দেশের স্বাধীনতার পর থেকে আ.লীগ স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দেয়নি: বিএনপি

0

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের সাহেবদের নীলনকশার ‘মিডনাইট ভোট’ গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে ‘ডার্টি ওয়ার’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দেয়নি। প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের জন্য যে দলীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উদার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতা অপরিহার্য তা আওয়ামী লীগ কখনোই রপ্ত করেনি। বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমিতে যাতে গণতন্ত্রের শিকড় গজাতে না পারে সেজন্য তারা সবসময় সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কণ্ঠরুদ্ধ করার নানা কালাকানুন, গুম, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যার অমানবিক নিষ্ঠুরতার সীমাহীন আবর্তের মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়েছে তারা। স্বাধীনতার অর্ধশতান্দি পরও গেল না আঁধার।’

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতি’ হয়েছে। তাই ৩০ ডিসেম্বর দিনটিকে দেশবাসী ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে অভাবনীয় রেকর্ড সৃষ্টিকারী রাতে র‌্যাব-পুলিশের সহায়তায় ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে ক্ষমতা দখলের দুই বছর পূর্ণ হবে আজ মঙ্গলবার রাতে। তাই এই রাতটি দেশবাসীর কাছে তাদের ‘ভোটাধিকার হরণের কালো রাত’ হিসেবে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কালো রাতে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। সেদিন গণতন্ত্রের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়েছিল। তাই ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট হয়নি, যা হয়েছে তা হলো নির্বাচন কমিশন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সম্মিলিত উদ্যোগে ভোট ডাকাতি। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ভোট ডাকাতির নির্বাচনের খবর ফলাও করে প্রচার হয়েছে। আসলে ৩০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেররা যা করেছেন তা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে ‘ডার্টি ওয়ার’।’

রিজভী বলেন, ‘এই অভিনব ও নজীরবিহীন নিশিরাতের নির্বাচন করে অনুশোচনার বালাই নেই বরং গত পরশু দিন ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন- ‘বিএনপি তখন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত করতে এবং গণতন্ত্রকে সংকটে ফেলতে চেয়েছিল’। আদিম মানুষেরা নরবলি দেয়ার পর মৃতদেহ নিয়ে যেভাবে উল্লাস করতো ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য যেন গণতন্ত্র হত্যা করে সেই ধরনের উল্লাসেরই বহিঃপ্রকাশ। গণতন্ত্র হত্যা করে গণতন্ত্রের প্রতি এহেন শ্রদ্ধাহীন স্পর্ধার সংস্কৃতিতে দেশবাসী আজ চরমভাবে ব্যাথিত ও ক্ষুব্ধ। এই নির্বাচনের পর নব্য নাৎসীরা দাঁত বের করেছে হিংস্রভাবে।’

নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অথচ সিইসি নুরুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিশন সেই কমিশনের অধীনে আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। মানুষের ভোটের অধিকারকে এই কমিশন শুধু হরণই করেনি বরং মহান স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তারা গুরুতর অসদাচরণ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের নির্দয় মনোবৃত্তির সারাংশ মাত্র। দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ গঠন করে ইসির ভোট ডাকাতি, অনিয়ম ও দূর্নীতির যে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং তাদের বিচার দাবি করেছেন- এ দাবি দেশের ১৬ কোটি মানুষের দাবি।’

রিজভী বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রকাশ করা কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণেও প্রমাণিত হয়েছে যে, একাদশ নির্বাচনের প্রকাশিত ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ফলাফল নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে তাতেই জানা গেছে, ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক ও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ ওই সব কেন্দ্রের বহু মানুষ বিদেশে রয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন কিংবা অনেকে কেন্দ্রেই যাননি। এছাড়া ওই ফলাফলে জানা যায়, ৫৯০টি কেন্দ্রে বৈধ ভোটের শতভাগ কেবলমাত্র একটি প্রতীকেই পড়েছে। এটিও অবিশ্বাস্য। এসব অবাস্তব ও অস্বাভাবিক ঘটনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কোনো ব্যাখ্যা নেই। এছাড়াও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা এক হাজার ১৭৭টি (মোট কেন্দ্রের ২.৯৩ শতাংশ) কেন্দ্রে, লাঙল প্রতীক তিন হাজার ৩৮৮টি (মোট কেন্দ্রের ৮.৪৪ শতাংশ) কেন্দ্রে, হাতপাখা প্রতীক দুই হাজার ৯৩৩টি (মোট কেন্দ্রের ৭.৩০ শতাংশ) কেন্দ্রে কোনো ভোটই পাননি, এটিও কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘ফলাফলের এমন অস্বাভাবিকতা নির্বাচন কমিশনের গুরুতর অসদাচরণেরই প্রতিফলন। নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারি দলের বক্তব্য যখন এক হয়ে যায় তখন সেই নির্বাচন কমিশন যে সরকারের গোলাম হয়েই কাজ করছে তা-ও প্রমাণিত হয়েছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিনের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বিবিসি বাংলার এক সাংবাদিক চট্টগ্রাম-১০ আসনের একটি কেন্দ্রে সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই ব্যালট বাক্স ভরা দেখতে পান। ভোট গ্রহণের সারা দিনই পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনের পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত এক জরিপেও আগের রাতে সীল মেরে রাখার অভিযোগ উঠে আসে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচিত ৫০টি আসনের মধ্যে ৩৩টি আসনেই আগের রাতে সীল মেরে রাখার ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে টিআইবি।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া খুলনা, গাজীপুর, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম এবং এসব নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের অসৎ অনাচারের অভিযোগও জানান দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। সুতরাং ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ গঠন করে ইসির ভোট ডাকাতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার করার জন্য দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ যে দাবি জানিয়েছেন সে দাবির পাশাপাশি ভোট ডাকাতির নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হয়েছে সেই আওয়ামী সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ দাবি করছি।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com