বিমানবন্দরে হাউমাউ করে কান্না সুমির স্বামীর
সৌদি আরবে নির্যাতিত সেই নারীকর্মী সুমি আক্তার দেশে ফিরেছেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় এয়ার এরাবিয়ার জি৯-৫১৭ নম্বর ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি।
সুমির আসার খবরে স্বামী নূরুল ইসলাম সকালে বিমানবন্দরে আসেন। এসময় তার সঙ্গে আগের ঘরের দুই সন্তানকেও দেখা গেছে।
এদিকে সুমির জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ এ অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তার স্বামী নূরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন নূরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সুমি দেশে ফেরায় খুব ভালো লাগছে, তেমনি কষ্টও লাগছে। কারণ ভাগ্য বদলের আশায় সৌদি গিয়েছিল সুমি, এখন খালি হাতে ফিরছে।
নূরুল ইসলাম আরও বলেন, দালালরা নার্স ভিসার কথা বলে সুমিকে সৌদি পাঠায়। পরে সুমি গিয়ে দেখেন সেখানে গৃহকর্মীর কাজ।
এদিকে বিমানবন্দরে পৌঁছার পর টার্মিনাল-১ দিয়ে গণমাধ্যমের অগোচরেই সুমিকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে সুমির স্বামী নূরুল ইসলাম ও গণমাধ্যমকর্মীরা কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।
জানা গেছে, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় নিজ বাড়িতে পৌঁছার পর আগে সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে দেখা করবেন সুমি।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন সৌদি প্রবাসী নারী সুমি আক্তার।
সুমি আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নূরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাব।’
সুমির পরিবার জানায়, ২০১৬ সালে নুরুল ইসলাম সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। সুমি পঞ্চগড় জেলার বোদা সদর থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী আগেও বিয়ে করেছেন।
বাধ্য হয়ে সুমি সতীনের সংসার শুরু করেন। বিয়ের দেড় বছর পর সুমির সংসারেও একজন সন্তান জন্মায়। সতীনের বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুমি। এ জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি।
তখন বিনামূল্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেটি হাতছাড়া করতে চাননি সুমি। দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে বিনামূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে পাড়ি জমান নিম্নবিত্ত ঘরের এই গৃহবধূ।
কিন্তু দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানতেন না সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।
আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, চলিত বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি।
এর পর গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস (এসভি) ৮০৫ যোগে সৌদি যান সুমি। সেখানে যাওয়ার পর সবসময় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ওপর বয়ে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা দেন।