আমরণ অনশন: চতুর্থ দিনে অসুস্থ আরও ১৫ পাটকল শ্রমিক
বকেয়া মজুরিসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে খুলনা, যশোর ও রাজশাহীর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা।
সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে দ্বিতীয় পর্যায়ে অনশন বুধবার ৪র্থ দিনের মতো অব্যাহত ছিল। খুলনার খালিশপুর, আটরা ও যশোরের নওয়াপাড়া শিল্প এলাকা এবং রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালীতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শ্রমিকদের ১৫ জন মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৪ দিনের এ অনশন কর্মসূচিতে মোট অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনশনস্থলে শতাধিক শ্রমিককে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অনশনে যোগ দিয়েছেন পাটকল শ্রমিক লীগের নেতারা। এদিকে পাটকল শ্রমিকদের দাবি দ্রুত মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। ব্যুরোর পাঠানো খবর-
খুলনা : পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরি পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ-২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহালসহ ১১ দফা দাবিতে বুধবারও শ্রমিকরা আমরণ অনশন করে।
খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর ও স্টার মিলের শ্রমিকরা বিআইডিসি রোডে, আলীম ও ইস্টার্ন মিলের শ্রমিকরা আলীম মিল এবং যশোরের নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্পেটিং ও জেজেআই মিলের শ্রমিকরা স্ব স্ব মিল গেটের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে।
দেখা গেছে, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কনকনে শীতে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন শ্রমিকরা। প্রতিদিনই অনাহারী শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনশন কর্মসূচিতে খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার পৃথক পৃথক সমাবেশে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল হামিদ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেনসহ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ, পাটকল শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।
বুধবার সকাল থেকেই অনশনে যোগ দেন শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও। শ্রমিক নুর ইসলামের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে ইসমাইল হোসেন জানায়, আজ তার স্কুলে নতুন বই দিচ্ছে। তবে সে তার আব্বুকে না নিয়ে স্কুলে যাবে না। বাবা অনশন করছে, তাই সে সেখানে এসেছে। সারাদিন সেখানেই থাকবে।
প্লাটিনাম মিলের শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, চার দিন ধরেই উনি (স্বামী) না খেয়ে শীতের মধ্যেই বাইরে রাত যাপন করছে। তাকে বাইরে রেখে আমরা কী করে ঘরে থাকি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
রাজশাহী : শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে রাজশাহীতে পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে। বুধবার টানা চতুর্থ দিনের মতো তারা কর্মসূচি পালন করে। এর আগে রোববার দুপুর থেকে রাজশাহীর কাটাখালীর পাটকলের প্রধান ফটকের সামনে তারা কর্মসূচি শুরু করেন।
১১ দফা দাবি আদায়ে শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করছেন। রাতেও তারা থাকছেন পাটকলের সামনে। তীব্র শীতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। তারপরেও শ্রমিকদের দাবি পূরণের কোনো লক্ষণ নেই।
দাবি আদায়ে ১০ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। পরে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এরপর ১৪ ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন না করায় শ্রমিকরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।
রাজশাহী পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না।
পাটকল শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে শ্রমিক ফ্রন্টের মানববন্ধন ও সমাবেশ : পাটকল শ্রমিকদের দাবি দ্রুত মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। শ্রমিকদের দাবি হচ্ছে বকেয়া মজুরি পরিশোধ, ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন ও পাটকল আধুনিকায়ন করে পাটশিল্প রক্ষা। এসব দাবি মেনে নিতে বুধবার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে সংগঠনটি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন। বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, কোষাধ্যক্ষ জুলফিকার আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু নাইম খান বিপ্লব, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।