এবার বৃটিশ মোবাইল নম্বরে পেগাসাসের উপস্থিতি শনাক্ত
বিশিষ্ট বৃটিশ মানবাধিকার আইনজীবী ও দুবাইয়ের রাজকুমারী লতিফার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডেভিড হ্যাই’র ফোনে ইসরাইলি স্পাইওয়্যার (গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর সফটওয়্যার) দিয়ে সাইবার হামলা চালানো হয়েছে।
সম্প্রতি মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টির এক ফরেনসিক বিশ্লেষণে এ তথ্য বের হয়ে আসে। এই প্রথম বৃটিশ কোনো নাগরিকের ফোনে ইসরাইলে তৈরি স্পাইওয়্যারটি দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ খবর দিয়েছে ইসরাইলি পত্রিকা দ্য হারেৎস।
দুই সপ্তাহ আগেই ইসরাইলের সাইবার-গুপ্তচরবৃত্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এনএসও’র তৈরি স্পাইওইয়্যার দিয়ে বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং আরো অনেকের ওপর গোপন নজরদারি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের ১৭টি প্রথম সারির গণমাধ্যম, সাংবাদিকতা বিষয়ক প্যারিস-ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ফরবিডেন স্টোরিজ‘ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে মিলে এ অনুসন্ধানে কাজ করছে অ্যামনেস্টি। ইসরাইলি স্পাইওয়্যারের সম্ভাব্য আক্রমণের শিকার হওয়া ফোনগুলো পরীক্ষা করে দেখছে তারা। এ প্রকল্পটি প্রজেক্ট পেগাসাস নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক এই অনুসন্ধান শুরু হয় এনএসও’র স্পাইওয়্যারের গ্রাহকদের নির্বাচিত সম্ভাব্য ৫০ হাজার টার্গেটের ফোন নম্বরসহ এক ফাঁস হওয়া তালিকা ঘিরে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২১টি দেশে অন্তত ১৮০ জন সাংবাদিককে টার্গেট হিসেবে ঠিক করেছিল অন্তত এনএসও’র ১২ জন ক্রেতা।
এনএসও’র ক্রেতারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। হাঙ্গেরি, আজারবাইজান থেকে শুরু করে আফ্রিকার টোগো ও রোয়ান্ডার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি থেকে স্পাইওয়্যার কিনেছে।
ফাঁস হওয়া তালিকাটি প্রথমে এনএসও গ্রাহকদের ‘সম্ভাব্য টার্গেট’ কারা কারা হতে পারে তার একটি তালিকা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এনএসও দাবি করে, ওই তালিকার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে এখন অবধি তালিকায় থাকা ফোন নম্বরগুলোর সঙ্গে যুক্ত অন্তত ৪৫টি ফোনে পেগাসাসের হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট অনুসারে, ডেভিড হ্যাই একজন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী, সমকামী অধিকারকর্মী এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। ফাঁস হওয়া তালিকায় তার ফোন নম্বর ছিল না। তা সত্ত্বেও তার ফোন স্পাইওয়্যারের আক্রমণের শিকার হয়েছে বলে সন্দেহ করার পর, নিজ থেকেই ফোনটির ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য অ্যামনেস্টিকে দিয়েছিলেন। আর ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে, আদতেই ফোনটিতে পেগাসাস দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো হয়েছে।
দুবাইয়ের রাজকুমারী লতিফার হয়ে আদালতে লড়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পান হ্যাই। প্রজেক্ট পেগাসাস ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট গত সপ্তাহে জানায়, দুবাই থেকে পালানোর পর লতিফাকে পুনরায় আটক করতে এনএসও’র প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে কর্তৃপক্ষ।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এই প্রথম বৃটিশ কোনো ফোন নম্বরে পেগাসাসের সফল হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, বৃটিশ ফোন নম্বরগুলো যাতে পেগাসাস দিয়ে হামলা চালানো না যায়, সেজন্য ছয় মাস আগে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এনএসও।
এনএসও বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, কিছু নির্দিষ্ট জিওকোড বা কান্ট্রি কোড দিয়ে নিবন্ধিত ফোন নম্বরে পেগাসাস দিয়ে হামলা চালানো যায় না। এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন। এছাড়া, রাশিয়া ও চীনের ফোন নম্বরগুলোর ক্ষেত্রেও এমন সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। এই তালিকায় ফ্রান্সের নম্বরগুলো যোগ করতে এনএসও’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফরাসি সরকার।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, আরো চারটি ফোনে পেগাসাস দিয়ে হামলা চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আরো একটি বৃটিশ ফোন নম্বর রয়েছে। পোস্ট অনুসারে, ওই ফোন নম্বরটি একজন মুসলিম অধিকারকর্মীর। এছাড়া একজন ভারতীয় আইন কর্মকর্তা, একজন তুর্কি সাংবাদিক, একজন হাঙ্গেরিয়ান সাংবাদিকের ফোনে পেগাসাসের উপস্থিতির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেয়নি এনএসও।