পুতিনের সাথে আবারো সরাসরি বৈঠকের ডাক জেলেনস্কির
ইউক্রেনে রুশ অভিযান চলতে থাকার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আবারো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেন, তার সাথে পুতিনের বৈঠক ছাড়া এ যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে আলোচনা সম্ভব হবে না।
রাশিয়ার দখলকৃত ক্রাইমিয়া, ডনবাস অঞ্চল এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টিসহ সকল বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি তৈরি আছেন।
তবে জেলেনস্কি এ-ও বলেন যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলোকে অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
এমন এক সময় জেলেনস্কি এ আহ্বান জানালেন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে ভ্লাদিমির পুতিনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এবং তিনি হয়তো ইউক্রেনে রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
ক্রেমলিন অবশ্য সোমবার বলেছে যে এই দুই নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠক হবার মতো অগ্রগতি আলোচনায় এখনো হয়নি।
রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর সেদেশ থেকে ২০ লাখের বেশি লোক পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে, বলছে পোলিশ সীমান্ত রক্ষী কর্তৃপক্ষ।
জেলেনস্কি ইতোমধ্যে পোপ ফ্রান্সিসের সাথে কথা বলেছেন এবং আভাস দিয়েছেন যে ভ্যাটিকান হয়তো এ যুদ্ধ মধ্যস্থতার ভুমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া তিনি ভিডিও লিংকে ইতালির পার্লামেন্টেও এক ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, তার দেশ এখন প্রায় চার সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া রুশ অভিযান অতিক্রম করে টিকে থাকার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।
তার এই সতর্ক আশাবাদ সত্ত্বেও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী সতর্ক করছে যে বিভিন্ন শহর ও অবকাঠামোর ওপর রাশিয়া তাদের নির্বিচার গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাবে।
অনেকগুলো শহরের আশপাশে লড়াই চলছে
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিউপোল, উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ-এগুলোর আশপাশে এখনো লড়াই চলছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আরো বেশি বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে এক পাল্টা অভিযান চালিয়ে কিয়েভের পশ্চিমের মাকারিভ শহরটি পুনর্দখল করেছে।
কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে ২৫ মাইল পূর্বদিকের আরেকটি শহর বোরিস্পিলের আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যেই যুদ্ধ চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের ওই অঞ্চল ছেড়ে যাবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিয়েভের প্রধান আন্তজাতিক বিমানবন্দরটি এখানেই।
মেয়র ভলোদিমির বোরিসেংকো বলেছেন, বেসামরিক লোকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে যাওয়া উচিত কারণ এ ছাড়া রুশ সীমান্ত থেকে ৩০ মাইল দূরের খারকিভ শহরে রুশ বাহিনী অবিরাম গোলাবর্ষণ করছে। সেখানে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, এবং প্রায় ১০০০ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, রাশিয়া গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের আকাশসীমায় তাদের বিমানের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। তবে তারা এটাও বলছে যে রুশ বাহিনীর হাতে মাত্র তিন দিন চলার মত জ্বালানি ও গোলাবারুদের মজুত আছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করছে যে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। রাশিয়া বলছে ২ মার্চ পর্যন্ত তাদের ৪৯৮ জন সৈন্য নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে এই প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ইউক্রেনীয় বন্দর ওডেসার আবাসিক এলাকায় রুশদের নিক্ষিপ্ত গোলা এসে পড়েছে। সাগর থেকে রুশ নৌবাহিনী এ গোলাবর্ষণ করে বলে জানা গেছে।
তবে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছে, রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে, এবং ইউক্রেনের বাহিনী মারিউপোল শহরটি দখলে নেয়ার রুশ চেষ্টা ঠেকিয়ে দিচ্ছে।
অবরুদ্ধ মারিউপোল শহর থেকে আরো তিন হাজার লোককে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সোমবার বিভিন্ন যুদ্ধ এলাকা থেকে মোট আট হাজার বেসামরিক লোককে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
মারিউপোলে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এখনো দুই পক্ষের ঐকমত্য হয়নি।
সূত্র : বিবিসি