বাইডেন কি পারবেন?

0

আমেরিকা গ্লোবাল নেতৃত্ব নিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে ১৯৪২ সাল থেকে। সুনির্দিষ্ট সে যা করেছিল তা হলো, ওই বিশ্বযুদ্ধের মূল নির্ধারক নেতৃত্ব নেয়া, হিটলারবিরোধী অক্ষশক্তি জোট গড়া; তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নকেও শামিল করা, ওই বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের বিজয় ঘটানো, যুদ্ধের মেজর খরচ হিসেবে পক্ষের সব রাষ্ট্রকে আমেরিকা কোনো চুক্তি ছাড়াই অর্থ জুগিয়ে চলা, যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন বাদে সবাইকেই আবার যুদ্ধ-পুনর্বাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য, এবার জাপান-জার্মানি-ইটালিসহ সারা ইউরোপকে নতুন বিনিয়োগ দেয়া। আর সেই সাথে ইউরোপ যেন কমিউনিস্ট দ্বারা দখল না হয়ে যায় তাই জার্মানি বা জাপানে স্থানীয় সামরিক ব্যারাকে আমেরিকান সৈন্য রেখে দেয়া।

আর এসব কিছুর খরচ আমেরিকা একা বহন করা। কিন্তু আমেরিকা কখনোই এই নিরাপত্তাদানের খরচ ইউরোপের কাছে চায়নি। এরই বিনিময়ে আমেরিকা ইউরোপের মন পেয়েছিল। আর সেই থেকে পায় নিজে গ্লোবাল (অর্থনীতি তো বটেই) পলিটিক্যাল একচ্ছত্র লিডারের স্বীকৃতি। তা দিয়েছিল অ-কমিউনিস্ট সারা ইউরোপ। পরে যুদ্ধে আমেরিকা খরচ বা বিনিয়োগ যা কিছু করেছিল কিস্তিতে হলেও সেসব খরচের অর্থ ফিরিয়ে দিয়েছিল। আর অবকাঠামো ঋণও তারা স্বল্প সুদসহ ফেরত দিয়েছিল কিস্তিতে। তবে সামরিক ব্যয় যেমন ইউরোপে সব ব্যারাক রাখার খরচ বা সামরিক জোট ন্যাটো পরিচালনার খরচের কমপক্ষে নব্বই ভাগ একা আমেরিকা বহন করে এসেছে, এ পর্যন্ত। কেবল ট্রাম্প এইবার ইউরোপের কাছে সামরিক ব্যারাক রাখার খরচ চেয়েছিলেন। এর চেয়েও ‘শকিং’ ব্যাপারটা হলো, ট্রাম্প নিজেই আমেরিকার গ্লোবাল বাণিজ্যের নেতা অবস্থান ছেড়ে সরে গিয়েছিলেন। ওই বছর (২০১৭) গ্লোবাল ইকোনমিক ফোরামে তার দেশ অংশ নেয়নি বা যেখানেই অংশ নিয়েছে (যেমন জি৭ বা জি২০) সেখানে জাতিবাদী ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে চলতে চেয়ে কথা বলে গেছে। এসব মিলিয়ে গত ৭৫ বছরের যে আমেরিকা গ্লোবাল নেতার পরিচয় পেয়েছিল তা ট্রাম্প তার শেষ চার বছরে সদম্ভেই সব মুছে ফেলেছিলেন।

সে কারণে, আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সাধারণ নীতি হবে আমেরিকাকে যতটা সম্ভব আগের গ্লোবাল নেতার আসনে ফিরিয়ে নেয়া। এ কাজে এবার মূলত তার আগানোর পথ হবে নীতিগত জায়গায় শক্ত করে দাঁড়িয়ে সব কিছুকে ফিরিয়ে আনা। আর এ কাজে সবার উপরে থাকবে হিউম্যান রাইট ইস্যুতে এক শক্ত আপসহীন অবস্থান। মোদির ভারত এতে ‘সাফার’ করবে অবশ্যই, কিন্তু ভারতকে কষ্ট দিতে হবে, এটা বাইডেনের কোনো পলিসি নয়। বরং হিউম্যান রাইট ইস্যুতে শক্ত আপসহীন অবস্থান নিলে গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতৃত্বের প্রশ্নে আমেরিকা চীনের কাছে পরাজিত হয়ে গেলেও গ্লোবাল রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহসাই আমেরিকার হাত থেকে চলে যাওয়া তবেই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে এবং তা সম্ভবত অনেক দীর্ঘ দিন আমেরিকার হাতে থাকবে। এবার প্রকাশিত এক গবেষণা-স্টাডি রিপোর্ট বলছে, করোনাভাইরাসকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে এবং এই ম্যানেজমেন্ট সাকসেসের কারণে ২০৩৫ সালে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে অর্থনৈতিক নেতৃত্ব চীনের পাওয়ার কথা ছিল। সেটা এখন ২০২৮ সালের মধ্যেই চীন অর্জন করে ফেলবে বলে অনুমিত হচ্ছে। তাই অন্তত গ্লোবাল রাজনৈতিক নেতার আসন ধরে রাখতে বাইডেন নিজ দেশের হিউম্যান রাইট ইস্যুতে শক্ত আপসহীন অবস্থানের কথা বলছেন। তিনি শুধু ভারতের কাশ্মির নীতিই নয়, ভারতের নাগরিকত্ব আইন এবং মুসলমানদের প্রতি নিপীড়ন ও বৈষম্য নিয়েও উচ্চকিত হবেন বলে জানিয়ে আসছেন। একই অবস্থান নেবেন বাংলাদেশের হিউম্যান রাইট ইস্যুতেও। এ কারণে এসব দেশের নেতৃত্ব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com