টাকা বানানোর রোগে আক্রান্ত ক্ষমতাসীনরা: মির্জা ফখরুল
টাকা বানানো একটা রোগ, অসুস্থতা’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীনরাই সেই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। আপনার সোনার ছেলেদের এখন ধরে ধরে আনছেন, তাদের বলার চেষ্টা করছেন- তোমরা এখন ভালো হয়ে যাও। মির্জা ফখরুল বলেন, আজ বলা হচ্ছে, রোল মডেল বাংলাদেশ। কিসের? উন্নয়নের রোল মডেল? না, দেশ এখন সন্ত্রাসের রোল মডেল, নারী-শিশু ধর্ষণের রোল মডেল, দুর্নীতির রোল মডেল।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে রোববার নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিচ্ছে। শেয়ার মার্কেট লুট হয়ে গেছে। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট বেড়ে হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সর্বত্র সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি। এ অবস্থা পরিবর্তনে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এমন একটা পরিবেশে আছি- এটাকে ভেঙে নতুন সমাজ, নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে। আমাদের তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে, যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণদের ওপর দায়িত্ব এসে পড়েছে এই দানব যে আমাদের সব অর্জন তছনছ করে দিচ্ছে, স্বপ্নগুলোকে ভেঙে খানখান করে দিয়েছে, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে ফেলেছে, তাকে সরানোর। একে সরাতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে সব দল-মত নির্বিশেষ রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। এটাই একমাত্র পথ। অনেকে হতাশার কথা বলেন। হতাশা শেষ কথা নয়। মনে রাখতে হবে প্রতি রাতের পরই হবে নতুন সূ?র্যোদয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফজলুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা তাহসিনা রুশদীর লুনা, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ফরিদা ইয়াসমীন, নুরজাহান মাহবুব, আনোয়ার হোসেইন, খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে। বিচার ব্যবস্থাকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে ফেলেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। গণমাধ্যম যেটা গণতন্ত্রের প্রধান বিবেক হিসেবে কাজ করে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। গণমাধ্যমে এখন সেলফ সেন্সরশিপ চলছে। তাহলে মানুষ কোথায় যাবে, কোন দিকে যাবে।
সাগর-রুনী সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রুনী আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয়। রুনী যেদিন নিহত হলেন সেদিন ছুটে গিয়েছিলাম বাসায়। কিছুক্ষণের মধ্যে চারদিক ঘিরে ফেলল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি ঘুরে এসে বললেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকারীকে ধরা হবে। আজ ৮ বছর হয়ে গেছে। এখনও সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের সুরাহা হয়নি। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধ- তারা সমাজকে বিভক্ত করে ফেলেছে, সমাজকে পুরোপুরি দূষিত করে ফেলেছে।
খালেদা জিয়া মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন- মঈন খান : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, সংসদ ও বিচার বিভাগ সরকারের দখলে। তাই ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন হবে কিনা, তা একমাত্র সরকারই জানে। আইনের প্রয়োগে নয়, খালেদা জিয়ার মুক্তি হচ্ছে না রাজনৈতিক কারণে। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলবে। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা শেষে রোববার তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক মামলায় খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ৩০০ সিটের মধ্যে ২৯২ সিট দখল করা যায়। কিন্তু জনগণের ভালোবাসা পাওয়া যায় না।
৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন না হলে বিএনপির কর্মসূচি কী হবে জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, বিএনপির কর্মসূচি স্পষ্ট। বিএনপি গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে ও জনগণের কল্যাণে বিশ্বাসী। আমরা মানুষের কল্যাণে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি করে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশনেত্রীর মুক্তি না হয়। এ সময় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের আহ্বায়ক শামা ওবায়েদ, ওলামা দলের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক ও শাহজাহান মিয়া সম্রাট উপস্থিত ছিলেন।