বাইডেনের জন্য ট্রাম্পের সেই চিঠি রেখে যাওয়া অনিশ্চিত
প্রথা অনুযায়ী, বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওভাল অফিসের ড্রয়ারে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য একটি চিঠি রেখে যান। যেখানে নতুন প্রেসিডেন্টের প্রতি পূর্বসূরি হিসেবে নানা পরামর্শ থাকে। ট্রাম্প নিজে তাঁর উত্তরসূরি জো বাইডেনের জন্য এমন কোনো চিঠি রেখে যাবেন কি না, নিশ্চিত নয়। রেখে গেলেও কী লেখা থাকবে, তা নিয়ে এখনই উৎসাহ বিরাজ করছে নানা মহলে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার রেখে যাওয়া এমন চিঠি ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিথিদের দেখাতেন। যেখানে সাবেক পূর্বসূরি হিসেবে ওবামা দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানের সমুন্নত রাখার চমৎকার সব কথা লিখেছিলেন। সাফল্য কামনা করেছিলেন উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
প্রেসিডেন্ট হিসেবেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি সকালে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করবেন। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগেই তিনি শেষবারের মতো এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে করে চার বছরের আবাসন ত্যাগ করবেন। মার্কিন ঐতিহ্য অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে পুরোনোজনের থাকার রীতি থাকলেও এবার থাকবেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন ২০ জানুয়ারি দুপুরে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাক্সপেটরা গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাকযোগে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম গতকাল এসব কথা জানিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে যাওয়ার আগে ম্যারিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস এন্ড্রুস সামরিক স্থাপনায় থামবেন। সেখানে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাঁকে বিদায়ী অভিবাদন জানানো হবে।জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগপর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট। ফলে তিনি শেষবারের মতো প্রেসিডেন্টের এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানটি ব্যবহার করতে পাবেন ফ্লোরিডা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। অন্যথায় প্রেসিডেন্টের যাতায়াতের নিজস্ব বিমান ব্যবহারের জন্য তাঁকে জো বাইডেনের অনুমতি গ্রহণ করতে হতো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন না। জো বাইডেনও বলেছেন, ট্রাম্পের উপস্থিত না থাকাই ভালো। ট্রাম্পকে জাতির জন্য এক বিব্রতকর মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন জো বাইডেন।
এদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স টেলিফোনে কথা বলেছেন তাঁর উত্তরসূরি কমলা হ্যারিসের সঙ্গে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের কথা বলেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স।
৬ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে তাঁর সমর্থকদের তাণ্ডব আমেরিকার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। ক্যাপিটল হিল দখল করার নামে উন্মত্ত লোকজনের তাণ্ডবে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি লোকজনকে অভিযোগের আওতায় আনা হয়েছে।
সারা দেশে এ নিয়ে ধরপাকড় এখনো চলমান। তদন্তে করে দেখা হচ্ছে সহিংসতার জন্য উসকানি ও মদদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে অপরাধ পরিকল্পনা ছিল না। এসব তদন্ত সামনের দিনগুলোয় ভিন্ন মোড় নিতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, উসকানি বা অপরাধ পরিকল্পনার পেছনে কোনো আইনপ্রণেতা থাকলে তাঁকেও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২১ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড এবং আটটি রাজ্য থেকে চৌকস পুলিশের উপস্থিতিতে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি এক সপ্তাহ আগে থেকেই ভিন্ন রূপ নিয়েছে। পুলিশ আর সেনাসদস্যের টহলে প্রায় জনমানবহীন সড়ক–জনপথ।
প্রতিটি ভবনে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নগরীতে জরুরি অবস্থা কার্যকর রয়েছে। নগরীর প্রবেশপথে নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ নিয়ে কোথাও নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি না রাখার সব ধরনের ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্প সমর্থকেরা অন্যান্য নগরীতে সমাবেশ ও সহিংসতা করতে পারে—এমন সংবাদে সর্বত্র সতর্ক অবস্থা বিরাজ করছে। নগর পুলিশকে সর্বত্র অতিরিক্ত সতর্কতায় গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা পাহারা দিতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা ‘নিউক্লিয়ার ফুটবলের’ হস্তান্তর কীভাবে হবে, এ নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।
নিউক্লিয়ার ফুটবল ৪৫ পাউন্ড ওজনের একটি বিশেষ ব্রিফকেস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেখানে যাতায়াত করেন, সার্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গে থাকতে হয়। পারমাণবিক হামলার যাবতীয় তথ্য থাকে নিউক্লিয়ার ফুটবলে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা সামরিক লোকজন নিউক্লিয়ার ফুটবল বহন করে থাকেন। প্রেসিডেন্টের পকেটে একটি কার্ডে থাকে নিউক্লিয়ার কোড। নিউক্লিয়ার কোডের এ কার্ডকে ‘বিস্কুট’ বলা হয়।
হোয়াইট হাউসের ক্ষমতার পালাবদলে এবারে ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’ ও ‘বিস্কুট’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০ জানুয়ারি সকালে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লোরিডা চলে যান, তাহলে নিউক্লিয়ার ফুটবল ও বিস্কুট হস্তান্তর করা হবে কীভাবে? পারমাণবিক উত্তেজনার যুগে আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের এমন কোনো ক্ষমতার পালাবদল ঘটেনি।এ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নানা জল্পনাকল্পনা করে প্রতিবেদন করছে।
বার্তা সংস্থা সিএনএন তাদের এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলেছে, এক হাজার মাইলের দূরত্বে ট্রাম্প ও বাইডেন অবস্থান করলে এমন হস্তান্তর সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। যে মুহূর্তে জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন, সে মুহূর্ত থকেই নিউক্লিয়ার ফুটবল ও বিস্কুট তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। বাইডেনের শপথ নেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত নিউক্লিয়ার ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
হাজার মাইলের দূরত্বে থাকা দুজনের মধ্যে এ হস্তান্তরের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলে সিএনএন মনে করছে। হোয়াইট হাউসের মিলিটারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, এ ক্ষেত্রে দুটি নিউক্লিয়ার ফুটবল প্রস্তুত রাখা হবে। জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিস্কুটে লিখে রাখা কোড অকার্যকর হয়ে পড়বে।