জমিয়তের ২০ দলীয় জোট ছাড়া নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল
গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ)। এর প্রতিক্রিয়ায় ওই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলামখান বলেছিলেন, জমিয়তের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে জোট ছেড়েছেন।
চারদিন পর রোববার (১৮ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনেসাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জমিয়তের জোট ছাড়ার বিষয়টি ব্যাথ্যা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, রাজনীতি হলো ভাঙাগড়ার খেলা।
ওনারা রাজনৈতিক চাপে, মামলা মোকদ্দমার প্রচণ্ড রকমের চাপ। চাকরি চলে যাবে, বেশির ভাগ মাদ্রাসায় চাকরি করেন।
তারা টিকে থাকতে পারছেন না, যেতেই পারেন। রাজনীতিতে টিকতে পারছেন না।
যাওয়ার সময় সত্য কথাগুলো বলে যাওয়াই ভালো। অযথা অন্যকে দোষারোপ করে একটা নজির সৃষ্টি করতে চান, এটা ঠিক না।আমাদের সঙ্গে তাদের কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জোট গঠনের সময় ২০ দলীয় জোটের যে ঘোষণাপত্র ছিল, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য একটা জোট। সেভাবে আন্দোলন করেই নির্বাচনে যাওয়ার একটা ব্যাপারছিল। সেখানে শরিক যেকোনো দল তার নিজস্ব রাজনীতি করবে, নিজস্ব কথা বলবে। এখানে একটা দলের রাজনীতি আর একটা দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। প্রশ্নই উঠতে পারে না। সেখানে তারা (জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক) যেকথা গুলো বলেছেন, এ কথাগুলো একেবারেই সত্য নয়।
তিনি বলেন, জমিয়তের যে আমির ছিলেন নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব, অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ। ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। একজন সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক মানুষ বলতে যা বোঝায় তিনি সেরকমই ছিলেন। তিনি বড় আলেম ও ইসলামিচিন্তাবিদও ছিলেন। তিনি মারা যাওয়াতেই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি যখন মারা যান আমি তখনঅসুস্থ ছিলাম। তার পরপরই আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলাম। তার মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি শোকবাণী দিয়েছি। পরবর্তীকালে ২৬ মার্চ মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে যতগুলো সমস্যা হয়েছে মামলা–হামলা–আক্রমণ; সব সময় আমি স্টেটমেন্ট দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে তিনি বললেন, আলেম–ওলামাদের গ্রেফতারের বিষয়ে আমরা কিছু বলিনি। আমিই তো সবচেয়ে আগে কথা বলেছি। মানুষ আশা করে যে, আলেম–ওলামারা সত্য কথাবলবেন। কিন্তু এটা ওনারা কীভাবে বললেন? দুর্ভাগ্য জনকভাবে তাদের প্রতি মানুষের সেই আস্থা থাকবে কিনা আমি জানি না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শরিয়া আইনে বিশ্বাস করি না এটাও বলেছেন, আমাদের সংগঠন পড়ে দেখবেন শরিয়া আইনেরবিষয়টা নাই। ওনারা চান ওনারা করুক। শরিয়া আইনের বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার করে বলা আছে, আমরা কখনো শরিয়াবিরোধী কোনো আইন পাস করবো না। আমরা যখন সরকারে ছিলাম সেটা করিনি। কিন্তু একথা বলা যে, আমরা শরিয়া আইনের বিরোধিতা করেছি, ইসলামি মূলবোধে বিশ্বাসী না, এসব কথাবার্তা বলা মানে হলো ব্যক্তিগত আক্রমণ করা। এটা আমি মনে করি ওনারা ভালো কাজ করেননি। এ সমস্ত ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে ওনারা দূরে সরে আসবেন। বিরোধী রাজনীতিতে ওনারা টিকতে পারছেন না, সেই কারণে ওনারা চলে যাচ্ছেন, সেটা বলে দিলেই তো হয় যে, সরকারের প্রচণ্ড চাপে আমরা টিকতে পারছি না। মামলা–মোকদ্দমায় ভীষণ ভাবে ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছি। এটা না বলে কাউকে ব্যক্তিগত দোষারোপ করা সঠিক কাজ নয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওনারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, অনেক দিন ধরে দেন–দরবার করছেন, শেষ পর্যন্ত এটাহয়েছে। যাই হোক এটা আমি বলতে চাই না। আমি বলছি তারা চাপে টিকতে পারছে না, সেজন্য ছেড়ে দিয়েছে।