ট্রাম্পের নতুন চাল

0

পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ডে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা ছাড়ার আগে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দ্বন্দ্ব দেখা যেতে পারে। গত শুক্রবার তেহরানের কাছে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্ড এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ফখরিজাদেহ। পরে তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান। ফখরিজাদেহকে হত্যার জন্য এরই মধ্যে ইসরাইলকে দায়ী করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর এক বক্তব্যে উঠে এসেছিল ফখরিজাদেহর নাম। তাকে হত্যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আশীর্বাদ ছিল বলেও ইঙ্গিত দেয় ইরান। রয়টার্স/বিবিসি।

রুহানি বলেন, ‘আবারো একবার দখলদার ইহুদিদের ভাড়াটে খুনিদের রক্তাক্ত হাতের সাথে শয়তানি হাত মেলাল বৈশ্বিক ঔদ্ধত্য শক্তি।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেঘান বলেন, ‘এই হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর বজ্রের মতো আঘাত হানা হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইহুদিবাদীরা তাদের রাজনৈতিক মিত্রের (ট্রাম্প) শেষ দিনগুলোতে ইরানকে আরো চাপে ফেলতে চায় এবং পুরোপুরি যুদ্ধ লাগিয়ে দিতে চায়।’

পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ মুহূর্তে এমন হুমকি এলো ইরানের পক্ষ থেকে। ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় সবার সাথে বৈরিতা অবসানে বারাক ওবামা প্রশাসনের নীতিতে ফেরত যাওয়া কঠিন হবে বাইডেনের জন্য। নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে জানুয়ারিতে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত চার বছর ইরানের ওপর খড়গহস্ত ছিলেন। তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ইরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকেন। এরই মধ্যে বিদায়ী মার্কিন প্রশাসন দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দ্বিগুণ করেছে।

বাইডেন সে অবস্থান থেকে সরে আসার অঙ্গীকার করেন। ইরানও ঘোষণা দেয়, কোনো আলোচনা ও শর্ত ছাড়াই দেশটি নিজ থেকেই পরমাণু চুক্তির অঙ্গীকারে ফিরে আসবে। কিন্তু ফখরিজাদেহ হত্যার ঘটনায় শুরুতেই বাইডেন প্রশাসন নতুন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে পাওয়া বার্তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের সাথে ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কমিটি, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল বৈঠক ডেকেছে।

ফখরিজাদেহ ছিলেন সর্বাধিক খ্যাতিমান ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অভিজাত ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কোরের সিনিয়র অফিসার। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা তাকে ‘ইরানি বোমার জনক’ হিসেবে অভিহিত করতেন। এ মাসেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ইরানে হামলা চালানোর পথ খুঁজছিলেন ট্রাম্প। যদিও তার উপদেষ্টারা এতে সায় দেননি।

পরবর্তীতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে এক বৈঠকে যোগ দেন নেতানিয়াহু, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান। এ বৈঠকের কয়েক দিন পর ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ড ঘটল। এর আগে জানুয়ারিতে বাগদাদে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিশোধের অঙ্গীকার ইরানের : এ দিকে ইরান দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, ফখরিজাদেহ ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির পেছনে ছিলেন। ইরান সবসময়ই বলে আসছে, এই পারমাণবিক কর্মসূচি তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি একটি টুইট বার্তায় বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এক বিশিষ্ট ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে।’

জাতিসঙ্ঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভঞ্চি বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা এ অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য করা হয়েছে। জাভাদ জারিফ হামলার জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করে বলেন, ‘ইসরাইলের এতে জড়িত থাকার গুরুতর ইঙ্গিত’ রয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মেহাসেন ফখরিজাদেহর নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

হত্যার ব্যাপারে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এই হত্যার খবর এলো। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক প্রধান জন ব্রেনান বলেছেন, ওই বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ড ছিল একই সাথে ‘অপরাধমূলক’ এবং ‘অত্যন্ত বেপরোয়া’ কাজ, যা ওই অঞ্চলে সঙ্ঘাতের ঝুঁকি তৈরি করেছে। একাধিক টুইটে তিনি বলেন, ফখরিজাদেহর মৃত্যু ‘নতুন করে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব উসকে দেয়ার পাশাপাশি প্রাণঘাতী লড়াইয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।’

ব্রেনান আরো বলেন, ‘তিনি জানেন না কোনো বিদেশী সরকার ফখরিজাদেহকে হত্যার অনুমতি দিয়েছিল কি না।’ তার ব্যাপারে পশ্চিমা সুরক্ষা সূত্রগুলো দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসছে যে, ফখরিজাদেহ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সহায়ক একজন ব্যক্তি। ২০১৮ সালে ইসরাইল থেকে পাওয়া গোপন নথি অনুসারে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একটি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ইসরাইল জড়িত : নিউ ইয়র্ক টাইমস

এ দিকে পদার্থবিজ্ঞানি মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার ঘটনায় ইসরাইল জড়িত বলে তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’। আমেরিকার তিন কর্মকর্তার মধ্যে দু’জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা রয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ‘এই হত্যাকাণ্ডের কথা আমেরিকা আগে থেকে কতটুকু জানত তা পরিষ্কার নয়, তবে ইসরাইল ও আমেরিকা বিভিন্ন বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে থাকে।’ হত্যাকাণ্ডের সাথে ইসরাইল জড়িত বলে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ প্রথম থেকেই জোরালো সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

বহু বছর ধরে হত্যার চেষ্টা : এপির খবরে বলা হয় মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যায় ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত থাকার বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তার অফিসিয়াল টুইটার পেজে একজন ইসরাইলি সাংবাদিকের একটি পোস্ট রিটুইট করে ইরানের বিজ্ঞানী হত্যায় মোসাদের জড়িত থাকার বিষয়টি ইঙ্গিত করেন।

সূত্র : বিবিসি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com