১১ই ডিসেম্বর ১৯৭১সালে মুন্সিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়েছিল

0

ডিএল ডিস্ক: ১১ই ডিসেম্বর ১৯৭১সালে মুন্সিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়েছিল। তাই এই দিনটিকে মুন্সিগঞ্জে হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। 

মুন্সিগঞ্জের যেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে মুন্সিগঞ্জকে হানাদার মুক্ত করেছেন, দেশের  স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছেন সেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই লাখো সালাম,বীর শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

সত্যিকার অর্থে মুন্সিগঞ্জের মাটি থেকে স্বাধীনতার সংগ্রামে যারা প্রকৃতভাবেই বীরত্বের সাথে অবদান রেখেছিলেন তাদের সম্পর্কে খুব একটা জানা হয়না, বা তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে জানতে গেলেও বিস্তারিত ততটা জানা যায় না। যতটা জানা যায় তা সংক্ষিপ্ত কিছু বর্ননা মাত্র। অথচ আমাদের জানা উচিত এই মাটি থেকে জন্ম নেয়া বীরদের গল্প। আমি যতটা তথ্য জেনেছি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বা গুগুলের সাহায্যে ততটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম –

.২৭ মার্চ,১৯৭১-

মুন্সীগঞ্জ ট্রেজারির চারটি তালা ভেঙে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ৩০০টি অস্ত্র লুট করেন। 

.২৯ মার্চ-

 মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজের শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করা হয়। 

.৩১ মার্চ-

পাকবাহিনী নারায়ণগঞ্জ আক্রমন করলে মুন্সিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা নারায়ণগঞ্জের মানুষের সঙ্গে একত্রিত হয়ে চার ঘণ্টা যুদ্ধ করে।

.২০ এপ্রিল-

পুনরায় নারায়নগঞ্জে যুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সাথে।

.৯ মে-

পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রথমবারের মতো  মুন্সিগঞ্জে প্রবেশ করে। তারা গজারিয়ায় ফুলদী নদীর তীরে ৩৬০ জেলে ও কৃষককে হত্যা করে।

.১৪ই মে-

কেওয়ার চৌধুরী বাড়ীতে আশ্রিত অনিল মুখার্জী, বাদল ভট্টাচার্য, অধ্যাপক সুরেশ, ডাঃ সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহা, সুনীল চন্দ্র সাহা, দ্বিজেন্দ্র সাহা, শচীন্দ্র মুখার্জী, হরনাথ চক্রবর্তী ও বাড়ীর মালিক আইনজীবী কেদার চৌধুরীসহ ১৭ জনকে ধরে এনে সিকদার বাড়ীর খালের পাড়ে সারিবন্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে পাক বাহিনীরা হত্যা করে। আইনজীবী মন্থুর মুখার্জিকে কয়েকদিন আটক রেখে লঞ্চ ঘাটে নৃশংসভাবে হত্যা করে ধলেশ্বরী নদীতে ফেলে দেয়। 

.১০ই আগষ্ট-

সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটায় আব্দুল্লাহপুরে জনসভায় ভাষণরত অবস্থায় পাকিস্তান নেজামে ইসলামের নেতা মাদানীসহ ছয় জনকে  স্টেনগ্যানের ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। 

.৪ঠা সেপ্টেম্বর-

কটালপুরের ব্রীজ ভাঙতে গিয়ে কমান্ডার খাঁজা নিজামউদ্দিন ভূইয়া বীর উত্তম শহীদ হন। 

.২২শে সেপ্টেম্বর-

পাক সেনার আক্রমনে আহাম্মদ উল্লাহ, শরীফ ও বেলুচী শহীদ হন।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকায় অনেকগুলি যুদ্ধ হয় তার মধ্যে উল্ল্যেখ করার মত-

.গালিমপুরের,

.কমরগঞ্জের,

.কামারখোলার,

.গোয়ালীমান্দ্রার,

.দক্ষিণ পাইকসার,

.সৈয়দপুরের, 

.টঙ্গিবাড়ী দখলের যুদ্ধ। 

.মুক্তিযোদ্ধারা গোয়ালী মান্দ্রা, .বাড়ৈখালী, 

.শেখরনগর,

.শিবরামপুর ও পঞ্চসারে পাক বাহিনীকে পদর্যুদস্ত করে।

.১৩ই নভেম্বর-

 মুক্তিযোদ্ধারা তালতলার পাক সেনা ক্যাম্প আক্রমণ করে ই,পি.আর, রাজাকাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।

.১৪ই নভেম্বর-

দিবাগত রাত্রে  টঙ্গিবাড়ী থানা দখল করে নেয় মুক্তিযোদ্ধা

.১৯শে-

নভেম্বর সিরাজদিখানের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজদিখান থানা আক্রমন করে দখল করে নেয়।

.২০/২৫ নভেম্বর-

মুন্সিরহাটে পাকসেনাদের সঙ্গে একটি যুদ্ধ হয় ঐ যুদ্ধে পাক সেনাদের উপর প্রচন্ড আক্রমণ চালালে পাক সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

.৪ ডিসেম্বর-

সদর উপজেলার পঞ্চসারে বর্তমানে আনসার ক্যাম্পের কাছে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে  চারজন পাকিস্তানি সেনা ও তিনজন রাজাকার নিহত হয়। 

.৯ই ডিসেম্বর-

গজারিয়ার বাউশিয়া ঘাটে মুক্তি বাহিনী ও পাক সেনাদের গোলাগুলিতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নজরুল শহীদ হন। 

.১০ই ডিসেম্বর-

পাকবাহিনী দিবা গত রাত্রে মুন্সিগঞ্জ শহর থেকে ঢাকায় পালায়ন করে। 

..১১ই ডিসেম্বর-

 মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেলের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে  মুন্সিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। হানাদার মুক্ত হয় মুন্সিগঞ্জ। 

.১৯৭১ গ্রন্থে মুন্সীগঞ্জ জেলায় ১৩টি যুদ্ধক্ষেত্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই যুদ্ধক্ষেত্রগুলো হলো- 

১. মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা, 

২. মুক্তারপুর,

৩. মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাট, 

৪. পুরান বাউসিয়া, 

৫. চর বাউসিয়া, 

৬. নয়া নগর, 

৭. নয়া নগর (দ্বিতীয় দফা), 

৮. গোসাইর চর, 

৯. ভাটের চর, 

১০. মুন্সীগঞ্জ থানা, 

১১. লৌহজং, 

১২. সিরাজদিখানের সৈয়দপুর এবং 

১৩. সিরাজদিখান থানা। 

এছাড়াও মুন্সীগঞ্জ সদরে আরো দুটি যুদ্ধক্ষেত্র ছিল। যুদ্ধক্ষেত্র দুটো হলো- রতনপুর যুদ্ধক্ষেত্র ও মুন্সীরহাট যুদ্ধক্ষেত্র। 

.বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেটাসোর্স অনুযায়ী জেলায় ছয়টি বদ্ধভূমি বা সমাধী ভূমি রয়েছে। 

বদ্ধভূমিগুলো হলো 

১. কেওয়ার সাতানিখিল,

২. হরগঙ্গা কলেজ হোস্টেল, 

৩. হরগঙ্গা কলেজসংলগ্ন পাঁচঘড়িয়াকান্দি, 

৪. চর বাউসিয়া, 

৫. নয়া নগর এবং 

৬. সৈয়দপুর। 

এছাড়াও আব্দুল্লাপুরের পালবাড়িতে একটি বদ্ধভূমি রয়েছে। 

.মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৬৭টি শহীদ পরিবার রয়েছে

.২৪৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধা নয় মাস যুদ্ধ করে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সনে মুন্সিগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করে। 

.২০০৭ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের মহামন্য রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সংম্বলিত স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। 

মুন্সিগঞ্জের যেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে মুন্সিগঞ্জকে হানাদার মুক্ত করেছেন, দেশের  স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছেন সেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই লাখো সালাম,বীর শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com