লাইসেন্স না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি রিকশাচালকদের
অবিলম্বে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু না হলে বগুড়ায় ২৪ জানুয়ারি কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে অটোরিকশা-ভ্যানশ্রমিক ও মালিক সংগ্রাম পরিষদ।
রোববার (১০ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের জিরোপয়েন্ট সাতমাথায় মুজিব মঞ্চের সামনে পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
দাবিগুলো হলো-পৌরসভা থেকে অটোরিকশা-ভ্যান-ইজিবাইকের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অটোরিকশা ভাংচুর, শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা, রোড এবং স্ট্যান্ড নির্ধারণসহ স্ট্যান্ডগুলোতে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা, রাস্তায় মোটরসাইকেলসহ গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করা।
সমাবেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক অটোরিকশা চালক ও মালিক অংশ নেন। রিকশা শ্রমিকদের এই আন্দোলনেকে সমর্থন জানিয়ে বাম দলের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দেন।
সকাল ১০টা থেকেই সদরের বনানীতে জমায়েত হতে শুরু করেন আন্দোলনকারী রিকশা শ্রমিকরা। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হাতে ব্যানার- প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে সাতমাথা অভিমুখে আন্দোলনকারীদের একটি পদযাত্রা বের হয়। কলোনি, ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড ও মফিজ পাগলা পথসভা শেষে পদযাত্রাটি শহরের সাতমাথায় এসে শেষ হয়।
এর আগে বগুড়া শহরের যানজট নিরসনে জেলা পুলিশ গত ১ জানুয়ারি থেকে শহরের ইজিবাইক, অটোরিকশা, মেট্রোরিকশা ও সব ধরনের ব্যাটারিচালিত যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
অটোরিকশা-ভ্যানশ্রমিক ও মালিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কবির হোসেনের সভাপতিত্বে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-শ্রমিক নেতা রুমেল ও মাসুদ পারভেজ, অ্যাডভোকেট দিলরুবা নুরী, অটোরিকশা মালিক কাশেম, ফারুকুল ইসলাম, অটোরিকশা চালক শাজাহান মোল্লা ও শাজাহানসহ অনেকেই।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শহরের যানজট নিরসনের নামে প্রশাসন সাতমাথায় ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢুকতে দিচ্ছে না। অথচ যানজটের জন্য দায়ী অপ্রতুল রাস্তা। শহরের অভিজাত হোটেল, বেসরকারি হাসপাতাল, ব্যাংক ও শপিংমলের সামনে পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল ও গাড়ি যাজনজটের অন্যতম আরেকটি কারণ। ফুটপাতও ব্যবসায়ীদের দখলে। পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই এদিকে।
তারা বলেন, ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহন আমদানি করাসহ দেশের অভ্যন্তরে কেনাবেচায় সরকারি কোনো বিধিনিষেধ নেই। অথচ রাস্তায় যখন চলছে তখন সেগুলো অবৈধ বলা হচ্ছে। পৌরসভার মেয়রকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি। এর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিলে তিনি শুধু আশ্বস্ত করেছেন। অথচ ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশার মাধ্যমে যথাসময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারে যাত্রীরা।
তারা আরও বলেন, পরিবেশ দূষণও হয় না এসব রিকশায়। রোগীকে দ্রুত সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়াসহ যাতায়াতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমিয়ে এনেছে অটোরিকশাগুলো।
সমাবেশে ষাটোর্ধ্ব অটোরিকশা চালক শাজাহান বলেন, ‘অটোরিকশা না থাকলে এই বয়সে রিকশা চালানো সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন ঠিকমতো অটোরিকশা চালানো যাচ্ছে না। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে বৈধভাবে আয় করছি কিন্তু যন্ত্রে বৈধতা নেই।’
সমাবেশে বক্তারা লাইসেন্সের ব্যবস্থা নীতিমালা তৈরিসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। তা নাহলে ২৪ জানুয়ারি কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন তারা।