‘৭৫সালে বাকশাল কায়েম করতে না পেরে আ.লীগ সেটাকে বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠা করতে চায়: বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- ‘নির্বাচন নিয়ে আজকাল দেশের মানুষের মধ্যে কোন ধরনের আগ্রহ নেই। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে দেশের মানুষ প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে এ কমিশন ভোট চুরি করছে। তারপরও লজ্জাহীন, শরমহীন কমিশনার পদত্যাগ করছে না। ’
তিনি বলেন, জনগণ প্রধান নির্বাচন কমিশন ও তার কমিশনাদের বলছে চোর, তারা বক্তৃতার নামে টাকা চুরি করছে। দেশের মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে এবং দেশের মানুষ আজ তাদের পদত্যাগ দাবি করছে, এর চেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় আর কিছুই নেই।
গতকাল শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় কালিবাড়ী তাঁতীপাড়াস্থ তার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নুন্যতম গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। যদিও তারা ভোট চুরি করে ফলাফল নিয়ে যায় তবুও আমরা (বিএনপি) নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়। ’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দিনটিকে বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার এর হত্যা দিবস হিসেবে পালন করবে। শুধু গোটা বাংলাদেশের মানুষ নয় বিশ্বব্যাপী মানুষ জানে যে নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর হওয়ার কথা ছিল সেটা ২৯ডিসেম্বর রাতে হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। তাদের (আওয়ামী লীগ) পরিকল্পনা একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে তারা প্রতিষ্ঠা করা, সে লক্ষে তারা এগোচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘৭৫সালে বাকশাল কায়েম করতে না পেরে আওয়ামী লীগ মনের ভেতর যে সুপ্ত বাসনা লুকিয়ে রেখেছে সেটাকে তারা ভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিচার ব্যবস্থা, রাষ্টযন্ত্র, প্রশাসন, পার্লামেন্ট সব কিছু তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এদেশকে পরিচালনা করছে, যেটা দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্রের জন্য আজকে সব চেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’
করোনার টিকা নিয়েও সরকার দুর্নীতি ও চুরি করার অভ্যাস ছাড়তে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি করোনার শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগকে দিয়ে কী দুর্নীতি করা হয়েছে। করোনার টেস্টিংয়ের ব্যাপারে রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে যে চুক্তি হয়েছিল সেখানে দুর্নীতির ফলে বর্তমানে সাজা পাচ্ছে রিজেন্টের মালিক। কিন্তু যে মন্ত্রী বা সচিব সেই চুক্তি করেছিলেন তাদের কোনো জবাব দিতে হয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের মধ্যে যখন কোনো জবাবদিহি থাকে না, পার্লামেন্টে যখন কোনো দুর্নীতির জন্য কাউকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যায় না, তখন তো সে দেশে এই দুর্নীতিটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবীর মানুষ যখন এই করোনার টিকাকে তারা কীভাবে বিতরণ করবে, কাদের আগে দেবে বা পরে দেবে, কী টাকা লাগবে না লাগবে এসব নিয়ে যখন আলোচনা করছে সে সময় কিন্তু আমাদের দেশের সরকার এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি।’
বিভিন্ন উপজেলা ও উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা নিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ জনগণের কাছাকাছি গিয়ে কথা বলা।
‘নির্বাচনে বিএনপি যাচ্ছে শুধু গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে, আর জনগণকে সাথে নিয়েই এ সরকারকে বাধ্য করা হবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে,’ বলেন তিনি।
৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন ঘোষণা বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগেই ঘোষণা দিয়েছি ৩০ ডিসেম্বরকে আমরা জনগণের ভোটাধিকারের হত্যাদিবস হিসেবে পালন করছি। এটা শুধু আমরা নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ সবাই খুব ভালো করে জানেন ২০১৮ সালে যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সেটি ২৯ ডিসেম্বর রাতেই হয়ে গেছে।’
‘আওয়ামী লীগ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সমস্ত ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে সেদিন। জনগণকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তাদের যে লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা সেটি প্রতিষ্ঠিত করেছে,’ বলেন তিনি।