টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার, বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হতাশা

0

টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই ঘটছে একের পর এক দরপতন। পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। ফলে প্রতিদিন পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের হতাশা বাড়ছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দরপতন হওয়ার মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।

গত বছরের অক্টোবর থেকেই পতনের মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পতনের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। একদিনে কোনো সিকিউরিটির দাম দুই শতাংশের বেশি কমতে পারবে না বলে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে।

এতে পতনের মাত্রা কিছুটা কমলেও দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না। উল্টো প্রতিদিন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ক্রেতা সংকট দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে লেনদেনেও নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম করার পাশাপাশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি বিএসইসির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, রোজার মাসে স্টক ব্রোকার ও ট্রেকহোল্ডাররা প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবেন। সেই সঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নিজস্ব পোর্টফোলিও’র মাধ্যমে নতুন করে ২০০-৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা আইসিবির মাধ্যমে বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে এমন ঘোষণা আসলেও শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে না। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও, শেষ চার কার্যদিবস টানা দরপতন হয়েছে। সেই সঙ্গে লেনদেন কমতে কমতে এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে, যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষপর্যন্ত। একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকায় একপর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ৫৮ পয়েন্ট কমে যায়।

এ পরিস্থিতিতে ডিএসই’র মাধ্যমে ঘোষণা আসে স্কয়ার ফার্মার চার পরিচালক কোম্পানিটির ৯ লাখ শেয়ার কিনবেন। এ শেয়ার কেনার ঘোষণা আসার পর স্কয়ার ফার্মাসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দাম দরপতন থেকে বেরিয়ে আসে। এতে কমে সূচকের পতনের মাত্রা।

ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৬৪১ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে টানা চারদিনের পতনে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক কমলো ১৩০ পয়েন্ট।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক বৃহস্পতিবার ৭ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৪৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বাজারটিতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩০টি। আর ৫২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫১৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অবশ্য বুধবার ডিএসইতে গত বছরের ১১ এপ্রিলের পর সব থেকে কম লেনদেন হওয়ার ঘটনা ঘটে।

শেয়ারবাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিদিন আশায় থাকি আজ বাজার ভালো হবে। কিন্তু প্রতিদিনই শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে এবং আমরা পুঁজি হারাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।

তিনি বলেন, অনেক দিন হয়ে গেলো বাজার নিম্নমুখী। বাজার ভালো করতে বিএসইসি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না। ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছি, দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। সংসারেও নানা অশান্তি দেখা দিচ্ছে।

ডিএসই’র একজন সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে এখন যে হারে দরপতন হচ্ছে, তার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তবে কিছু বিনিয়োগকারী মূল মার্কেটে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়ে এসএমই মার্কেটে বিনিয়োগ করছে। এ কারণে মূল বাজারে লেনদেন কিছুটা কম হচ্ছে। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানের দরপতনের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, কোনো গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে দরপতনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com