামেন্ট পুনর্বহালে সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের রাজনীতি আবারও নাটকীয় মোড় নিয়েছে। এমনকি অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের বিদায় নিশ্চিত ধরে নিয়ে সম্ভাব্য নতুন ফেডারেল সরকার গঠনের আলোচনাও শেষ করে ফেলেছে বিরোধী জোট। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ।
ইমরান খানের বিরোধী জোট জানিয়েছে, জাতীয় সরকারের মতো নতুন ফেডারেল সরকার গঠন করা হবে। এতে আনুপাতিক হারে শরিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ছয় মাস অথবা এক বছর রাখার বিষয়টি বর্তমানে বিবেচনায় রয়েছে। এই মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনী সংস্কার ও জবাবদিহি-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো পাস হতে পারে। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে।
জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী। শপথ নেওয়ার পর তিনি সম্ভাব্য সরকারের অগ্রাধিকারগুলো ঘোষণা করবেন। এসব অগ্রাধিকারের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রুপির দরপতন ঠেকানোর মতো অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন থাকবে।
যুদ্ধ নয়, শান্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সব দেশের সঙ্গে সমানভাবে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন আনবে সম্ভাব্য নতুন সরকার। নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে।
নতুন প্রেসিডেন্ট এবং চারটি প্রদেশে নতুন গভর্নর নিয়োগে সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইমরান খান সরকারের সব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা ও পরিবর্তন করা হতে পারে বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সরকার গঠনের পরপরই পরামর্শ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে দেশে ফেরানোর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নওয়াজ শরিফ বর্তমানে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণে গতকাল বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর উল্লাসে মেতেছে ইমরানবিরোধী শিবির। একে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে দেখছে তারা।
সুপ্রিম কোর্টের এমন রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ‘শেষ বল’ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইমরান খান বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘শুক্রবার ক্যাবিনেটের বৈঠক ডেকেছি। সংসদীয় দলের সঙ্গেও বসবো। সন্ধ্যায় আমি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবো। সবসময় দেশবাসীর পাশে আছি।পাকিস্তানের হয়ে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো’।
গত রবিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী জোটের তরফে পেশ হওয়া অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটির কথা থাকলেও ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি তা খারিজ করে দেন। তিনি জানান, বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী এবং তা দেশের কল্যাণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পাকিস্তানের সংবিধানের ৫ নম্বর ধারা মেনে এ নিয়ে কোনো ভোট করাতে পারবেন না তিনি।
এর পরেই ইমরান খানের সুপারিশে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সেদিন রাতেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেন বিরোধীরা। সোমবার থেকে শুনানি শুরু হয়। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে এতে অংশ নেন বিচারপতি মুনীব আখতার, বিচারপতি আইজাজুল আহসান, বিচারপতি মাজহার আলম ও বিচারপতি জামাল খান মন্দোখেল।
ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা না থাকা নিয়ে চরম রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। ইমরানের দাবি, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ও বিদেশিরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন ইমরানসহ অনেকেই। এমনকি রাশিয়া অভিযোগ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবাধ্য’ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শাস্তি দিতে চেয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইমরান খানের বিরোধীদের অর্থায়ন করে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তার সরকার পতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইমরান খানের বিরোধীদের দাবি, ২০১৮ সালে সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। এখন তাঁর মাথার ওপর থেকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছায়া সরে গেছে। যদিও কোনো পক্ষই বিষয়টি স্বীকার করে না। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে ‘গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহ’ করেছেন ইমরান খান।
পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে কোনও প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের ক্ষমতার পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে পারেননি। কখনও খুন হয়ে, আবার কখনও বিরোধী দলের অনাস্থার মুখে পড়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীদের।