আওয়ামী সরকার দলীয়দের কাছে দেশ যেন দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্য: বিএনপি
বর্তমান সরকারের আমলে মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে গ্রাম–গঞ্জের ছোট প্রজেক্ট–সব জায়গায় দুর্নীতি আর লুটপাটের মহৌৎসব চলছে, এ যেন লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, ভূমিহীন গরীব মানুষের জন্য নির্মিত ঘর যা ঢাক–ঢোল পিটিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, সেই ঘর নিয়েও যে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয়করণ হয়েছে তা গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতি তা জানতে পেরেছে। সেই ঘরগুলো হস্তান্তরের আগেই বা হস্তান্তরের পর দু’তিন মাস যেতে না যেতেই যেভাবে ধসে পড়তে দেখা গেল তাতেই প্রমানিত হয়–দেশে উন্নয়নের নামে হরিলুট চলছে।
শনিবার (১০ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এসব কথা বলেন।
প্রিন্স বলেন, গরীব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বরাদ্দ, যেমন–কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্প, বিধবা–দুস্থ–বয়স্ক–প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়েও সরকারী দলের লোকেরা লুটপাট ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। যারা গরীব মানুষের হক নিয়েদুর্নীতি করে তাদের দ্বারা আর যাই হোক জনকল্যাণ হতে পারে না। ভূমিহীন গরীব–অসহায় মানুষকে ঘর প্রদান নিয়ে যদি দুর্নীতি, লুটপাটের এই চিত্র হয়, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে কি ধরণের দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে তা সহজেই অনুমেয়। সরকারের আপাদমস্তক এখন দুর্নীতিগ্রস্ত।
“সরকার ঘোষিত ‘মুজিব বর্ষে’ প্রধানমন্ত্রীর উপহার উল্লেখ করে গৃহহীন, ভূমিহীন, গরীব ও অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য যে ঘরনির্মাণ করা হয়েছে, তা শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ ছিল। গরীব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বরাদ্দ তালিকায়নাম ওঠানো হয়েছে। জায়গা–জমি–বাড়ী–ঘরের মালিক এমনকি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নামও অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের তালিকায় তোলা হয়েছে। অনেক গরীব মানুষ মাথা গোজার একটু ঠাঁই পাবার আশায় পালিত গরু–ছাগল, হাঁস–মুরগী, আসবাবপত্রসহ শেষ সম্বল বিক্রি করে সেই অর্থ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে তুলে দেয়ার সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি আওয়ামী সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান–মেম্বার, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের উপজেলা–ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকদের কোটা নির্ধারণ রেখে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারী বরাদ্দের পুরো টাকা কাজে ব্যয় না করে আত্মসাতের মাধ্যমে প্রয়োজন মতো রড, সিমেন্ট না দিয়ে বালি–মাটি এবং পুরনো ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করার ফলে হস্তান্তরের আগেই সেগুলো ধ্বসে পড়ছে।”
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস ফ্যাক্টরীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অর্ধ শতাধিক শ্রমিক–কর্মচারী নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহতের ঘটনায় বিএনপি’র পক্ষ থেকে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রূপগঞ্জে যেন লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরহচ্ছে। অগ্নিকান্ডে অঙ্গার হওয়া নিরীহ শ্রমিকদের এই করুণ পরিণতিতে সমগ্র জাতি হতবাক ও বিমূঢ় হয়ে পড়েছে।
এই অগ্নিকান্ডের পর সেজান জুস ফ্যাক্টরীর মালিক–কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকায় বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফ্যাক্টরীর মালিকমো. আবুল হাসেম আওয়ামী লীগ নেতা বলেই কি প্রশাসন এখন পর্যন্ত মালিক–কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অবহেলা ও উদাসীনতাকে আমলে নিচ্ছে না? কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে না? এই অবহেলা ও উদাসীনতারজন্য দায়ী মালিক–কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার এবং নিহত ও আহতদের পরিবারকে আজীবন আয়েরসমান ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি বলেন প্রিন্স।