মোদি সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট বাইডেন!

0

ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহু দেশ। অস্ট্রেলিয়া ও জাপানও আমেরিকার পথে হেঁটে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। এই আবহে ভারত ব্যাতিক্রম থেকেছে। প্রথম থেকে যুদ্ধের বিরোধিতা করে এলেও সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শব্দ খরচ করেনি ভারত। এই আবহে ভারতের প্রতি কিছুটা ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কোয়াডভুক্ত জাপান, অস্ট্রেলিয়ার প্রশংসা করলেও ভারতকে কিঞ্চিত খোঁচা দিলেন বাইডেন।

এদিন জো বাইডেন বলেন, ‘ভারত বাদে কোয়াড রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ভারত কিছুটা নড়বড়ে। কিন্তু পুতিনের আগ্রাসন মোকাবিলার ক্ষেত্রে জাপান অত্যন্ত শক্তিশালী পদক্ষেপ করেছে। অস্ট্রেলিয়াও বেশ কঠোর পদক্ষেপ করেছে।’ উল্লেখ্য, আমেরিকা সম্প্রতি রাশিয়ার তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর এরই মাঝে ভারত রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনতে চলেছে। এই নিয়ে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। আমেরিকা চেয়েছিল যাতে ভারত রাশিয়ার থেকে তেল না কেনে। তবে ভারত নিজেদের স্বাধীন বিদেশ নীতির অন্তর্গত আমেরিকার দ্বারা এই ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়নি। এর আগে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনা নিয়েও আমেরিকা ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে তাতেও ভারত এস-৪০০ কেনা থেকে বিরত থাকেনি। এই আবহে বাইডেনের গলায় এদিন অসন্তোষ ঝরে পড়ে।

এর আগে গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে রাশিয়া থেকে ভারত যে তেল কিনতে চলেছে, সেই প্রসঙ্গে জো বাইডেন হস্তক্ষেপ করবেন কি না। তখন হোয়াইট হাউজের তরফে বলা হয়েছিল, ‘এমনটা হলে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে। আপাতত ভারতের শীর্ঘ নেতৃত্বের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে মার্কিন কর্তাদের।’

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোদী যৌথ বিবৃতিতে বলেন যাতে ইউক্রেনে অবিলম্ব যুদ্ধ বন্ধ হোক। ভারত এই একই ভাষায় ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে সুপারিশ করেছিল জাতিসঙ্ঘে। তবে সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো কথা ভারত বলেনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়া থেকেও বিরত থেকেছে ভারত।

খনিজ ইস্যুতে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে দিল্লির বড় পদক্ষেপ
বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খণিজ ঘিরে এত দিন পর্যন্ত চীনের ওপর ভারত নির্ভর করে থাকত। এবার সেই নির্ভরতার কিছুটা দিক কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে দিল্লি। সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অস্ট্রেরিয়ার স্কট মরিসনের বৈঠক ঘিরে একাধিক পদক্ষেপ উঠে এসেছে। এবার খনিজ ছাড়াও ছাত্র ইস্যু থেকে শুরু করে পেশাগত দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নতুন গাঁটছড়া বেঁধেছে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত।

দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে একাধিক ক্ষেত্রে। উল্লেখ্য, এই সাক্ষাতের পর অস্ট্রেলিয়া ১৫৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে মহাকাশ গবেষণা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে। দুই দেশই সম্মত হয়েছে, কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক কো অপরেশন এগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে। এছাড়াও চাষাবাদ সংক্রান্ত বাণিজ্যের চূড়ান্ত রূপরেখা দেয়ার বিষয়েও দুই দেশ সম্মত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের কোয়াড বৈঠকের পর অস্ট্রেলিয়া ও ভারত দুই দেশের রাষ্ট্রনেতারা এই প্রথম মুখোমুখি হলেন ভার্চুয়াল মিটে। তারপর থেকে, উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা উন্নত করেছে, একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা সশস্ত্র বাহিনীকে রসদ এবং ঘাঁটিতে পারস্পরিক সহায়তা দেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে সহযোগিতার পদক্ষেপ নিয়েছে। এদিনের বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিন্দিতে ভাষণ দেন। সেখানে স্কট মরিসনকে তিনি ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড’ বলে আখ্যা দেন। মোদি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, শিক্ষা ও উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এই সব ক্ষেত্রে আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে।’ এদিকে, স্কট মরিসন বলেন, অতিমারী পরবর্তী দুনিয়ায় যাতে আরও এগিয়ে যাওয়া যায়, তাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দুই দেশ।

এরপরই জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার খনি দেখে ভারতে আসবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। আর সেই মর্মেই এই স্বাক্ষরিত হয় একটি মৌ চুক্তি। ভারতের খানিজ বিদেশ ইন্ডিয়া লিমিটেড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিটিক্যাল মিনারেল ফেসিলিয়েশন অফিস এই চুক্তি স্বাক্ষরিত করে। লিথিয়াম, কোবাল্ট এবং ভ্যানাডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের সবচেয়ে বড় মজুদ ভাণ্ডার অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে, যা মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, সোলার প্যানেল এবং অন্যান্য হাই-টেক অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত খণিজের ক্ষেত্রে ভারত আগ্রাসী কূটনীতিতে অস্ট্রেলিয়াসহ একাধিক দেশের মুখাপেক্ষী হয়েছে, যাতে চীনের ওপর থেকে কাটানো যায় নির্ভরতা। উল্লেখ্য, বিশ্বের মোট খণিজ উত্তোলনের ৮০ শতাংশ পাওয়া যায় চীন থেকে।

অন্যদিকে, উভয় পক্ষ ভারতের জাতীয় বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো তহবিল এবং অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যত তহবিল, একটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এছাড়াও দুই পক্ষের রাষ্ট্রপ্রধানরাই বার্ষিক প্রাতিষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে সম্মত হয়েছেন। ভারত বর্তমানে শুধু জাপান ও রাশিয়ার সাথেই এই ধরনের ব্যবস্থা করেছে।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com