বিনামূল্যে ভ্যাকসিন ও সরকারের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের দাবি বিএনপির

0

দেশের সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। 

গতকাল রবিবার (৩ জানুয়ারি) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল বলেছেন যে, ভ্যাকসিনের মূল্য ৪২৬ টাকা পড়বে। এই মূল্যটা কি সরকার প্রদান করবে নাকি জনগণকে প্রদান করতে হবে- এ বিষয়টা ক্লিয়ার না। অবিলম্বে সরকারের এ বিষয়ে পরিপূর্ণ একটা পরিকল্পনা রোডম্যাপ অর্থাৎ সব কিছু নিয়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ, মূল্য, কতজনকে দেয়া সম্ভব হবে, কাদেরকে দেয়া হচ্ছে এর একটা রোডম্যাপ অবশ্যই জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি আমরা জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুনতে পারছি, উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের জন্য ইতোমধ্যে তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। খবর পেয়েছি, গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব এই সমস্ত ক্লাবগুলোতে যারা সদস্য আছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। আরও শুনতে পারছি যে, সরকারের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা যারা আছেন, তাদের জন্য করা হচ্ছে, মন্ত্রীদের জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কিভাবে এই ভ্যাকসিনটা পাবে, কখন পাবে- সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও বক্তব্য আমরা সরকারের কোনও দফতরের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পাইনি। আমাদের যেটা বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষ যেন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রথমদিনই বলেছেন, এটা জনগণকে বিনা মূল্যে দেয়া উচিত।

এছাড়া টিকা বাংলাদেশে কবে পৌঁছাবে তা নিয়ে জনগণকে সরকারের সঠিকভাবে তথ্য দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট তারা ভ্যাকসিনটা অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রোজেনার থেকে কিনেছে। দেয়ার আর পারচেজ অব ফর্মূলা অ্যান্ড দে উইল প্রডিউজ ভ্যাকসিন, তারা তৈরি করবে। তারপরে সেটা বেক্সিমকো বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। আমাদের প্রশ্ন হলো- এটা তো পরিস্কার হতে হবে জনগণের কাছে যে, এটা সরকার না কিনে বেক্সিমকো কিনলো কেনও?

বেক্সিমকো কি এখানে কমিশন আছে? কত কমিশন আছে? ব্যাক্সিমকোর কত কমিশন আছে সেটা আমরা জানতে চাই। মূল্য কত দিতে হবে। সিরাম ইন্সটিটিউটকে সরকার টাকা দিচ্ছে। কার মাধ্যমে দিচ্ছে? ব্যক্সিমকোর ফার্মাসিটিক্যালসের মাধ্যমে দিচ্ছে। হোয়াই। সরকার নিজে সিরাজ ইন্সটিটিউটকে দিচ্ছে না কেনও?

তিনি বলেন, জানার অধিকার আছে জনগণের। আপনি প্রশ্ন করেছেন, এখানে অন্য কোনও কিছু আছে কিনা। পরিস্কার তো। হোয়াই এ প্রাইভেট কোম্পানি ইনসাইড দেয়ার। যদি বুঝতাম যে, বেক্সিমকো আগে টাকা দিয়ে এটা কিনে নিয়েছে। তাহলে বুঝতাম যে, আমাদের সরকারের টাকা নেই, তারা টাকা দিয়েছে বলে তাদেরকে একটা কমিশন দিতে হচ্ছে। তাও তো না। এখানে সরকার ৬‘শ কোটি টাকা জমা দিচ্ছে। আজকে হোক, কালকে হোক দিয়ে দেবে। তাহলে হোয়াই বেক্সিমকো ইনসাইড। এটা কী এজন্যে যে তিনি এই সরকারের উপদেষ্টা নাকী অন্য কোনও কারণ।

সিরামের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ সেইভাবে অফিশিয়ালি কোনও কিছু এনাউন্স করেননি। আমরা যেটা পত্র-পত্রিকায় দেখছি যে, এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হচ্ছে অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনাটার যেটা ভারতের সিরাম ইন্সটিউট থেকে। অর্থাৎ এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে সিরাম ইন্সটিটিউটে। সেখান থেকে বাংলাদেশে নেবে। সেটাও নিচ্ছে একটা বেসরকারি ফর্মাসিটিক্যালস কোম্পানি বেক্সিমকো ফর্মাসিটিক্যিালস কোম্পানির মাধ্যমে। আমরা জানি না- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট এটাকে ডিল করছে অথবা সরসারি যে কোম্পানি প্রস্তুত করছে তাদের সাথে ডিল করছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই কথাটা বার বার বলছি যে, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, ভ্যাকসিন বিতরণ এটা অত্যন্ত প্রফেশনাল, টেকনিক্যাল ও বিশেষ ব্যাপার। আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি যে, আজ-কালকের মধ্যেই সম্ভবত আজকেই ৬‘শ কোটি টাকা বেক্সিমকোর মাধ্যমে সিরাম ইন্সটিটিউটের কাছে দেবে। সেটার পর তারা ৬ মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে। তাতে করে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিমাসে ৫০ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

করোনা সংক্রামণে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া তথ্য সঠিক নয়, দাবি করে তিনি বলেন, সরকার তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে, গতকাল পর্যন্ত ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ১৮৪ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে এবং মারা গেছে ৭ হাজার ৫১৯জন। আমরা বার বার বলেছি এই তথ্য সঠিক নয়। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে বাড়িতে। তারা কিন্তু রিপোর্টও করছেন না, হাসপাতালেও যাচ্ছেন না, বাড়িতে মারা যাচ্ছেন অথবা সংক্রমিত হচ্ছেন।

সরকারের পরীক্ষা করবার যে নীতি চলছে এটা যথেষ্ট নয় যে সঠিক চিত্রটা উঠে আসবে। আমরা মনে করি যে, এটা গ্রোস নেগলেজেন্সি। এই বিষয়টা মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত, এদেশের মানুষের সঙ্গে জড়িত এটা নিয়ে সরকারের সুষ্ঠু বক্তব্য নিয়ে আসা উচিত, পরিকল্পনা করা উচিত। আমরা আগেও বলেছি এই যে, তথ্য সরকার দিচ্ছে, ডাটা যে দিচ্ছে সংক্রামণ ও মৃত্যুর তা সঠিক নয়। আমরা করোনা সংক্রামণ ও মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান দাবি করছি।

ভ্যাকসিন: বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের কমিটি

করোনা সংক্রামণের বিষয় সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটি সদস্য হলেন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম এবং বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয় সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।

মহাসচিব বলেন, এই কমিটি অবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রদান পর্যন্ত যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করবে এবং সেই তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে তারা আমাদের জাতির সামনে তাদের বক্তব্য ও পরামর্শ তুলে ধরবেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন এবং সদ্য প্রয়াত মহিলা পরিষদের সভানেত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com