উত্তম মৃত্যুর আলামত

0

জন্মালেই মৃত্যু অনিবার্য। যত মাখলুকাত আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জিন জাতির প্রত্যেকের হিসাব নিবেন। সেক্ষেত্রে জীবনের অন্তিম সময়টা যেন ভালো হয় অর্থাৎ যেন উত্তম মৃত্যু হয়, সে কামনা সবাইর।

তবে কে কিভাবে বা কার মৃত্যু কিভাবে হবে আল্লাহ ব্যতিত কেউ জানে না। একজন মুসলিম হিসেবে কোন ব্যক্তির মৃত্যু কি ঈমানের সহিত হয়েছে নাকি সে বেঈমান হয়ে মৃত্যুবরণ করলো আল্লাহ ব্যতিত কেউ জানে না। তবে মৃত্যুর আগ মূর্হুর্তের কিছু কিছু আলামত দেখে উত্তম মৃত্যুর ধারণা করা যায়।

একজন মুমিন মাত্রই ভালো বা উত্তম মৃত্যুর আশা করে। ভালো মৃত্যু মানে পরকালে শান্তি পাবে। এছাড়া মৃত্যুর পূর্বে পরাক্রমশালী আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা যায়, পাপ হতে তওবা করা যায়, নেকীর কাজ বেশি বেশি করা যায়।  

আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে (ভালো) কাজে লাগান।, সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিভাবে আল্লাহ পাক বান্দাকে (ভালো) কাজে লাগান? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘মৃত্যুর পূর্বে তাকে ভালো কাজ করার তাওফিক দেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১৬২৫, জামে তিরমিযি, হাদীস ২১৪২)

আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণিকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।’ (সুরা আলে ইমরান, ১৮৫)

এই বড় সত্যটিতে সবাই যেন ঈমানের সহিত মৃত্যুবরণ করতে পারে সেই দোয়া আল্লাহর কাছে বান্দা করেন। তবে ভলো মৃত্যুর কিছু লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু লক্ষণ মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারে। আবার কিছু কিছু লক্ষণ অন্য মানুষও বুঝতে পারে।

মৃত্যুকালে বান্দার নিকট তার ভালো মৃত্যুর যে আলামত প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে- বান্দাকে মহিমান্বিত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়।

পবিত্র কোনআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতপরঃ তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়, এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না, এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।’ (সুরা ফুসসিলত, আয়াত ৩০)

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালোবাসে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালোবাসেন। যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর সাক্ষাত প্রিয়, আল্লাহর নিকটও তার সাক্ষাতও প্রিয়।’ আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি কি মৃত্যুর  কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? আমরা তো সবাই মৃত্যুকে অপছন্দ করি।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘না, সেটা না। মুমিন বান্দাকে যখন আল্লাহর রহমত, তার সন্তুষ্টি, তার জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে ভালোবাসেন। আর কাফের বান্দাকে যখন আল্লাহ শাস্তি, তার অসন্তুষ্টির সংবাদ দেয়া হয়, তখন, সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।’ (মুত্তাফাকুন আলাইহি-সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

আলেম-উলামাগণ পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ভালো মৃত্যুর কিছু লক্ষণের কথা বলেছেন।

মৃত্যুর সময় ‘কালিমা’ পাঠ করতে পারা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১১৬)

মৃত্যুর সময় কপালে ঘাম বের হওয়া
বুরাইদা ইবনে হাসিব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘মুমিন কপালের ঘাম নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।’
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৫১৩, জামে তিরমিযি, হাদীস ৯৮০, সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৮২৮)

জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার রাতে) বা দিনে মৃত্যুবরণ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করেন, দয়াময় আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে নাজাত দেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫৪৬, জামে তিরমিযি, হাদীস ১০৭৪)

মহিমান্বিত আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯)

প্লেগ রোগে মারা যাওয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্লেগ রোগে মৃত্যু প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য শাহাদাত।’ (মুত্তাফাকুন আলাইহি- সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

যে কোন পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করবে সে শহীদ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদীস ১৯১৫)

উপরের লক্ষণগুলো থেকে বুঝা যায় কোনটি ভালো মৃত্যু আর কোনটি খারাপ মৃত্যু। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ঈমানের সহিত মৃত্যুবরণ করার তাওফিক দান করেন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com