কোন দিকে যাবে পাকিস্তানের রাজনীতি?

0

পাকিস্তানের রাজনীতি কোন পথে যাবে তা এখন নির্ধারিত হবে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে। নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঠেকাতে যে অপ্রত্যাশিত চাল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান খেলেছেন তার বৈধতা নির্ধারিত হবে এখন আদালতে। মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টির ফয়সালা করতে পারেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে থাকা ৫ সদস্যের বেঞ্চ। এই রায়ের ওপরেই নির্ভর করছে সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তানের রাজনীতি কোন দিকে যাবে। সম্ভাব্য কিছু ফলাফল বাতলে দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।

এতে বলা হয়েছে, অনাস্থা ভোট থামাতে ইমরান যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিতে পারে আদালত। এটি হলে দেশটির ভেঙ্গে দেয়া সংসদ আবারও ফিরে আসবে এবং ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। হিসেব অনুযায়ী ওই ভোটে হারবেন ইমরান। এটি হলে বিরোধীরা নিজেদের একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবেন এবং ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন।

এরপরে পাকিস্তানে আবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও বিরোধীরা এরইমধ্যে জানিয়েছেন, তারা ক্ষমতা পেলে দ্রুত নির্বাচন দেবেন। তবে এর আগে তারা ইমরানকে রাজনৈতিকভাবে হারাতে চান এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট প্রস্তুত করতে চান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তাদের। আদালত যদি এখন ইমরান খানের বিরুদ্ধে রায় দেয় তাহলে ৬৯ বছর বয়স্ক এই সাবেক ক্রিকেট তারকাকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। কারণ, বিরোধীরা এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। এর ফলে এমন পরিস্থিতিও হতে পারে যে, ইমরান খান আগামি নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য ঘোষণা হতে পারেন। ২০১২ ও ২০১৭ সালে পাকিস্তানে এমন নজির দেখা গেছে।

তবে কোর্ট যদি ইমরান খানের পদক্ষেপকে বৈধতা দেয়? তাহলে আগামি ৯০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে ইমরান খানের জন্য বড় রাজনৈতিক জয় এবং নির্বাচনে জয়ের জন্য তার মনোবলও অনেক শক্ত থাকবে। যদিও আল-জাজিরাকে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেজিস্লেটিভ ডেভেলপমেন্ট এন্ড ট্রান্সপারেন্সি’র কর্মকর্তা আহমেদ বিলাল মাহবুব বলেন, অনাস্থা প্রস্তাব ঠেকাতে জাতীয় পরিষদের স্পিকারের এই ঘোষণা অসাংবিধানিক এবং সংবিধানের ওপর আঘাত। তাই আদালত যদি এই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করে তাহলে তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আবার আদালত রায় দিতে পারেন যে ইমরান খানের পদক্ষেপ অবৈধ ছিল, কিন্তু তারপরেও অনাস্থা ভোট না হয়ে, নির্বাচনের দিকেই যেতে পারে পাকিস্তান। কারণ এরইমধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ক্ষতি কমাতে তাই নতুন নির্বাচনই হতে পারে সমাধান। তবে ইমরান খান ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ তখনও থাকছে।

গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটি প্রশ্ন গত কয়েক দিনে দেখা গেছে যে, আদালত কি আদৌ দেশের সংসদীয় কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে? সংবিধানের একটি ধারায় বলা আছে যে, আদালত এটি করতে পারে না। কিন্তু এর আগেও পাকিস্তানে আদালত বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। আদালত চাইলে নিজেকে এর বাইরে রাখতে পারে। যদি সেটি হয়, তাহলে ইমরান খান যত পদক্ষেপ নিয়েছেন সব আইনগতভাবে বৈধ হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আল-জাজিরার রিপোর্টে পাকিস্তানে আবারও সেনা শাসন হতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানে তিন বার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে, ১৯৫৮, ১৯৭৭ এবং ১৯৯৯ সালে। স্বাধীনতা লাভের পর প্রায় অর্ধেক সময়ই সেনাবাহিনীর অধীনে থেকেছে পাকিস্তান। তবে এবার শীর্ষ জেনারেলরা চলমান রাজনৈতিক সংকটে যুক্ত থাকার সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী গণতন্ত্র রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও আশ্বস্ত করেছেন তারা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com