রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সেনাবাহিনী

0

রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সেনাবাহিনী। এই দুই ইস্যুতে পাকিস্তানের ভেতরে এবং বাইরে সতর্ক আলোচনা, সমালোচনা। অনেকেই আভাস দিচ্ছিলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষমতা নিয়ে নিতে পারে পাকিস্তানের শক্তিধর সেনাবাহিনী। অন্তত, তাদের অতীত ইতিহাস সেরকম কথাই বলে। এমন আলোচনার যথেষ্ট কারণ আছে- আলোচনা আছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খানকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে সেনাবাহিনী। তারপর তাদের দহরম-মহরম চলেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইমরান খান ও সেনাবাহিনী, বিশেষ করে সেনাপ্রধান জাভেদ কমর বাজওয়ার মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। সেনাপ্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে ইমরান খান ছিলেন গররাজি।

অন্যদিকে আইএসআই-এর মহাপরিচালক পদে ইমরানের সুপারিশে সেনাপ্রধান বসান লেফটেন্যান্ট ফৈজ হামিদকে। কিন্তু গত বছর নভেম্বরে জেনারেল হামিদকে সরিয়ে দেন সেনাপ্রধান। তার পরিবর্তে এ পদে দায়িত্ব দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আনজুমকে। এ নিয়ে দ্বিমত ছিল ইমরানের। তিনি চেয়েছিলেন হামিদকেই ওই পদে রাখতে। এসব নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের সম্পর্কে ফাটল ধরে। তবে সেনাবাহিনী এবং ইমরান খান একে অন্যকে সুবিধা দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু ইথারে ঘুরতে থাকে এসব কথা। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন ইমরান খান। কিন্তু তাকে পাত্তা দেননি বাইডেন। যখন দৃশ্যত এক রকম চাপের মুখে ইমরান, তখনই তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া শুরু করেন বিরোধীরা। তারই ফল হিসেবে আসে অনাস্থা প্রস্তাব। এতে সর্বশেষ সোমবার পার্লামেন্টে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইমরান খানের ইনসুইংয়ে তা বানচাল হয়। এ সময় উভয় পক্ষ যে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল, তাতে যদি ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হতো, তাহলে এক বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারতো ইসলামাবাদে। এমন হলে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা করতে থাকেন। তারা মনে করেন, এমন হলে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে সেনাবাহিনী। আবার ক্ষমতা যেতে পারে ফৌজিদের হাতে। কিন্তু পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইসিপিআর)-এর পরিচালক মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার সোমবার জানিয়ে দেন- স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনীর কিছু করার নেই। দৃশ্যত, সেদিকেই যাচ্ছে সেনাবাহিনী। তারা হয়তো ক্ষমতা নেবে না। তবে ভবিষ্যৎ কি হয় তা হলফ করে বলা অসম্ভব।

ওদিকে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হওয়ার পর বিরোধী দলগুলো আশ্রয় নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। সেখানে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে তাদের আবেদন নিয়ে শুনানি চলছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনাস্থা ভোটের কার্যপ্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়েছে তার রেকর্ড মঙ্গলবার চেয়ে পাঠিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি, যিনি ইমরান খানের অন্ধভক্ত, তিনি অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক বলে তা খারিজ করে দিয়েছেন। এখন এই আদেশের আইনগত বৈধতা যাচাই করে দেখছে সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে সোমবার প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, আদালত এ ইস্যুতে যৌক্তিক রায় দেবে। কিন্তু পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং বিরোধী অন্য দলগুলোর আইনজীবী ফারুক এইচ নায়েকের যুক্তিতর্কের ওপর শুনানির পর আদালত ওইদিন মুলতবি করা হয়।
এরপর মঙ্গলবার আদালতে শুনানি শুরু হয়। এতে পিপিপির সিনেটর রাজা রাব্বানি যুক্তি তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলেছে, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তারা নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তিনি আদালতের কাছে অনুরোধ করেন পার্লামেন্টের কার্যপ্রণালির ক্ষেত্রে দায়মুক্তির বিষয়টি যেন যাচাই করে দেখা হয়। এটাকে শুধু বেসামরিক এক মার্শাল ল’ হিসেবে অভিহিত করা যায়। তিনি দাবি করেন, সুরির রায় ছিল বেআইনি। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক রায় দেয়া যেতে পারে না। অনাস্থা প্রস্তাবকে ভোটে না দিয়ে তা খারিজ করে দেয়া যায় না। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ উদ্ধৃত করে তিনি এ কথা বলেন। আদালতে তিনি আরও বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রয়াত একজন এমপির মৃত্যুর কারণে ২১শে মার্চ দোয়া অনুষ্ঠানের পর জাতীয় পরিষদ মুলতবি করা হয়। অতীতে এমনটা ঘটেনি। রোববারের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে পিটিআইয়ের ফাওয়াদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। তিনি একটি চিঠি এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কথা বলেন। এ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন রাজা রাব্বানি। বলেন, এটা তো দিনের এজেন্ডার মধ্যে ছিল না। বিরোধী দলীয় এমপিদেরকে কাসিম সুরি প্রমাণ ছাড়াই রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে অভিঞিত করেছেন। একে অন্যায় বলে দাবি করেন রাজা রাব্বানি। তিনি আরও বলেন, স্পিকার আসাদ কায়সারের বিরুদ্ধেও অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল, যা তার ক্ষমতাকে সীমিত করে। রাজা রাব্বানি বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবের প্রক্রিয়া শেষ না করে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করা যায় না। এ জন্য তিনি জাতীয় পরিষদ বিলুপ্তির আদেন বাতিল করে তা পুনঃস্থাপনের আর্জি জানান আদালতে।

এসব ইস্যুতে সোমবার শুনানি হয় আদালতে। প্রধান বিচারপতি এতে তার পর্যবেক্ষণে বলেন, দৃশ্যত অনাস্থা প্রস্তাব যে অবৈধ তা আরও আগে উল্লেখ করা উচিত ছিল। অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়ায় ডেপুটি স্পিকারের রায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি মুনিব আখতার। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এমন একটি রায় পাস করার এখতিয়ার ডেপুটি স্পিকারের আছে। তিনি বলেন, এটা করতে পারেন শুধু স্পিকার। ওদিকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটিতে যোগ দিয়ে বিরোধী দল কেন ব্যর্থ হয়েছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। ওই মিটিংয়ে বিদেশি হুমকিমূলক চিঠি শেয়ার করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com