ট্রাম্পকে অভিশংসনের উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ক্ষমা করার মধ্য দিয়ে দায়মুক্তি সম্ভাবনার পথ খুঁজছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। প্রেসিডেন্ট তার প্রশাসনিক কৃতকর্মকে ক্ষমতার অস্বাভাবিক ব্যবহারের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত করার প্রক্রিয়াকেই দায়মুক্তি বলা হচ্ছে। ট্রাম্পের এই দায়মুক্তির পখ খোঁজা প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন নিজের দায়মুক্তি চাইছেন এ নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অবশ্যই এক্ষেত্রে এগিয়ে ডেমোক্র্যাটরা। সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা তাকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের এক উপদেষ্টা বলেছেন, ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের বিরোধিতা করেছেন পেন্স। অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট এই সংশোধনী ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও ট্রাম্পের সঙ্গে যে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে ক্যাপিটল হিলের ঘটনার পর তা স্পষ্ট।
নিজের রাজনৈতিক মিত্র এবং বন্ধুদের ধারাবাহিকভাবে ক্ষমা করার পর ২০১৮ সালে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘নিজেকে ক্ষমা করার চূড়ান্ত ক্ষমতা আমার রয়েছে।’ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের মামলা রয়েছে। সেগুলো কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার আওতায় পড়ে না। বিগত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ট্রাম্প শান্তিতে দিন কাটাতে পারবেন না।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অঙ্গরাজ্যগুলোর করা মামলার মধ্যে রয়েছে ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি সাইরাস ভেন্সের ক্রিমিনাল তদন্ত এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের নাগরিক তদন্ত। ঋণ নিতে সম্পদের মূল্য বেশি দেখানো এবং বাণিজ্যিক বিনিময়ের সময় ট্যাক্স সুবিধা নেওয়ার ঘটনায় এসব মামলা চলছে। সাংবিধানিক আইনজীবীরা বলছেন, একজন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কি-না এর সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। কোনো প্রেসিডেন্টই আগে এই চেষ্টা করেননি। সে কারণে আদালত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের প্রফেসর ব্রায়ান কাল্ট বলেন, ‘মানুষ যখন আমার কাছে জানতে চায় একজন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কি-না, আমার উত্তর হয় সব সময়ই পারে।’ তিনি বলেন, সংবিধান এই বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলেনি। তবে কোনো কোনো আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন নিজেকে ক্ষমা করা অসাংবিধানিক হবে। কেননা তা নিজের মামলায় কেউ বিচার করতে না পারার মূল নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
এদিকে ক্যাপিটল হিলের ঘটনার পর ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার অভিশংসনের মুখে পড়তে হতে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর কিছুদিন পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা ত্যাগ করবেন ট্রাম্প। এই অল্প সময় বাকি থাকতে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যাবে কি-না তা নিশ্চিত না হলেও পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেননি। কিন্তু সাংবাদিকদের তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন যে, ক্যাপিটল হিলের ঘটনায় তার ককাসের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে চান। তবে ককাস থেকে ট্রাম্পকে অভিশংসনের মুখোমুখি করা হলেও প্রেসিডেন্টকে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটের মুখোমুখিই হতে হবে। আর রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট অনায়াসেই দায়মুক্তি পেয়ে যাবেন এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।