আরো বড় পরিকল্পনা পুতিনের?

0

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনীর বুটের শব্দ। বাতাসে বারুদের পোড়া গন্ধ। ইউক্রেনজুড়ে চাপা আতঙ্ক আর বুকচাপা কান্নার আবহ। হুমকি-চোখ রাঙানি-নিষেধাজ্ঞা কোনো কিছুই দমাতে পারেনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। ইউক্রেন জয়ের লক্ষ্যে অটল তিনি। কিন্তু এখানেই কি শেষ হবে পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা? থামবে রুশ আগ্রাসন? ব্যাপারটা অত সহজ নয়, বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। রুশ প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য অনেক বড়।

ঠাণ্ডা যুদ্ধের শেষে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন নাড়া দিয়েছিল ভ্লাদিমির পুতিনকে। মেনে নিতে পারেনি রাশিয়া-রাজের এহেন হাল। বারবার তার বক্তব্যে সে কথা উঠে এসেছে। পুনরায় সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের স্বপ্নও দেখেন পুতিন। সে কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেন দখল ওই স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। ফলে এর পর যদি রুশ প্রেসিডেন্ট বলকান এলাকার দেশগুলোকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে চান, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে মতামত প্রকাশ করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সিনিয়র গবেষক ভ্লাদিমির পাশতুহভ। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে, ‘সম্ভব হলে ইউক্রেনের বাইরে থাবা বসাতে পারে রাশিয়া।’ এক সময় ইউক্রেনের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন উইলিয়াম টেলর। তিনি বলছেন, ‘মনে হচ্ছে না রাশিয়া এবার ইউক্রেনেই থেমে যাবে বলে। ইউক্রেনে রুশ ট্যাঙ্কার, প্যারা ট্রুপারস এবং পদাতির বাহিনীপ দাপাদাপি দেখেই বুকে কাঁপুনি ধরেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ পোলান্ড, রোমানিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রেরও।’ ২০০৪ সালে বাল্টিক দেশগুলো আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো গ্রুপে যোগ দিয়েছিল। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রুশ আগ্রাসনের বিরোধিতা রপে তারা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাই মস্কোর যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাল্টিক দেশগুলোর নেতাদের মনেও ভয় ধরিয়েছে। যদি তাদের দেশেও থাবা বসায় পুতিনের বাহিনী?

চাথ্যাম হাউজের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান জেমস নিকসের আশঙ্কা বলকান অঞ্চল নিয়ে। তার আশঙ্কা, রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট হতে পারে বলকান অঞ্চলের সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি। কারণ পশ্চিমী দেশগুলো এত দিন এদের নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তাদের দিকে নজর দেয়নি। মলডোভা এলাকায়ও হতে পারে রুশ আগ্রাসন।

নিরাপত্তার নামে দেশ দখলের চেষ্টা, রাশিয়ার পুরনো ‘খেলা’। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার শাসকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ এনেছিল মস্কো। ওই দেশে গণহত্যার হাত থেকে ওসেইটিয়ানসদের রক্ষার নামে হামলা চালিয়েছিল। যদিও রাশিয়ার ওই যুক্তি ধোপে টেকেনি। ব্যর্থ হয়েছিল তাদের অভিযান। এর পর ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকেও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে রাশিয়া। উল্লেখ্য, ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনতে পুতিন সমস্ত শর্ত রেখেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকার করতে হবে কিয়েভকে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়তে এক অনবদ্য ছক কষেছে রুশ সেনাবাহিনী। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কিছু প্রাক্তন সেনাসদস্য সেই ছক ফাঁস করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। দেশ দখলের সেই পরিকল্পনার তিনটি ধাপ রয়েছে। এক, বিদ্রোহীদের অধিকৃত অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। দুই, সেখানে নিরাপত্তার অজুহাতে রুশ সেনা পাঠানো। তিন, ওই অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করা, সেই ভোটের মাধ্যমে অঞ্চলটিকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।

এই অঙ্কেই হারিয়ে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নকে পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে পুতিনের রাশিয়া। পাশ্চাত্যের দেশগুলো যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে রাশিয়ার এহেন আগ্রাসন যে এখানেই থামবে না, তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গেছে।

সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com