চীনকে ঠেকাতে শ্রীলঙ্কাকে পাশে চায় ভারত

0

অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল পেতে শ্রীলঙ্কা ক্রমেই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারত প্রমাণ করতে চায় যে দ্বীপ দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার ক্ষমতা তারও রয়েছে। কলম্বো সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ জয়শঙ্করের দেয়া বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট হয়েছে। বুধবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি মিডিয়ায় এই বিবৃতি দেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক

বিবৃতিতে অনেক কথা থাকলেও মূল সুর ছিল অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে। এ নিয়ে লঙ্কান ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জয়শঙ্কর জানান।

তিনি বলেন, আমি যে বার্তা নিয়ে এসেছি সেটা হলো ভারত সবসময় একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার ও বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে থাকবে। দেশটি পারস্পরিক আস্থা, পারস্পরিক স্বার্থ, পারস্পরিক সম্মান ও পারস্পরিক স্পর্শকাতরতার ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়।

দুই দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার অভাবনীয় সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো, জ্বালানি, কানেকটিভিটি, ইত্যাদি খাতে অনেক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পারস্পরিক স্বার্থে এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত এবং তা নি:সন্দেহে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুততর করবে।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত

ভারতীয় বেসরকারি বিনিয়োগ প্রশ্নে জয়শঙ্কর বলেন, শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ প্রবল। আমরা ওষুধ শিল্পের জন্য বিশেষ জোন প্রতিষ্ঠা ও পর্যটন খাত নিয়ে কথা বলছি। আমরা দ্রুত এর ফলো-আপ করবো।

তিনি বলেন, সামাজিক, সম্প্রদায় ও মানবসম্পদ খাতে শ্রীলঙ্কার অংশীদার হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে ভারতের অকাট্য রেকর্ড রয়েছে। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটে কানেকটিভিটি পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। তবে শ্রীলঙ্কা সরকারের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারকে ভারত গুরুত্ব দেয়।

জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন যে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা ও শ্রীলঙ্কা সরকার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সরকারের এই অগ্রাধিকার নীতি অনুসরণ করা হবে।

ইস্টার্ন কনটেইনার টার্মিনাল

জাপানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কলম্বো বন্দরের পূর্ব কনটেইনার টার্মিনাল (ইসিটি) প্রসঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি কিছু বলেননি। এই প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে ইতোমধ্যে সম্মত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হলে তা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।

শ্রীলঙ্কা সরকার প্রথমে ইসিটি বাস্তবায়নের কাজ ভারত ও জাপানের হাতে দিতে রাজি হয়। পরে ভারত-বিরোধী ও উগ্র জাতীয়তাবাদীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে ওই ভাবনা থেকে সরকার পিছিয়ে আছে। এই বন্দরের ৭০% ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবসা ভারতের সঙ্গে হয়। ফলে এখানে পদচ্ছাপ রাখতে ভারত বেশ মরিয়া। তাছাড়া চীনারা পাশেই কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করছে।

লঙ্কার জন্য ভারতীয় ভ্যাকসিন

ভারতের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কিনতে শ্রীলঙ্কা রাজি হয়েছে বলে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশি প্রথম নীতির প্রতিফলন ঘটিয়ে কোভিড মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়েছে ভারত। এখন আমরা কোভিড-পরবর্তী সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি এখন ভারত থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার আগ্রহটি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি।

সামুদ্রিক নিরাপত্তা

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শ্রীঙ্কার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জয়শঙ্কর বলেন: ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ হিসেবে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভারত ও শ্রীলঙ্কার অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে ভারতই প্রথম সাড়া দিয়ে থাকে। সহযোগিতার ক্ষেত্র আগামীতেও বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস। ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কার সামর্থ্য বাড়াতে আমরা প্রস্তুত।

তামিল ইস্যু

লঙ্কান সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী বাতিলের ক্ষেত্রে ভারতের স্পর্শকাতরতার বিষয়টি তুলে ধরেন জয়শঙ্কর। এতে তামিল অধ্যুষিত উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে তামিলদের হাতে বেশি ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কাকে উপদেশ দিয়ে জয়শঙ্কর বলেন যে তামিলদের সঙ্গে সমঝোতা জোরদার করা কলম্বোর স্বার্থেই প্রয়োজন। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা সংবিধানের আওতায় তাদের ন্যায্যতা, সমতা, শান্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির ফল এই ১৩তম সংশোধনী। চুক্তিতে শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতকে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয়।

লঙ্কান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনেশ গুনাবর্ধনা ভারতকে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের কথা বলেন তিনি।

তিনি কারিগরি শিক্ষা ও নীল অর্থনীতির উন্নয়নেও সহযোগিতা চান। ভারতীয় জেলেদের প্রতি ইংগিত করে তিনি পক প্রণালী ও পক সাগরে অবৈধ মাছ ধরা বন্ধের উপর জোর দেন। ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্যে শ্রীলঙ্কার স্বার্থ নিয়ে কথা বলেন গুনাবর্ধনা।

শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বৌদ্ধ পুরাকীর্তিগুলো সংরক্ষণে ১৫ মিলিয়ন ডলার ও জাফনা কালচারাল সেন্টার উন্নয়নে ৬.৬ মিলিয়ন ডলার প্রদানের জন্য ভারতের প্রশংসা করেন লঙ্কান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সূত্র : এসএএম

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com