মমতার নজর দিল্লি দখলে, দ্বন্দ্ব এখন বিজেপির অন্দরে
পশ্চিমবঙ্গে একক ভাবে বিরাট ব্যবধানে জয়ের পর ২০২৪ সালে হতে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে এগোচ্ছে তৃণমূলকংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা।
সেই লক্ষ্যের ঢাকে কাঠি পড়তে চলেছে আগামী ২১ জুলাই, শহীদ দিবসে।
ওইদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শোনানোর উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
তাতে রয়েছে মোদী–শাহ‘র রাজ্য গুজরাটও। সে রাজ্যের ৩২টি জেলায় একুশে জুলাই পালনের পরিকল্পনা করেছে মমতার দল।
এছাড়া একুশে জুলাই নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক কনস্টিটিউশন হলে জায়ান্ট স্ক্রিনে মমতার ভাষণ শোনানোর ব্যবস্থা করেছেতৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে থাকতে পারেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাশাপাশি সেখানে থাকবেন তৃণমূল সাংসদরা। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মোদী বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা–নেত্রীদেরও।যদিও মমতা ভার্চুয়ালি ভাষণ দেবেন কলকাতা থেকেই। কারণ তৃণমূল দলনেত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, করোনা কারণে এবছরও জনসমাবেশ হবে না।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে একুশে জুলাইয়ের কর্মসূচি নিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪সালকে পাখির চোখ করে ভিনরাজ্যে একটা বা দুটো আসন জিততে নয়, বরং প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার দখলই মমতার মূল লক্ষ্য। সেকারণে শহীদ দিবসের মধ্য দিয়ে লোকসভা ভোটের সূচনা করতে চান মমতা বন্দোপাধ্যায়।
অপরদিকে, রাজ্যে রাজ্যে দলের অন্দরে অশান্তি ও মতবিরোধে নাজেহাল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে উত্তরাখণ্ড রাজ্যে। চার মাসের মধ্যে ওই রাজ্যে তিনজন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদলেছে। আর সেই অস্বস্তির রেশ কাটার আগেইএবার নতুন করে সমস্যা শুরু হয়েছে কর্ণাটক ও ত্রিপুরা নিয়েও।
বর্তমানে এই দুই রাজ্যেই বিজেপি ক্ষমতায়। কিন্তু, দুই রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলেরই একাংশে প্রায় বিদ্রোহ শুরুকরেছে। আর তা সামলাতে সম্প্রতি আসরে নেমেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। কিন্তু, তাতেওসমাধান সূত্র না মেলায় হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা এখন দিল্লিতে রয়েছেন। তার এই দিল্লি সফর নিয়ে কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রী বদলের জল্পনাতুঙ্গে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, মোদির সঙ্গে বৈঠকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ইয়েদুরাপ্পা। অব্যাহতি চেয়েছেন অসুস্থতারকারণ দেখিয়ে। সম্প্রতি মোদির মন্ত্রীসভার রদবদলে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত কর্ণাটকের এমপি শোভাকারান্দলাজেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, এরকমটা করার কারণইয়েদুরাপ্পাকে কার্যত সরে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। নতুন কোনো মুখকে সামনে রেখে আগামী দিনে কর্ণাটকে ভোটের লড়াইহবে।
ঠিক একই জল্পনা শুরু হয়েছে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরেও। গত শুক্রবার(১৬ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করেছেনমুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। তিনি অবশ্য বলছেন, ত্রিপুরার উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েই আলোচনা করতে তার এই দিল্লি সফর। বিশেষ করে আগর গাছ এবং আগর কাঠ সংক্রান্ত বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাতে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত এই গাছ ও কাঠের সঠিকব্যবহার ও সৃজনের ব্যবস্থা হয়, তাই নিয়ে সামগ্রিক প্রকল্প তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আদতে বিপ্লবকুমার দেবকে ডেকে পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবদেবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ত্রিপুরা বিজেপির অভিযোগ, বিপ্লবের কারণে রাজ্যটিতে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেদল। সুতরাং বিপ্লব কুমার দেবকেও সরিয়ে দেওয়া হবে, এই গুঞ্জনও এখন শুরু হয়েছে।