সিনহা হত্যা পরিকল্পিত

0

কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। টেকনাফে তার ইয়াবাবাণিজ্য ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রকাশ হওয়ার শঙ্কা থেকেই পুলিশের এই কর্মকর্তা গোপন সভা করে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন বলে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) বলা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

এর আগে দুপুরে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। তিনি জানান, সিনহা হত্যা মামলায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন জেলহাজতে এবং একজন পলাতক। এ ঘটনায় শিপ্রা দেবনাথ ও শহিদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের করা একাধিক মামলার অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও চার্জশিটে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি ) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় রামু থানায় শিপ্রা দেবনাথের এবং টেকনাফ থানায় সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের দুটি মাদক মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

এদিকে কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, গত ৩১ জুলাই কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ফলশ্রুতিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনার পরিক্রমায় মোট চারটি মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে এ চার মামলার তদন্তকাজ র‌্যাবের কাছে ন্যস্ত হয়। মূলত টেকনাফ থানায় মাদক সংক্রান্ত মামলা, আরেকটি মামলা পুলিশের কাজে বাধাদান, আরও একটি মামলা রামুতে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে হয়। টেকনাফ থানায় মাদকসংক্রান্ত মামলায় শহিদুল ইসলাম সিফাতকে আসামি করা হয়। আরেকটি মামলায় মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা ও সিফাতের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে করা হয়। আদালতের নির্দেশে র‌্যাব এ তিনটি মামলার তদন্তকাজ পরিচালনা করেছে। ইতিমধ্যে এ তিনটি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট যেটিকে বলা হয়ে থাকে ফাইনাল রিপোর্ট, আদালতের কাছে তদন্তকারী কর্মকর্তা তা উপস্থাপন করেন। তিনটি মামলার ক্ষেত্রেই যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছিল, সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এবং মামলার সপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় আসামিদের দায়মুক্তির জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

র‌্যাবের দাবি, সিনহা হত্যার ঘটনায় করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হচ্ছে তার বড় বোনের মামলা। এ হত্যা মামলা আদালতের নির্দেশে র‌্যাব কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেন।  প্রভাবহীনভাবে ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্তকাজ পরিচালনার জন্য তিনি ৪ মাস ১০ দিন সময় নেন। তদন্ত শেষে আজ (রবিবার) ২৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এ মামলায় মোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ১৫ জনের মধ্যে ৯ জন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ৯ পুলিশ সদস্য, ৩ জন বরখাস্তকৃত এপিবিএন সদস্য ও ৩ জন বেসামরিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার ১৪ জন কারাগারে আছেন। কনস্টেবল সাগর দেব নামে একজন পলাতক। মামলার আসামিদের মধ্যে দুজনের নাম-ঠিকানা সঠিক না থাকায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ এ মামলায় দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর র‌্যাব যে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তা অগণিত মানুষের আস্থা অর্জনেরই একটি প্রতীক বলে দাবি করেন আশিক বিল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে ওই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ১৪ আসামির মধ্যে ১২ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে অনুকম্পিত হয়ে আদালতের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। গ্রেপ্তার দুজন প্রদীপ কুমার দাশ ও রুবেল শর্মা আদালতে জবানবন্দি দেননি। তাদের বাইরে অন্যান্য সব অভিযুক্ত ইতিমধ্যে তাদের দোষ স্বীকার করে আদালতের কাছে অনুকম্পা চেয়ে জবানবন্দি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে মোট ৮৩ জন সাক্ষীকে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আলামত, বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট আমলে নিয়ে ৩০২/১০৯/১১৪/১২০খ/৩৪ দণ্ডবিধি/১২০খ সাধারণ ধারায় চার্জশিট প্রদান করেন তিনি।

আশিক বিল্লাহ আরও বলেন, ‘মামলার মূল যে বিষয়টি তা হলো এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তদন্তকারী কর্মকর্তা স্পষ্টভাবেই আদালতের কাছে তা উপস্থাপন করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত ও আসামিদের জবানবন্দিসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বস্তুনিষ্ঠভাবে নিশ্চিত হন যে, ৩১ জুলাই ৯টা ২৫ মিনিটে বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে যে ঘটনা ঘটেছিল, সেটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ। উনি ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ও ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, সঙ্গে আরও পাঁচজন, এদের মধ্যে পুলিশের সোর্স মো. আইয়াজ ওরফে আয়াজ, মো. নিজাম উদ্দিন ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেন। ইন্সপেক্টর মো. লিয়াকত আলীর মাধ্যমে এসআই নন্দ দুলালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিনজন এপিবিএন সদস্যের সহায়তায় এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে ফাঁড়ির অন্য সদস্যরা আহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করা ও ঘটনাপ্রবাহে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন আজাদ, আবদুল্লাহ আল মামুন। এরা সবাই  হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও  প্রদীপ কুমার দাশকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও পলাতক কনস্টেবল সাগর দেবসহ একাধিক ব্যক্তি ভিকটিমের গাড়ি থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়েছিলেন।’

র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। ৭ জুলাই মেজর সিনহা, শিপ্রা দেবনাথ, শহিদুল ইসলাম সিফাত এবং আরেকজন সহযোগী নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান নেন। মূলত তারা ইউটিউব চ্যানেল লঞ্চ করার জন্য টেকনাফের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে থাকেন। সেখানেই ওসি প্রদীপ সম্পর্কে নির্যাতনের ঘটনা ও ইয়াবা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে ধরনের পরিস্থিতি বিষয়ে সিনহা মো. রাশেদ সম্পূর্ণভাবে জানতে পারেন। এ বিষয়ে ওসি প্রদীপের একটি বক্তব্য নেওয়ার জন্য তারা ক্যামেরা নিয়ে জুলাই মাসের নির্দিষ্ট সময়ে তার কাছে যান। ইতিমধ্যে ওসি প্রদীপ তাদের বিষয়েও বিস্তারিত জেনে ফেলেন। একপর্যায়ে ওসি প্রদীপ তাদের সরাসরি হুমকি দেন এই কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত ওসি প্রদীপের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুটি কারণে ওসি প্রদীপ এই ঘটনা ঘটান। একটি হচ্ছে তার ইয়াবাবাণিজ্য, নিজস্ব অভয়াশ্রম তৈরি করতে পেরেছিলেন টেকনাফে, সেই অভয়াশ্রম  প্রতিবন্ধকতাহীন করা ও মেজর সিনহা যাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেন, সেজন্যই তাদের প্রথমে হুমকি দেন ও পরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটান।’

এসপি মাসুদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ : সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদুর রহমান এ ঘটনা ঘটার পূর্ব থেকেই ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ সম্পর্কে যেসব তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যমে এসেছে এসব বিষয়ে অত্যন্ত উদাসীন ছিলেন। উদাসীন ছিলেন সাংবাদিক ফরিদুর মোস্তফাসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রতি ওসি প্রদীপের নির্যাতনের ঘটনাগুলোতেও; যেসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল। পাশাপাশি সিনহা হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করা, ওই সময় আহত সিনহার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা এসব বিষয় তদন্ত কর্মকর্তা আমলে নেন। পুলিশ সুপারের অপেশাদারিত্ব আচরণসহ সার্বিক ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদের পুরো ঘটনা তদারকিতে ঘাটতি ছিল বলে তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চার্জশিটে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, সোর্স নূরুল আমিন, মো. আয়াজ এবং মো. নিজাম উদ্দিন অর্থাৎ এই পাঁচজন জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে গোপন মিটিং করেন। সেখানে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ও সঙ্গীদের স্পষ্টতই ধ্বংস করার জন্য লিয়াকতকে নির্দেশনা প্রদান করেন ওসি প্রদীপ। আমরা আমাদের অনুসন্ধানে আরও দেখেছি, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সোর্স তিনজনের সঙ্গে আবারও দেখা করেন। দেখা করার পর এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনজনকে নির্দেশ প্রদান করেন। সোর্স তিনজন ও অন্যরা ৬১ ধারায় জবানবন্দিতে তাদের বক্তব্যে এসব তথ্য উল্লেখ করেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘টেকনাফ ছিল ওসি প্রদীপের অভয়ারণ্য। সেখানে তার কথিত রাজ্য ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছি। মূলত তার যে স্বেচ্ছাচারিতা, নিজস্ব ব্যবসাবাণিজ্য এ ধরনের বিষয়ে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ও তার সহযোগীরা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এসব বিষয়ে সব তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে আসার পর তারা এ বিষয়ে তার (ওসি) বক্তব্য চায় এবং এর ফলে ওসি প্রদীপ তাদের হুমকি প্রদান করেন। হুমকি দেওয়ার পর ওসি প্রদীপ ভেবেছিলেন, তারা টেকনাফ থেকে চলে যাবেন। সেটা না করায় মূলত ওসি তাদের ওপরে এক ধরনের প্রতিশোধ বা এক ধরনের আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার রাতে সিনহার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ তার মাকেও ফোন করেছিল। এতকিছুর পরও ওসি প্রদীপের প্রত্যক্ষ মদদে তার সহযোগীদের সহায়তায় এ হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নদিকে প্রবাহের চেষ্টা করা হয়।’

আশিক বিল্লাহ বলেন,  ‘অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন কৃতিত্বপূর্ণ অফিসার। শুধু তাই নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধারও সন্তান তিনি। এর পাশাপাশি সরকারের একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সন্তান তিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিষয়ে বিস্তারিত জানার পরও ওসি প্রদীপ যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অত্যন্ত অপরাধমূলক ও গর্হিত কাজ। এসব বিষয়কে সম্পূর্ণভাবে আমলে নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে সন্নিবেশিত করেছেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাশেদ সিনহা অত্যন্ত বন্ধুবৎসল ছিলেন। সামরিক জীবনের বাইরে খুবই সদালাপী এবং অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছি, সিনহা যেখানেই যান, সেখানেই নতুন বন্ধু তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন। ক্যামেরা ও ইলেকট্রনিকস সরঞ্জামাদিসহ তারা (সিনহা ও তার সহযোগীরা) যখন থানায় যান তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে সম্ভব হয়নি। তবে আসামিদের বয়ানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সম্পর্কে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম তার ৩২ বছরের চাকরি জীবনে অসংখ্য চাঞ্চল্যকর হত্যা, অসংখ্য চাঞ্চল্যকর অপরাধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে পুলিশে তার একটি অনবদ্য সুনাম আছে। এ চার্জশিটে শুধু আসামিদের বয়ানই নয়, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত, প্রত্যক্ষদর্শী, সব সম্ভাব্য বিষয়কে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।’

আসামিপক্ষের রিভিউ মামলা খারিজ : সিনহা হত্যা মামলাটি অবৈধ দাবি করে তা বাতিল চেয়ে প্রধান আসামি পুলিশের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর আইনজীবীর করা রিভিশন আবেদনটি গতকাল দুপুরে খারিজ করে দিয়েছে আদালত। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষে গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় আবেদনটি খারিজ করে দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

পরিদর্শক লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দীন জানিয়েছেন, ‘মামলা খারিজ করে দেওয়ায় তারা সন্তুষ্ট নয়। এজন্য পরবর্তী সময়ে তারা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।’

সিনহা হত্যার ঘটনায় তার বোনের করা মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে গত ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে লিয়াকতের আইনজীবী এ আবেদনটি করেন। ওইদিন আদালতে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ওইদিন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে না পারায় আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে ১০ নভেম্বর। ওই নির্ধারিত দিনে (১০ নভেম্বর) আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলাটির শুনানির দিন আবারও পিছিয়ে যায়। ওইদিন আদালত মামলাটির শুনানির জন্য ১৩ ডিসেম্বর (গতকাল) দিন ধার্য করে। গতকাল শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেয়।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট তার বোন আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেয় র‌্যাবকে। এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত ও সাবেক ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে এ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত এপিবিএনের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এছাড়া একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানার সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও। গ্রেপ্তার ১৪ আসামিকে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com