লিবিয়ায় নির্বাচনে গাদ্দাফিপুত্রকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন
লিবিয়ার সাবেক একনায়ক মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
বুধবার এক বিবৃতিতে সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
গাদ্দাফিসহ মোট ২৫ প্রার্থীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
অযোগ্য ঘোষিত প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতার বিষয়ে আদালতে আপিল করতে পারবেন। প্রার্থিতার বিষয়ে তাদের আবেদনের শুনানির পর আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
এর আগে গত ৮ নভেম্বর লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা নিবন্ধন শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৯৮ প্রার্থী নিবন্ধন করেছে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
ত্রিপোলির সামরিক কৌসুলির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডের জেরে গাদ্দাফিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার জন্য আবেদন করেন তিনি।
২০১১ সালে মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সমকালীন লিবিয়ার জনগণের ওপর যুদ্ধাপরাধের কারণে সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফিকে ওই মামলায় তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো।
জিনতান শহরে গাদ্দাফিবিরোধী সাবেক যোদ্ধাদের আশ্রয়ে থাকা সাইফ এক ভিডিও বার্তায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগকে অস্বীকার করেন।
অযোগ্য ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলী জাইদান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নুরি আবু সাহমাইনও রয়েছেন।
তবে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজ নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারের প্রার্থিতা এখনো বহাল রয়েছে। ২০১৯-২০ সালে তার রাজধানী ত্রিপোলিসহ পশ্চিমাঞ্চলে দখল অভিযানের সময় হাফতারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করা হয়। একইসাথে হাফতারের যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে অভিযোগ করছেন অনেক লিবীয় নাগরিক।
তবে হাফতার তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগকে অস্বীকার করেন। একইসাথে তিনি বলেন, তার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগটি সত্য নয়।
জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় ২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ চার দশক দেশটি শাসন করা একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। গাদ্দাফি সামরিক পন্থায় বিক্ষোভকারীদের দমন করতে চাইলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের হাতে গাদ্দাফি নিহত হলেও দেশটিতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ থেকে নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে দেশটি ত্রিপোলিকেন্দ্রীক পশ্চিম ও তবরুককেন্দ্রীক পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
গত বছরের অক্টোবরে জাতিসঙ্ঘ উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করে এবং দেশটির সংকট সমাধানে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা করে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ সংলাপের পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিবাদমান পক্ষগুলো দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সম্মত হয়। বিবাদমান পক্ষগুলো অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি দেশটির সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ ইউনুস মানফি এবং প্রধানমন্ত্রী পদে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিনিধি আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকে নির্বাচিত করে।
পরে লিবিয়ার পার্লামেন্টে আলোচনার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার ২৪ ডিসেম্বরের নির্বাচন পরিচালনা করবে।
সূত্র : আলজাজিরা