৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির কবল থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে: তারেক রহমান

0

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কথিত জজ মিয়াকে ব্যবহার করে বিএনপি নয় আওয়ামী এবং তাদের বশংবদ মিডিয়া নাটক তৈরী করেছে। বিএনপি সরকারের মেয়াদকালীন সময়ে ২১ আগস্ট হামলা মামলার চার্জশিটই তো দাখিল করা হয়নি। তাহলে কে অভিযুক্ত কিংবা কে অভিযুক্ত নয় এসব নিয়ে প্রশ্ন অবান্তর। জজ মিয়া’কে ইস্যু বানিয়ে আওয়ামী লীগ ২১ আগস্টের সমাবেশকে ঘিরে জনমনে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়।

(২৬ আগস্ট ২০২১) বিএনপির উদ্যোগে ‘২১ আগস্টের চক্রান্তমূলক গ্রেনেড হামলা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, রাজধানীতে দলীয় সমাবেশ করার জন্য, ভেন্যু হিসেবে ‘মুক্তাঙ্গন’ চেয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে আবেদন করেছিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিলন। ডিসিসি কতৃপক্ষ লিখিতভাবে অনুমতি দিয়ে দেয়। ‘মুক্তাঙ্গন’ বরাদ্দ পেয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিলন’মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে’ মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ১৭ আগস্ট নিয়মানুযায়ী ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। ঢাকা মহানগর পুলিশ পরদিনই যথারীতি ‘মুক্তাঙ্গনে’র সমাবেশে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দৈনিক ইত্তেফাকসহ ২১ আগষ্টের সকল জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম ছিল, ‘আজ ‘মুক্তাঙ্গনে’ আওয়ামী লীগের সমাবেশ।

তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, সঙ্গতকারণে ২১ আগস্ট ‘মুক্তাঙ্গন’কে ঘিরেই ছিল পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু সমাবেশের দিন হঠাৎ করেই সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে মুক্তাঙ্গনের সমাবেশটি আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসের সামনে সামনে সরিয়ে নেয়া হলো কেন?এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা কেমন করে জানলো, আওয়ামী লীগের ২১ আগস্টের সমাবেশটি ‘মুক্তাঙ্গনে’ নয় আওয়ামী লীগ দলীয় অফিসের সামনেই হবে?

২০১৮ সালের ২১ আগস্ট, দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলাকারী কয়েকজনের জবানবন্দির আলোকে ‘যারা যেভাবে পরিকল্পনা ও হামলা করেছিল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ‘হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট কাজল ও আবু জান্দাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে আসেন’। তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা কেমন করে জানলো, আওয়ামী লীগের ২১ আগস্টের সমাবেশটি ‘মুক্তাঙ্গনে’ নয় আওয়ামী লীগ দলীয় অফিসের সামনেই হবে?

তিনি বলেন, ২১ আগস্টের মতো এতো বড় একটি সন্ত্রাসী ঘটনা পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া বাস্তবায়ন অসম্ভব। সুতরাং হামলাকারীরা ‘প্লেস অফ অকারেন্স’ আগেভাগেই ‘রেকি’ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ প্রশাসনের কাছে সমাবেশের অনুমতি নিলো মুক্তাঙ্গনে। অথচ জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা তাদের পরিকল্পনা সাজালো আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসকে ঘিরে। রহস্যটি এখানেই, সমাবেশটি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই হবে, সন্ত্রাসীদেরকে এ তথ্য এতো আগেভাগে কে নিশ্চিত করলো?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই নিহিত দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ২১ আগস্টের ষড়যন্ত্রমূলক হামলার রহস্য। এই ষড়যন্ত্র থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা কথিত ‘জজ মিয়া’ কাহিনীকে ফলাও করে প্রচার করছে।

তারেক রহমান বলেন, ‘জজ মিয়া’ গ্রেফতার হয়েছিল ২০০৫ সালের ৯ জুন। গ্রেফতারের সপ্তাহ দুয়েক পর ২৫ জুন, জজ মিয়া একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ‘জজ মিয়া’র জবানবন্দির পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা চাঞ্চল্যকর মামলা তদারকির জন্য গঠিত ‘মনিটরিং সেল’ সিআইডিকে সংশ্লিষ্ট এই মামলার আরো সঠিক এবং অধিকতর তদন্তের নির্দেশনা দেয়। শুধুমাত্র জজ মিয়ার জবানবন্দীর উপর ভিত্তি করে মনিটরিং সেল কিংবা সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং, দেখা যায়, ২১ আগস্ট মামলার তদন্ত চলাকালেই ২০০৫ সালের পহেলা অক্টোবর গ্রেফতার হয় মুফতি হান্নান।

তিনি আরো বলেন, জুন মাসে ‘জজ মিয়া’র দেয়া জবানবন্দী যদি সরকারের কাছে বিশ্বাসযোগ্যই মনে হতো, তাহলে ‘জজ মিয়ার জবানবন্দি’ র
মাস তিনেক পর তৎকালীন বিএনপি সরকার মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করতোনা। জজ মিয়া’র জবানবন্দির কোথাও মুফতি হান্নানের কথা উল্লেখ ছিলোনা। তারপরও মুফতি হান্নানকে এরেস্ট করায় এটি প্রমাণিত বিএনপি সরকার জজ মিয়ার জবানবন্দি পেয়ে তদন্ত বন্ধ করেনি। বরং ২১ আগস্টের গ্রানাডা হামলা মামলার তদন্ত অব্যাহত রেখেছিলো।

তারেক রহমান বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়ায় তৎকালীন বিএনপি সরকারের মেয়াদকালে ২১ আগস্ট মামলার চার্জশীট চূড়ান্ত করা যায়নি। ২১ আগস্ট মামলার প্রথম চার্জশিট দাখিল করা হয়, বিএনপি পরবর্তী সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৯ জুন। সুতরাং, বিএনপি সরকারের মেয়াদকালে যেখানে তদন্ত শেষ করার সময় পাওয়া যায়নি, চার্জশিট চূড়ান্ত করা যায়নি, সেখানে তদন্তের মাঝপথের একটি বিষয়কে ইস্যু করে অপপ্রচারের উদ্দেশ্য হচ্ছে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্থাপিত প্রশ্নগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি চিহ্ন দিকে নেয়া।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নামক দলটি সরকার বা বিরোধী দল যে অবস্থানেই থাকুক, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের একমাত্র পুঁজি গুম-খুন-অপহরণ মিথ্যাচার আর অপপ্রচার। ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেরজের ছিল ১৫ আগস্ট। অথচ নিজেদের সেই ব্যর্থতা ঢাকতে আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত স্বাধীনতার ঘোষকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। ঠিক একইভাবে ২১ আগস্ট নিয়েও বিএনপির বিরুদ্ধে চলছে অপপ্রচার।

তারেক রহমান বলেন, ২১ আগস্ট সম্পর্কে এ ধরণের অনেক প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট করা ছাড়াই, আদালতের মাধ্যমে ২১ আগস্ট হামলা মামলার ফরমায়েশি রায় বের করে নিয়েছে নিশিরাতের সরকার। ২১ আগস্ট হামলা মামলার ‘ডসিয়র’ কিংবা ফরমায়েশি রায়ের ‘পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি’ পড়লে একজন সাধারণ সচেতন নাগরিকের পক্ষেও এই ফরমায়েশি রায়ের ভেতর অসংখ্য অসঙ্গতি খুঁজে বের করা সম্ভব।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২১ আগস্ট মামলায় বিচারের নামে অবিচার হয়েছে। দেশে আবারো কখনো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে খোদ এই মামলার বিচারকদেরকেও হয়তো আদালতের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, একটি দেশ উল্টো পথে হাঁটলে, জনগণের শেষ ভরসার জায়গা বিচার বিভাগ। আর বাংলাদেশে এখন খোদ বিচার বিভাগ-ই চলছে উল্টো পথে। ক্ষমতাসীনদের ফরমায়েশ শোনাই যেন এখন তাদের প্রধান দায়িত্ব।

তিনি বলেন, শুধু বিচার বিভাগই নয়, দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক কিংবা বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানই এখন নষ্ট ভ্রষ্টদের খপ্পরে। যারা বাংলাদেশটাকে একটি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলো. ২১ আগস্টের হামলার মধ্য দিয়ে তারা সাময়িকভাবে সফল হয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ‘২১ আগস্ট ‘ এবং কথিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘২১ আগস্ট’ এবং কথিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা। একটি ‘ওয়ান-ইলেভেন’ এর নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যই পরিকল্পতিভাবে ঘটানো হয়েছিলো ‘২১ আগষ্টের ঘটনা’।

তিনি বলেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর যারা দেশকে উল্টো পথে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল ২০০৭ সালের কথিত ‘ওয়ান-ইলেভেনে’র মাধ্যমে তারা সফল হয়। মহাজোটের নামে একজোট হওয়া ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই পরাজিত এই অপশক্তির মূল এজেন্ডা দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করা। এরই অংশ হিসেবে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বিডিআর পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যাযজ্ঞ ছিল অপশক্তির সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের-ই অংশ। সেনা কর্ম কর্তা হত্যা ২০০৯ সালেই প্রথম নয়। ৭৫ সালের এর ৬ নভেম্বর দিনে-রাতেও বর্তমান ক্ষমতা দখলকারী অপশক্তির পূর্বসূরিরা খোদ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর এক ডজনের বেশি সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল।

তারেক রহমান বলেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির প্রতিহিংসার শিকার ‘মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি বেগম খালেদা জিয়া। এই অপশক্তি স্বাধীনতার ঘোষকের বিরুদ্ধেও ইতিহাস বিকৃতি, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে লিপ্ত।

তিনি বলেন, ২১ আগস্ট আর তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের পথ ধরে যে অপশক্তি বর্তমানে ক্ষমতা জবর দখল করার পর থেকেই পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। জনগণ হারিয়েছে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা। গৌরব ও মর্যাদা হারাচ্ছে সেনাবাহিনী।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কবল থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে হবে। এ লক্ষ্যে শ্লোগান হোক ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com