বিদেশি অর্থায়নের পথে বড় বাধা প্রকল্পে দুর্নীতি
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অপচয় আর দুর্নীতির তকমা জেঁকে বসলে ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ পাওয়া কঠিন হবে বলে শঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। তাদের মতে, ঋণের বাড়তি শর্তের পাশাপাশি বাড়তে পারে মানসম্পন্ন ঠিকাদার না পাওয়ার ঝুঁকি। এ অবস্থায় স্থাপত্যবিদরা, প্রকল্প পরিকল্পনায় দক্ষতা ও বাস্তবায়ন-তদারকি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ডাকবিভাগের ডিজিটাল সেবা দিতে ৫৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে ই-পোস্ট অফিস স্থাপনে নেয়া প্রকল্পে ১৬০ কোটি টাকার হিসাবই পাওয়া যায়নি। দুদক এ প্রকল্পের বেশিরভাগ টাকাই লোপাটের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক ছুটিতে।
এছাড়া পুকুর খনন, স্কুল ফিডিংয়ের খিচুরি রান্না শেখার মত অদ্ভুত অজুহাতে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব, আর বাজার মূল্যের কয়েকগুণ দামে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী কেনা কিংবা রেলের ইঞ্জিন কেনায় ঘুষ লেনদেনের অভিযোগসহ নানা অনিয়ম- দুর্নীতির তথ্য অহরহ উঠে আসছে গণমাধ্যমে। এসব ঘটনায় সরকারের ভেতরে বাইরে যেমন অস্বস্তি আছে তেমনি, সামনের দিনগুলোতে অর্থায়নের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ।
চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপিতে ব্যয় করা হবে মোট ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতির প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ, অনুদান সহায়তা মিলে আসার কথা মোট ৮৫ হাজার ১৭ কোটি টাকা। ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতের সহায়তা ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
শতাংশের হিসাবে বিদেশ নির্ভর অর্থায়ন এডিপি’র ব্যয়ের ৪১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক, জাপানভিত্তিক সংস্থা জাইকা, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক- আইডিবি, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি, প্রধান উন্নয়ন সহযোগী বৈদেশিক উৎস।এসব প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ ও অনুদান সহায়তার অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে অহরহ প্রশ্ন উঠছে গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে।
সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন, তদারকি ও মূল্যায়নে কাজ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান আইএমইডি। স্থাপত্য ও পরিকল্পনাখাতের পর্যবেক্ষকরা বলছেন ঢেলে সাজাতে হবে আইএমইডিকে।
স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সংস্থার অধিভুক্ত কর্মকর্তাদের দ্বারা এই প্রাক সমীক্ষাটা করা হচ্ছে। যাদের জনবল শক্তি ও কারিগরি দক্ষতা যথেষ্ট না, আইএমইডি শক্তিশালী হয়, তাহলে জণদুভোর্গ মিটিয়ে জনবান্ধব প্রকল্প নিশ্চিত করা সম্ভব।
অপচয়, দুর্নীতিরোধের পাশাপাশি জুলাই-জুনের পরিবর্তে এপ্রিল-মার্চকে অর্থবছর হিসেবে চালু করলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি সুফল মিলবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।