ভ্যাকসিন বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্যের দাবি বিএনপির

0

সরকারের অদূরদর্শিতার কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটর সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের অদূরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে আজ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই এর থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অনতিবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুষ্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। এ সময় তিনি  ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য অতিদ্রুত বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল, এটা সংরক্ষণে একটা ৭০ ডিগ্রি মাইনাস এবং আরেকটা ২০ ডিগ্রি মাইনাস তাপমাত্রা লাগে। এসব  আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না এবং আমাদের দেশে এসব আনাও সম্ভব হবে না। এছাড়া অন্যান্য দেশ যেমন রাশিয়া স্পুটনিক টাস্ক, চীন সিনো ফার্মা অনুমোদন দিয়ে তারা ইতিমধ্যে টিকা দিচ্ছে। অতত্রব ৩ বা ৪টি টিকাই এভেইলেবল হবে তা নয়। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। তবে তাদের কাছে ৫০টি টিকার ব্যাপারে এমপ্লাই করা আছে। 

তারা ওইসব বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা শেষ হলে অনুমোদন দিচ্ছে। তাই বিকল্প বলতে আমরা যেসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত আমাদের দেশের তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য টিকা এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে, সেগুলোর সাথে নেগোসিয়েশন করা হলে আরও কম দামে আমাদের দেশ টিকা পেতে পারতো। এখনও সুযোগ আছে বলে আমরা সরকারকে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের ও বেক্সিমকো প্রধান নির্বাহীর বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সাথে জি টু জি চুক্তি হয়েছে বলে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানিয়েছে। আবার বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের সঙ্গে নয়, চুক্তি হয়েছে বেক্সিমকোর সাথে বা বাণিজ্যিক চুক্তি। গতকাল তড়িঘড়ি করে করোনার টিকা কেনার জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানেও রাখা হয়েছে বিশাল দুর্নীতির খাত।

ভ্যাকসিন ক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুন পড়বে। যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয় তা সাধারণ মানুষ আদৌ সে ভ্যাকসিন পাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের জন্যও সরকারের প্রস্তাবিত জেলা, উপজেলা কমিটির মাধ্যমে টিকা সরবারহ করা হলে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন যথাযথভাবে পৌঁছাবে না বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া জনগণের অধিকার। এই অধিকার থেকে জনগণ যেন বঞ্চিত না হয়, সেজন্য বিএনপি প্রথম থেকে এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছে। জনগণ যাতে এই ভ্যাকসিন সঠিকভাবে পায় সেটা অবশ্যই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

ভ্যাকসিন ক্রয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অভিযোগ করে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। অন্যদিকে যদি সরাসরি সরকার ভ্যাকসিন ক্রয় করতো তাহলে প্রায় অর্ধেক দামে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেতো। এতে শত শত কোটি টাকা দেশের সাশ্রয় হতো। শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে লাভবান করতেই এই ধরনের চুক্তি করা হয়েছে।

ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রণীত গাইড লাইনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই গাইড লাইন অনুযায়ী যাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবর্তে অন্যদেরকে এই ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে সরকারের প্রণীত নীতিমালায়। দেশের ৬০ বছরের অধিক বয়সী জনগোষ্ঠি, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠি, প্রাধিকার প্রাপ্ত জনগোষ্ঠি, সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধারা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, যা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

বেসরকারি খাতে উচ্চ মূল্যে চিহ্নিত কতিপয় মহলের নিকট প্রায় তিন মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন বিক্রি সরাসরি জনগণের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে সাধারণ মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

ড. মোশাররফ বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে সরকার একটি স্বর্থান্বেষী মহলকে শত শত কোটি হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, যে  প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও ভ্যাকসিন আবিস্কারক এই ভ্যাকসিন থেকে কোনও ধরনের রয়েলিটি বা লভ্যাংশ নিচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ এটি নিয়ে ব্যবসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

স্বার্থাস্বেষী মহলকে খুশি রাখার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও অনেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশ অনেক আগেই ভ্যাকসিন ট্রায়াল ও পরবর্তিতে স্বল্পমূল্যে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু সেটি গ্রহণ করা হয়নি। যদি একাধিক প্রস্তাব গ্রহণ করা হতো, তাহলে ভ্যাকসিন নিয়ে আজ এই অনিশ্চিয়তা হতো না।

করোনা ভাইরাস সংক্রামণের প্রথম থেকে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, করোনা পরীক্ষা, শনাক্তকরণ, মৃতের সংখ্যা এসব বিষয়ে জনমনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে, সঠিক তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। যথাযথ শনাক্তকরণ ও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের এক ধরনের উদাসীনতা প্রথম থেকে লক্ষ্যনীয়। সেই ধারাবাহিকতায় একটি স্বার্থন্বেষী মহলকে বর্তমান সরকার ভ্যাকসিন ক্রয় ও বিতরণে দায়িত্ব নিয়ে জনগণের শত শত কোটি টাকা লোপাট করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-উর রশীদ, মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভ্যাকসিন সম্পর্কে দলের পক্ষ থেকে গত সাপ্তহে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com