আজ ‘৩০ ডিসেম্বর’ মধ্যরাতে ভোটডাকাতির নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণের দিন

0
আজ ‘৩০ ডিসেম্বর’ মধ্যরাতে ভোটডাকাতির কলঙ্কিত নির্বাচনের তৃতীয়বর্ষ। নীলনকশার অংশ হিসেবে ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮ অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটেরদিনের আগের রাতেই সারাদেশে সিংহভাগ ভোটকেন্দ্র পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখল করে নিয়ে রাতভর ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখে। ভোটের দিন শুধু মাত্র আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়েছিল। আর এইভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার ম্যান্ডেট ছাড়াই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে অবৈধ শাসগোষ্ঠী। এর আগে জানুয়ারি ৫, ২০১৪, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী-ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ। এই দুইটি নির্বাচন শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং একবিংশ শতাব্দির এই বিশ্বে অনাকাঙ্ক্ষিত যা দেশের ও বিশ্বের গণতন্ত্রকামী জনগণ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকমহলকে বিমূঢ় করেছে।

 

ভোটেরদিন বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখান করে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আগের রাতের ভোট দেয়ার খবর সকাল থেকেই ফলাও করে প্রচার করে। সে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নয়ন সহযোগী গণতান্ত্রিক সভ্য দেশগুলো। তারা ব্যাপক ভোট কারচুপির তদন্ত দাবি করে।

 

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে একতরফা নির্বাচন আয়োজন করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মালায় সাজা দিয়ে বন্দি করে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, গায়েবি মামলা দিয়ে নির্বাচন ময়দানকে ফাঁকা করে ভোট ডাকাতির নির্বাচন আয়োজন করে ফল আওয়ামী লীগের অনুকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

 

বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকাশিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলে অস্বাভাবিক ভোট পড়ার চিত্র উঠে আসে আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতেও। টিআইবি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফলাফল জাতির সামনে তুলে ধরে। ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমপক্ষে ২১৩টি কেন্দ্রে ১০০% ভোট পড়েছে। আর অন্তত ১ হাজার ৮৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৫% থেকে ৯৯.৯৯ শতাংশ। ৫৮৬ কেন্দ্রে সব ভোট নৌকা মার্কায়। এসব কেন্দ্রে ধানের শীষ কিংবা অন্য প্রার্থী কোনো ভোটই পাননি! বিশ্বে কোথায়ও এত ভোট পড়ার নজির নেই। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের এত ভোট পড়ার তথ্য থাকলেও ভোট দিতে পারেননি এমন অভিযোগ করেছে বেশির ভাগ ভোটারেরা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি ৫০টি আসন পর্যবেক্ষণ করে ৪৭টিতে বুথ দখল করে জাল ভোট, এমনকি ভোটের আগে ব্যালটে সিল মারার মতো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। মূলত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসনের লোকেরাই নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখে। পরের দিন ১০ শতাংশ লোকও ভোট দিতে পারেনি। অনেকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট পেপার না থাকায় ভোট না দিয়েই ফিরে গেছে।

 

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে ঘোষিত ফল বাতিল ও অবিলম্বে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সে নির্বাচনে ভোট কারচুপির বিষয়টি আগে থেকেই ছিলো সুপরিকল্পিত। ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে ভোটের আগের রাতে। এ নির্বাচনে জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ নির্বাচনে ভীতি ছাড়া কিছু ছিলো না। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আমাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে, নজিরবিহীন একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে, ত্রাস-ভীত সৃষ্টি করে, এই নির্বাচনটি করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, এই নির্বাচন যেটা নজিরবিহীন সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং ভোট ডাকাতি বলা যেতে পারে, এই ভোট ডাকাতির ফলে আমরা এই নির্বাচনের ফলাফলকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মনে করি, এই কলঙ্কজনক নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় অনুষ্ঠিত করতে হবে এবং এটা অনতিবিলম্বে করতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com