বিচারহীনতার কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্ষণ
বিচারহীনতার কারণেই দেশে নারী নির্যাতন কিংবা ধর্ষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তির অপব্যবহার, নৈতিক স্খলন ও মানবিক মূল্যবোধসহ সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।
‘নারী নির্যাতন বৃদ্ধির কারণ, প্রতিকার কী?’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
খুশি কবির বলেন- সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিক স্খলনের কারণে দিন দিন ধর্ষণের মত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ঘটনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই ঘটনাকে অনেকেই ভিন্নভাবে দেখছেন। পরস্পর সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে সুতরাং এটিকে ধর্ষণ বলা যাবে কি-না তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু আমি এটিকে ভিন্নভাবে দেখতে চাই না। যেটা ধর্ষণ সেটি ধর্ষণই এবং এটি জঘন্যতম অপরাধ। সেক্ষেত্রে যাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে কিংবা যে করছে সে যে শ্রেণিরই হোক না কেন। এটি হচ্ছে এক ধরনের বল প্রয়োগ করে নারীকে নিয়ন্ত্রণের একটি জায়গায় নিয়ে আসা। যেটি কোনোভাবেই, না আমাদের বোধের জায়গা থেকে, না মানবিকতা থেকে, না নৈতিককতার জায়গা থেকে কিংবা মানুষ হিসেবে মানুষকে সম্মান করা কোনদিক থেকেই এটি গ্রহনযোগ্য নয়। গ্রামের একজন দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে ধর্ষণ করা যেমন অপরাধ তেমনি একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েকে ধর্ষণ করাও তেমন অপরাধ। এ ক্ষেত্রে আবার অনেকে অজুহাত খোঁজেন। অতীতেও দেখেছি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে পোশাক নিয়ে, মেয়ের চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই বোরখা বা হিজাব পরা, অথবা গ্রামের মেয়ে; তারাতো আধুনিক পোশাক পরে না। এমনকি বয়স্ক নারী এবং বাচ্চা মেয়েকেও ধর্ষণ করা হচ্ছে। তাহলে এখানে পোশাক দায়ী কিভাবে? মাস্টারমাইন্ডের ঘটনা নিয়ে অনেকে বলছেন এরা ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী, তারা পূর্ব পরিচিত। এই সব অজুহাত এখানে কেন তোলা হচ্ছে? এটাতো ধর্ষণ, সেটা যেভাবেই হক যেই করুক। এখানে এই প্রশ্নগুলো যারা তুলছেন আমি মনে করি তারা ধর্ষককে আরও প্রশ্রয় দিচ্ছেন। মেয়েটি তোমার বন্ধু, তাই বলে তাকে তুমি ধর্ষণ করবে? বন্ধুদের নিয়ে গণধর্ষণ করবে? এমনভাবে ধর্ষণ করবে যাতে সে মারা যাবে? এটাতো বন্ধুত্বের পরিচয় হতে পারে না।
খুশি কবির বলেন, অভিভাবকদের প্রশ্রয় পেয়ে অনেক ছেলেরা টাকা উড়ায়। যা খুশি তারা তাই করে। আমাদের সময় আমরা এ ধরনের ছেলেদের সঙ্গে মিশতাম না। আমরা ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা, পড়ালেখা সবকিছু করতাম। কখনই আমাদের মনের মধ্যে কোন ধরনের সন্দেহ বা ভয় কাজ করতো না। এখনকার দিনে ছেলেরা খুব বেশি বখে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিরও প্রভাব রয়েছে। তাই প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। আর মেয়েদেরকে খুব সাবধান হতে হবে। যার-তার সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকতে হবে; বুঝে শুনে চলতে হবে।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, যারা ধর্ষণ করছে মূলত তাদের মনমানসিকতা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা নষ্ট মানুষ। সেজন্যই তারা এই ঘৃন্য অপরাধ করছে। তাই আগে মন ভালো করতে হবে। ছেলে-মেয়ে এক সাথে ঘুরলেই ধর্ষণ করতে হবে? ইউরোপে তো নারী-পুরুষেরা এক সঙ্গে ঘুরেন, ফেরেন, সব কাজ করেন, কই সেখানে তো এতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না। সেখানে কয়টা ধর্ষণের মামলা হয়? তাহলে আমাদের সমস্যা কি? আসলে যারা ধর্ষণ করে তাদের মন নষ্ট হয়ে গেছে। নৈতিক অবক্ষয় এর জন্য দায়ী। সেজন্য নৈতিক শিক্ষা তাদের জন্য জরুরি।
তিনি বলেন, ধর্ষণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হল যে, অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া যায়। সঠিকভাবে বিচার হয় না। এমন ঘটনা আমরা দেখেছি। এই বিচারহীনতার কারণেই মূলত ধর্ষণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ধর্ষণ রোধে কঠোর আইন আছে কিন্তু টাকার কাছে তা অনেক সময় বিক্রি হয়ে যায়। ধর্ষক যদি টাকাওয়ালা হয় তবে তাকে আর কিছু করা যায় না। আর ধর্ষিত নারী অর্থের কাছে হেরে যায়। সুবিচার নিশ্চিত করা গেলে এসব অপরাধ অবশ্যই কমবে বলে মনে করেন তিনি।