যাদের জন্য ফিতরা দেওয়া আবশ্যক
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের রোজা শেষ হওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতে বলেছেন। কিন্তু এফিতরার প্রকৃত হকদার কারা? এ সম্পর্কে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন?
জাকাতুল ফিতর ওইসব মুমিন মুসলমান রোজাদারের জন্য আবশ্যক; যারা ঈদের রাত ও দিনে একান্ত প্রয়োজনীয় এবং নিজের ওপরিবারের খাবারের অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর ফরজ আদায়ে সবার জন্য এ বিধান সমান–
‘স্বাধীন–ক্রীতদাস, নারী–পুরুষ, ছোট–বড়, ধনী–গরিব, শহরবাসী–মরু বা গ্রামবাসী, রোজাদার–বেরোজাদারের মাঝে কোনো তারতম্য নেই। এ কথায় জাকাতুল ফিতর সবার পক্ষ থেকে আদায় যোগ্য।’
জাকাতুল ফিতর ব্যক্তির ওপর আদায় করা ফরজ মালের ওপর নয়। তাই জাকাতুল ফিতর ফরজ হওয়ার জন্য কারো ও পরজাকাতের নিসাব হওয়া শর্ত নয়। সম্পদের সঙ্গে জাকাতুল ফিতরের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পদ যদি বেশিও হয় তাতে জাকাতুল ফিতরের পরিমান কিন্তু বাড়ে না।
বলা বাহুল্য
জাকাতুল ফিতর হচ্ছে কাফফারার মতো। যা ধনী–গরিব সকলেই আদায় করতে বাধ্য। হাদিসের পরিভাষা হচ্ছে– ‘প্রত্যেক স্বাধীনও ক্রীতদাস বান্দার জন্য।’ (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘(ফিতরার জাকাত ফরজ) প্রত্যেক স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট ওবড়, গরীব ও ধনীর ওপর।’ (মুসনাদে আহমাদ, দারাকুতনি, বায়হাকি)
ফিতরার সাদকাহ আদায় করার জন্য মূল সম্পদ যেমন– জমি–জমা আসবাব–পত্র, নারীদের অলঙ্কারাদি বিক্রয় করা জরুরি নয়।তবে যেসব জিনিস প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং যা বিক্রয় করা সম্ভব; তা বিক্রয় করে ফিতরার সাদকাহ আদায় করা ওয়াজিব।তাই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে বিক্রয় যোগ্য জিনিস থাকলে তা বিক্রি কর হলেও জাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।
দেনাদারের সাদকাতুল ফিতর আদায়
এমন যদি হয় যে, কারো সম্পদ এবং দেনার পরিমাণ সমান তবে তাকেও সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণদাতাযদি দেনা পরিশোধের জন্য তাগাদা দেয় তবে আগে ঋণ পরিশোধ করাই আবশ্যক। সেক্ষেত্রে তার জন্য জাকাতুল ফিতর আবশ্যক নয়।
জাকাতুল ফিতর দেওয়ার আগে যদি দেনা বা ঋণ পরিশোধের সময় চলে আসে তবে ঋণদাতার পক্ষ থেকে তাগাদা না থাকলেও আগে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ইসলামিক স্কলারদের মতে, জাকাতুল ফিতর মাফ হয়ে যাবে।’
ঋণ করে সাদকাতুল ফিতর দেওয়া
যার কাছে বর্তমানে সাদকাতুল ফিতর দেওয়ার মতো অর্থ নেই কিন্তু পরে টাকা হবে। তবে তকে ঋণ করেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। যেমন– চাকরির বেতন, ব্যবসার বকেয়া ইত্যাদি।
যদি ঘরে প্রয়োজনের অতিরিক্তি সম্পদ বা খাবার আড়াই কেজি পরিমাণের চেয়েও কম থাকে, তবে সে তা–ই আদায় করে দেবে।কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন–
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।’ (সুরা : আয়াত ১৬)
আর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে নির্দেশনা হলো– ‘আমি যখন তোমাদের কিছু আদেশ করি; তখন তোমরা তাযথাসাধ্য পালন কর।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
পরিবারের সাদকাতুল ফিতর আদায়
পরিবারের ভরণ–পোষণের দায়িত্ব যার; সাদকাতুল ফিতর আদায় করার দায়িত্বও তার। তাই স্ত্রী, সন্তান–সন্ততি ও অধীনস্থদের সাদকাতুল ফিতর আদায় করবে পরিবারের দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তি। যদি তাদের সবাই নিজ নিজ ফিতরা দিতে সামথ্য না রাখে।তবে নিজেরাই নিজেদের ফিতরা আদায় করা উত্তম।
হাদিসের নির্দেশনা হলো–
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট–বড় এবং স্বাধীন–ক্রীতদাস; যাদের ভরণ–পোষণ তোমাদের করতে হয় তাদের সবার পক্ষ থেকে ফিতরার সাদকাহ আদায় করার আদেশ করেছেন।’ (দারাকুতনি, বায়হাকি)
সুতরাং পরিবারের কর্তাব্যক্তিসহ যাদের কাছে একদিনের খাদ্যের অতিরিক্ত অল্প খাদ্যদ্রব্যও থাকে তাদের জন্য জাকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জাকাতুল ফিতর আদায় করে হাদিসের নির্দেশের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দানকরুন। আমিন।