বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে কম, আসছে বেশি

0

গত চার বছরে বাংলাদেশ থেকে যত লোক ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ফিরে গেছেন বলে ভারতের সরকারি পরিসংখ্যানেই স্বীকার করা হচ্ছে।

সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, এই সময়সীমার মধ্যে যত বাংলাদেশী ভারতে ঢুকতে গিয়ে ধরা পড়েছেন – তার প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক আটক হয়েছেন ভারত ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ‘নেট মাইগ্রেশন’ কমছে বলে বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, এই পরিসংখ্যান কার্যত সেই দাবিকেই সমর্থন করছে।

বস্তুত বিএসএফের পক্ষ থেকে তাদের সারা বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাতে দেখা যাচ্ছে চলতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে মোট ৩ হাজার ১৭৩ জন তাদের হাতে ধরা পড়েছেন।

সেই জায়গায় বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকতে গিয়ে আটক হয়েছেন এর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ – ১ হাজার ১১৫ জন।

এর আগের তিন বছরের বিএসএফ পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে – ২০১৯, ২০১৮ ও ২০১৭ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন যথাক্রমে ২৬৩৮, ২৯৭১ ও ৮২১ জন।

সেই জায়গায় ওই তিন বছরের বিপরীতমুখী স্রোত (অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার চেষ্টা) অনেকটাই কম, যথাক্রমে ১৩৫১, ১১১৮ আর ৮৭১ জন।

এই পরিসংখ্যানে যাদের কথা বলা হয়েছে বিএসএফ তাদের সবাইকে ‘বাংলাদেশি নাগরিক’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছে, যদিও তাদের সবার ক্ষেত্রে সেটা যাচাই করার মতো উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিএসএফের হাতে নেই।

তবে যে ভারতীয় নাগরিকরা অবৈধ পথে বাংলাদেশে যাতায়াত করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন, তার মধ্যেও ভারত থেকে বাংলাদেশে পাড়ি দেওয়ার ঘটনাই অনেক বেশি বলে তথ্যে দেখা যাচ্ছে।

ভারতে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) ২০১৭ সালের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, ওই বছরে ৮৯২ জন ভারতীয় নাগরিক ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েন।

উল্টোদিকে সে বছরেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরত আসার সময় যাতায়াত সংক্রান্ত উপযুক্ত কাগজপত্র না থাকার কারণে আটক করা হয় ২৭৬ জন ভারতীয় নাগরিককে।

কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে এনসিআরবি তাদের বার্ষিক রিপোর্টে এই সংক্রান্ত আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

বাংলাদেশিদের ভারতে ‘মাইগ্রেশন’ নিয়ে তাদের সাম্প্রতিকতম তথ্য কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে, দিল্লিতে বিএসএফ কর্মকর্তারা অবশ্য সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএসএফের একটি উচ্চপদস্থ সূত্র শুধু বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের যাবতীয় স্ট্যাটিসটিকস রিপোর্টেই দিয়ে দিয়েছি। এখন কীভাবে সেই নাম্বার ক্রাঞ্চিং করবেন বা কোন উপসংহারে পৌঁছবেন তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’

তবে দিল্লিতে দ্য হিন্দু পত্রিকার সাংবাদিক বিজয়েতা সিং অবশ্য মনে করছেন, ভারত থেকে ক্রমশ আরো বেশি সংখ্যায় কথিত বাংলাদেশীরা যে ‘নিজেদের দেশে’ ফিরে যাচ্ছেন এই পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ।

‘সীমান্তে ধরা পড়ার পর বহু বাংলাদেশীই বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে ভারতে তারা কাজকর্ম হারিয়েছেন, ফলে তারা এখন নিজেদের জায়গায় ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন’, বলছিলেন বিজয়েতা সিং।

‘বিএসএফ সূত্রগুলো আমাকে এমনও আভাস দিয়েছেন, বেশির ভাগ সময় এরকম ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশীদের সীমান্ত পেরিয়ে যেতে দেন – কারণ তাদের নিয়মমাফিক গ্রেফতার করা হলে দীর্ঘ আইনি জটিলতায় পড়তে হয়’, আরো জানাচ্ছেন তিনি।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও বেশ কিছুদিন ধরেই দাবি করা হচ্ছে, ভারতের তুলনায় তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও এখন অনেক বেশি এবং বাংলাদেশ থেকে লোকজনের কাজের সন্ধানে ভারতে যাওয়ার কোনো কারণই নেই।

আইএমএফ বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাম্প্রতিক এক পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ‘পার ক্যাপিটা জিডিপি’ বা মাথাপিছু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অচিরেই ভারতকেও টপকে যেতে চলেছে।

সূত্র : বিবিসি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com