প্রসঙ্গ করোনা

0

করোনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ শঙ্কিত, আতঙ্কিত এবং হতাশ। করোনা শুধু বাংলাদেশকে নয়, সারা বিশ্বকে ভয়াবহভাবে আক্রমণ করেছে। করোনাকে কোনও কোনও দেশ নিয়ন্ত্রণ করেছে, আবার কোনও কোনও দেশ তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আমাদের দেশের মতো বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশ করোনাকে অবহেলা করেছে অথবা তাকে বুঝতে চায়নি। পরিণতিতে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আমেরিকা, ইউরোপ, ব্রাজিল কিংবা ভারত, এই দেশগুলোর কথা উল্লেখ করে অনেক কথা বলা যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে করোনা এই দেশগুলোকেও নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। এমনকি এখনও নাস্তানাবুদ করে চলেছে।

করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনও ওষুধ বাজারে আসেনি। যদিও রাশিয়া করোনা ভ্যাকসিনের নামে একটি ওষুধ উৎপাদনের জন্য সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়েছে। এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মিস্টার পুতিন আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য ওষুধটা তার কন্যার ওপর পুস করেছেন। তার পরেও আমেরিকা-ইউরোপ-সহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এই ভ্যাকসিনকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। কিন্তু এরপরও মানুষ করোনার সঙ্গে লড়াই করছে।

করোনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ শুরু থেকেই বিপদের মধ্যে আছে। গত মার্চ মাস থেকে করোনা প্রসঙ্গে সরকারের উতলা ভাব থাকলেও বর্তমানে সরকারের কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বেশকিছু হতাশার কথাই বলেছেন। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী বলেন, এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মহলের ভাবনাটা কী, জানতে পারলে ভালো হতো। সরকার সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের বেশকিছু কর্মকর্তা সচিব মহাপরিচালকসহ অনেককেই বিভিন্ন জায়গায় বদলি করেছেন। বদলির কারণ হিসেবে মানুষ এটাই মনে করেছে, সরকার উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে চায়। কিন্তু বাস্তবে কি তার কোনও প্রতিফলন আছে?

এই প্রশ্নটা কেন আসছে? প্রশ্নটা আসছে এজন্য যে, সরকারের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী অতি সম্প্রতি বলেছেন, হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ এর সেবার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হবে। তিনি এ-ও বলেছেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমে আসছে’। সত্যি কি তাই! এই বক্তব্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে।

পত্রপত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় যে হারে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে আছে ভারত। তারপর পাকিস্তান। তৃতীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ। একথাও বলা হচ্ছে যেসব দেশগুলোর মধ্যে সংক্রামক অধিক মাত্রায় রূপ নিয়েছে তারমধ্যে সবথেকে কম পরীক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশ।

সরকারের উদ্যোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলুক না কেন, এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কর্তৃক গঠিত সংক্রামক বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য যেসব বিশেষজ্ঞরা আছে তারা কিন্তু প্রায় সবাই একবাক্যে বলেছেন, করোনাকে হালকা ভাবে নেয়া ঠিক হবে না। কিন্তু ঘরের বাইরে গেলে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তাতে কিন্তু মনে হচ্ছে, শুধু সরকার না, দেশের জনগণও কেমন যেন ‘গাছাড়া ভাব’ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। অনেকেই বলছেন এগুলো ভালো লক্ষণ না। এতে বিপদ বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে মিডিয়া এবং অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে মানুষকে সতর্ক করলেও মানুষ কি তা মানছে? 

এক্ষেত্রে বলতেই হবে মানুষের যে সচেতনতা থাকার দরকার ছিল দেখা যাচ্ছে না। ভ্যাকসিন পাওয়ার আগে তিনটি জিনিস আমাদের মানতেই হবে, বলা যায় করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য ওই তিনটি জিনিসই এখন আমাদের একমাত্র ওষুধ। ১. মাস্ক পরা, ২. বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং ৩. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এগুলো কি আমরা যথাযথভাবে মানতে পারছি? এক কথায় বলা যায়, ‘না’।

আমাদের সামনে কি আছে এটা বলে বোঝানো কঠিন। কেননা গত আট/ন’ মাসে বাংলাদেশের আপামর জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা সত্যিকার অর্থে সংকটজনক। একদিকে করোনা অন্যদিকে বড় ধরনের বন্যা। সাধারণ আয়ের মানুষদের জন্য বড় ধরনের দুর্গতি ডেকে এনেছে। করোনার জন্য ঘরে থাকা যেমন দরকার ঠিক তেমনই পেট চালানোর জন্য অর্থেরও প্রয়োজন। সেটা কিভাবে আসবে? জলে কুমির ভেংগায় বাঘ- এ অবস্থা দেশের মানুষের জন্য। কী করবে দেশের মানুষ।

এই ভয়াবহ বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করাই সবথেকে বড় কাজ। এক্ষেত্রে সরকার, সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সবাইকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভাবনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে হয়তো আমরা পথ খুঁজে পাবো।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com