আমার জীবনে প্রথম পড়া উপন্যাস হলো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রামের সুমতি। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। এটি উপন্যাস হলেও শিশুতোষ। পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো রাম। সে মাতৃহীন। দাদা–বউদিসহ একান্নবর্তী পরিবার। বউদি মাতৃসম। সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক। হঠাৎ এসে উপস্থিত হলো তৃতীয় পক্ষ, বউদির মা। স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তিসংক্রান্ত স্বার্থচিন্তা ঢুকে গেল। টানাপোড়েন শুরু হলো ঠাকুরপো–বউদির সম্পর্কে। সম্পত্তি ভাগ হলো। একান্নবর্তী ছোট্ট এই পরিবারে দেয়াল উঠল। এভাবেই বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর পুরোনো ছন্দ ফিরে এল। খলনায়কের ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে রাম আবার ফিরে এল বউদির কোলে। মধুরেণ সমাপয়েৎ।
জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক হালচাল দেখে একসময় মনে হলো, রামের সুমতির নতুন মঞ্চায়ন হচ্ছে। শরৎবাবুর গল্পের রসায়নটি চমৎকার। বউদি রামের আসল মায়ের চেয়ে কোনো অংশেই কম নন। অনেক বছর আগে স্পেশালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (এসইউসিআই) প্রধান শিবদাস ঘোষের লেখা শরৎ–সাহিত্যের একটি পর্যালোচনা পড়েছিলাম। সেখানে রামের সঙ্গে বউদির সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেছেন, এটি হলো ‘নৈর্ব্যক্তিক মাতৃত্ব’। জাতীয় পার্টির ভেতরে দেবর–ভাবির ঝগড়ার একপর্যায়ে দেবর জি এম কাদের বলতে ভোলেননি, রওশন এরশাদ তাঁর মায়ের মতো। তাঁদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে দল আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে বলে আশঙ্কা হয়েছিল। যাহোক, পরিবারের ঐক্য ফিরে এসেছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে যাঁরা গণমাধ্যম গরম রেখেছিলেন, তাঁরা আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন