ইরানি পরমাণুবিজ্ঞানী হত্যার গোপন মিশন

0

গত ২৭ নভেম্বর ইরানি পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার মিশনে অংশ নিয়েছিল ৬২ জনের একটি দল। ইরানের সাংবাদিক মোহামাদ আহওয়াজের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফাঁস হয়েছে এই হত্যাকা-ের আদ্যোপান্ত। ফাখরিজাদেহ প্রথম নন, তার আগে আরও বেশ কয়েকজন ইরানি পরমাণুবিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। লিখেছেন পরাগ মাঝি

হত্যাকারীদের দুই দল

গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ইরানের রাজধানী তেহরানের নিকটবর্তী আবসার্দ শহরে হত্যাকা-ের শিকার হন দেশটির পরমাণুবিজ্ঞানী ও পারমাণবিক প্রকল্পের প্রধান মোহসেন ফাখরিজাদেহ। ইরান দাবি করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে শত্রু দেশ ইসরায়েল। এ বিষয়ে সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনের বেশ কিছু তথ্য ফাঁস করেছেন ইরানি সাংবাদিক মোহামাদ আহওয়াজে।

ইরানি পরমাণু প্রকল্পের জনক বলা হতো ফাখরিজাদেহকে। ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তেহরান থেকে ৫০ মাইল পূর্বের শহর আবসার্দে এই পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যার মিশনে অংশ নেয় ৬২ জনের একটি দল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল মিশনে অংশ নেয় ১২ জন আততায়ী। আর বাকি ৫০ সদস্য ছিল মূল মিশনে অংশ নেওয়া আততায়ীদের নানা ধরনের সহযোগিতার কাজে।

ইরানি সাংবাদিক মোহামাদ আহওয়াজে ফাখরিজাদেহ হত্যার মুহূর্তটিও বর্ণনা করেছেন। আহওয়াজে দাবি করেছেন, ইরানি কর্র্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি এসব তথ্য পেয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে দায়ী করা হয়েছে। ফলে ইরান ও ইসরায়েলি কর্র্তৃপক্ষের মধ্যে এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরানিরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ করেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ঘাতকদের শাস্তি দেওয়া ছাড়াও যারা এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে, এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি খামেনি।

ফাখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জন ব্রেনন বলেছেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সংঘাতের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এই হত্যাকাণ্ডকে তিনি ‘বেআইনি’ এবং ‘বেপরোয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে সিআইএর পরিচালক ছিলেন ব্রেনন। ফাখরিজাদেহকে কারা হত্যা করেছে সে বিষয়ে কোনো কিছু না বললেও ব্রেনন মনে করেন, এটি নতুন করে আঞ্চলিক সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাবে।

যেভাবে সংঘটিত হয় হত্যাকান্ড

আহওয়াজে দাবি করেছেন, আবসার্দ শহরে প্রবেশের পথে একটি গোলচত্বরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল আততায়ীরা। গোলচক্কর থেকে শহরে প্রবেশের মুখেই ঘাপটি মেরে ছিল তারা। ঘাতক দলটির একটি অংশ ফাখরিজাদেহকে অনুসরণ করছিল। তারা জানত যে, শুক্রবার তেহরান থেকে আবসার্দের উদ্দেশে যাবেন নামকরা ওই পরমাণুবিজ্ঞানী। আবসার্দ শহরে প্রায় ১ লাখ লোকের বসবাস। তেহরানের অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনেকেই এই শহরে সেকেন্ড হোম বানিয়ে বসবাস করেন। ৫৯ বছর বয়সী ফাখরিজাদেহরও একটি বাড়ি ছিল আবসার্দে।

ফাঁস হওয়া তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের মূল মিশনে অংশ নেওয়া ১২ জন ছিল উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং বিদেশি গোয়েন্দারা তাদের সহযোগিতা করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আততায়ীরা ইরানের নাগরিক নাকি অন্য কোনো দেশের সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাননি আহওয়াজে।

জানা গেছে, যেখানে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে সেখানে আগে থেকেই ফকিরজাদেহর গাড়ি বহরের জন্য অপেক্ষা করছিল চার সিটের একটি হুন্দাই সান্তা ফে মডেলের গাড়ি ও চারটি মোটরসাইকেল। রিমোটকন্ট্রোল মেশিনগান ছাড়াও ঘাতকদের মধ্যে দুজন স্নাইপারও ছিল। আর ছিল একটি নিশান পিকআপ। তিনটি বুলেটপ্রুফ গাড়িসহ ফাখরিজাদেহর বহর যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তার আধঘণ্টা আগেই ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় আরেকটি দল। ফাখরিজাদেহর বহরের প্রথম গাড়িটি গোলচত্বর পার হওয়ার সময়ও আততায়ীরা তাদের অস্ত্র তাক করে নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিল। তৃতীয় গাড়ি গোলচত্বর অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় তাদের আক্রমণ। এক্ষেত্রে প্রথমেই বুলেটপ্রুফ গাড়ি বহরটির দেড়শো মিটার দূরে থাকা নিশান পিকআপটিতে বোমা বিস্ফোরিত হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের কাছে থাকা বৈদ্যুতিক পিলারগুলোসহ একটি ট্রান্সমিটারও ধ্বংস হয়ে যায়। আর বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ ৩০০ মিটার দূরেও উড়ে গিয়েছিল। তিনটি গাড়ির মধ্যে মাঝখানের গাড়িটিতে ছিলেন ফাখরিজাদেহ। বিস্ফোরণের পরই তার গাড়িটি উদ্দেশ করে দুই স্নাইপারসহ আততায়ীরা গুলি চালাতে শুরু করে। এ সময় ফকিরজাদেহর সঙ্গে থাকা বডিগার্ডরাও পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করে। জানা গেছে, গাড়িতে গুলির আছড়ে পড়ার আওয়াজ শুনে ঘটনাটা কী তা দেখার জন্য নিজের গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ফাখরিজাদেহ। হত্যার মিশনে থাকা দলটি এসময় তাতে উদ্দেশ করে গুলি চালাতে শুরু করে। ফাখরিজাদেহর শরীরে অন্তত তিনটি গুলি বিদ্ধ হয় এসময়।

মিশন সফল করে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই হত্যাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে উধাও হয়ে যায়। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকায় যারা বসবাস করেন তারাও দাবি করেছেন যে, প্রথমেই তারা একটি প্রচ- বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান, এরপরই মেশিনগান থেকে এলোপাতাড়ি গুলির আওয়াজ শোনেন তারা।

ফাখরিজাদেহর নিরাপত্তায় যারা ছিলেন তারা বেশ ভালো করেই জানতেন যে, তিনি ছিলেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ঘটনার পরই পুলিশের একটি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে উড়ে যায়। এই হেলিকপ্টারে করেই ফাখরিজাদেহকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পর তারা অবাক হয়ে দেখতে পান কোনো কারণ ছাড়াই সেখানে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আততায়ী দলের সদস্যরাই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। পরে ফাখরিজাদেহসহ আহতদেরকে তাড়াহুড়ো করে তেহরানে নিয়ে যাওয়া হয়। ইরানের সময় অনুযায়ী সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ঘোষণা করেন, ‘ইরানের একজন বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের সহযোগিতায় এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।’

ওই ঘটনায় ফাখরিজাদেহসহ তার সঙ্গে থাকা আরও বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন বলেও তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়।

হত্যাকান্ডের পরদিন শনিবার সকালে কফিনে মোড়ানো ফাখরিজাদেহর লাশ রাখা হয় তেহরানের একটি মসজিদে। ইরানের প্রধান বিচারপতি ইব্রাহিম রাইজি তার জানাজা পড়ান।

ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাদের পরমানু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে ইসরায়েল। এর আগে ২০১৮ সালে একটি সম্মেলনে ফাখরিজাদেহর ছবি দেখিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘এই নামটির কথা স্মরণ রাখবেন।’

হত্যাকাণ্ডের পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ফাখরিজাদেহকে একজন প্রখ্যাত ও বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খামেনির কথাই শেষ কথা বলে বিবেচিত হয় ইরানে। যে কোনো মূল্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের দিনই জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুতেরেস ও নিরাপত্তা কাউন্সিলে দেওয়া একটি চিঠিতে ইরানি কূটনীতিক মজিদ তাখত রাভনচি লিখেন, ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যে কোনো অভিযানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নাগরিকদের সুরক্ষায় যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের অধিকার রয়েছে।’

অভিযুক্ত মোসাদ

বেশ কয়েক বছর ধরেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে হুমকি-ধামকির মাধ্যমে এক ধরনের ছায়াযুদ্ধ চলমান রয়েছে। ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহপ্রবণ ইসরায়েল। যে কোনো মূল্যে তারা ইরানকে দমিয়ে রাখতে চায়। ধারণা করা হয়, গুপ্তহত্যাসহ ইরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে ইসরায়েল। আর এসব অভিযান এতই নিখুঁত যে, সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করারও কোনো উপায় থাকে না।

ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী ফাখরিজাদেহকে এমন এক সময় হত্যা করা হয়েছে যখন দেশটির আরেকজন পরমাণুবিজ্ঞানী মজিদ শাহরিয়ারির দশম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর একটি গাড়ি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মজিদ শাহরিয়ারিকে।

বিগত বছরগুলোতে ফিলিস্তিনে হামাসের নেতাদের ওপরও কয়েকটি নিখুঁত অভিযান চালানোর অভিযোগ রয়েছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের বিরুদ্ধে। ইরানের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে পরমাণুবিজ্ঞানীরাও রয়েছেন তাদের হিটলিস্টে। মোসাদের একটি বিশেষ ইউনিটের নাম- ‘কিডন’। বিদেশের মাটিতে নিখুঁতভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য এই ইউনিটের জুড়ি মেলা ভার। এই ইউনিটকে আততায়ীদের অভিজাত দল হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তবে তারা কীভাবে তাদের মিশন পরিচালনা করে তা অজানা। বেশিরভাগ মিশনেই তারা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে উধাও হওয়ার সময় যাবতীয় সব প্রমাণও তারা মুছে দিয়ে যায়।

কাকে হত্যা করা হবে তা এক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ করে মোসাদ। মূলত এই গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের অনুমোদনের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্যবস্তু ঠিক করা হয়। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীরও একটি ভূমিকা রয়েছে।

ফাখরিজাদেহকে হত্যার আগে ইরানের যেসব ব্যক্তিত্ব ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে মোসাদ হত্যা করেছে বলে অনুমান করা হয় তার মধ্যে হাসান শাতেরি নামটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে এক বিমান হামলায় হত্যা করা হয়। ইরানের রিভ্যুলিউশনারি গার্ডের মেজর জেনারেল ছিলেন তিনি। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি ইরানের তেহরানেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন দেশটির পরমাণুবিজ্ঞানী মোস্তফা আহমাদি রোশান। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানী তেহরানের একটি এলাকায় অতর্কিত আক্রমণ ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরে হত্যাকারীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে পালিয়ে যায়।

২০১১ সালের ১২ নভেম্বর হত্যা করা হয়েছিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের জনক জেনারেল হাসান তেহরানি মগাদ্দামকে। রাজধানী তেহরানে একটি বিস্ফোরণের ফলে ১৭ জন রিভ্যুলিউশনারি গার্ডের সদস্যসহ নিহত হয়েছিলেন মগাদ্দাম। প্রাথমিকভাবে এটিকে একটি দুর্ঘটনা বলা হলেও পরে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মোসাদের পরিকল্পনায়ই ওই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এর আগে ২০১১ সালের ২৩ জুলাই হত্যাকান্ডের শিকার হন ইরানের আরেক পরমাণুবিজ্ঞানী দারিউশ রেজায়েইনেজাদ। রাজধানী তেহরানে তাকে হত্যার মিশনেও মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছিল হত্যাকারীরা।

২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি তেহরানে নিজের বাড়ির সামনেই গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল ইরানের পদার্থবিদ ও পরমাণুবিজ্ঞানী মাসুদ আলি মোহাম্মাদিকে। পরে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত একজনকে আদালতে উপস্থাপন করলে তিনি দাবি করেন, আলি মোহম্মাদিকে হত্যা করার জন্য ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাকে ভাড়া করেছিল।

প্রতিশোধ নেবে ইরান

মোহসেন ফাখরিজাদেহর হত্যাকাণ্ড নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ইরানের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও নেতারাও। ২০২১ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও আয়াতুল্লা আলি খামেনির উপদেষ্টা হোসেইন দেহঘান। তিনিও দাবি করেছেন, ফাখরিজাদেহকে হত্যার পেছনে ইসরায়েলেরই হাত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী রাজনৈতিক মিত্রের শেষ দিনগুলোতে ইহুদিরা ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোসহ একটি যুদ্ধ শুরু করার পাঁয়তারা করছে।’ বক্তব্যে ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকা শেষ দিনগুলোকেই ইঙ্গিত করেছেন দেহঘান। আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন-তারিখ নির্ধারিত আছে।

অভিযোগ আছে, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কয়েক সপ্তাহ আগে ইরানে বিমান হামলা চালানোর সম্ভাব্য পরিকল্পনা রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কারণ উত্তেজক এই সময়ে পারসিয়ান উপকূলে আগে থেকেই মোতায়েন রাখা একটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছে আরেকটি মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ নিমিৎজ। ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে সহযোগিতা করার জন্যই এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

হোসেইন দেহঘান বলেন, ‘শহীদদের হত্যাকারীদের ওপর আমরা বজ্রের মতো আঘাত হানব। তারা তাদের অ্যাকশনের জন্য আফসোস করতে বাধ্য হবে।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যথাসময়েই ফাখরিজাদেহ হত্যার বদলা নেওয়া হবে।’ আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে সুর মিলিয়ে রুহানি আরও বলেন, ‘ফাখরিজাদেহর মৃত্যু ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পকে থামাতে পারবে না।’

ফাখরিজাদেহ হত্যার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে ইসরায়েলকে দায়ী করা হলেও প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকে দেশটি।

বিগত সময়ে ইরানের বহুল আলোচিত পরমাণু প্রকল্প ‘আমাদ’-এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোহসেন ফাখরিজাদেহ। পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হচ্ছে এমন অভিযোগে শুরু থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছিল ইসরায়েলসহ কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্র। যদিও ইরান দাবি করে আসছিল- তাদের পারমাণবিক প্রকল্প শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের উদ্দেশে।

নিহত মোহসেন ফাখরিজাদেহকে অনেকেই ইরানের পারমাণবিক কাশেম সুলাইমানি বলে আখ্যায়িত করেন। ইরানের ইসলামিক রিভ্যুলিউশনারি গার্ডের প্রধান ছিলেন কাশেম সুলাইমানি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইরাকে একটি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com