দায়িত্ব ত্যাগের আগে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবেন ট্রাম্প!

0

আমেরিকানরা ‘স্থায়ী যুদ্ধের জাতি নয়,’ ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার প্রতিরক্ষা দফতরে তার সূচনা মেমোতে কথাটি লিখেছেন।

তিনি তাতে আরো বলেছেন, সব যুদ্ধ অবশ্যই শেষ হতে হবে। যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রয়োজন আপস ও অংশীদারিত্ব। আমাদের অবশ্যই চ্যালেঞ্জে মোকাবেলা করতে হবে, আমরা তা সর্বাত্মকভাবে তা করব। এখন সময় এসেছে বাড়িতে ফেরার।

মিলার সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি, তিনি কোন যুদ্ধের সমাপ্তি দেখছেন।ওয়াশিংটন এখন আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও আফ্রিকার আরো কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করতে থাকায় বিকল্প রয়েছে অনেক।
কিন্তু তবুও খুব সম্ভবত ওই যুদ্ধটির নাম আফগানিস্তান। এই যুদ্ধ প্রসঙ্গেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রিসমাসের আগেই সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করতে চান বলে জানিয়েছেন। ওই টাইমলাইন এখনো সম্ভব। আর মিলার তার মেয়াদে এই কাজটি করতে চান বলেই মনে হচ্ছে।

ট্রাম্প নিজে প্রায়ই মত বদলান এবং এই বিষয় থেকে অনেকবারই সরে গেছেন। কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে, তিনি এই পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রায় অটল আছেন। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের তার অঙ্গিকারের ব্যাপারে আমেরিকানদের পক্ষ থেকে তিনি বিপুল সমর্থন পেয়েছেন। এমনকি খুব সম্ভবত একে পুঁজি করেই তিনি ২০২৪ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করার চেষ্টা করবেন।

অবশ্য সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে কিছু সমস্যাও আছে। বর্তমান টাইমলাইন অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। অর্থাৎ ট্রাম্প ক্ষমতা ত্যাগ করার মাত্র চার মাসের মধ্যেই তা করতে হবে। শোনা যাচ্ছে, পেন্টাগন আফগানিস্তানে তাদের কমান্ডারদেরকে একটি ওয়ার্নিং অর্ডার ইস্যু করেছে। তাতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সৈন্য সংখ্যা ৪,৫০০ থেকে প্রায় ২,৫০০-এ নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সর্বোত্তম তহবিল পুষ্ট সেনাবাহিনীর পক্ষে ওই সময়সীমার কয়েক মাস আগে তথা ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার আগে নিশ্চিতভাবেই পুরোপুরি প্রত্যাহার করা সম্ভব।

প্রেসিডেন্ট ও জনগণ যদি মিলারের নেতৃত্বে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার কামনা করে ও সামরিক বাহিনী তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়, তবে সমস্যা কোথায় হবে? প্রধান বাধা হতে পারে ওয়াশিংটন ফরেন পলিসি এস্টাবলিশমেন্টের। তারাই হয়তো হুমকি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাবে, সুবিধা প্রদর্শন করবে অতিরঞ্জিতভাবে, আর আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের আর্থিক সুবিধাগুলো গোপন করবে। এমনই মনে করছেন হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক স্টিফেন ওয়াল্ট। সম্প্রতি তিনি ফরেন পলিসিতে বলেছেন, এস্টাবলিশমেন্ট আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের বিরোধিতা করবে।
অথচ আগামী দুই মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহার সম্পন্ন করা খুব কঠিন কাজ হবে না। প্রায় ২০ বছর ধরে যুদ্ধ করার পর প্রায় সবকিছুই হয়ে পড়েছে স্থবির। তাছাড়া অমানবিক নানা ঘটনা ও দুর্নীতি তো আছেই।

মিলার নিজেও তা বোঝেন। তিনি বলেন, কয়েক প্রজন্ম ধরে যুদ্ধ করার জন্য আফগানিস্তানে আমেরিকা যায়নি। জুলাই মাসে সিনেট ক মিটিকে তিনি বলেছিলেন, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, এই যুদ্ধকে আমাদের সন্তানের লড়াই করার জন্য ফেলে রাখা হবে দায়িত্বহীন কাজ।

পরবর্তী প্রশাসনের জন্য এই যুদ্ধকে ফেলে রাখা হবে মিলার ও ট্রাম্প প্রশাসনের জন্যও দায়িত্বহীন কাজ। আর নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের সময় বেশির ভাগ সৈন্য প্রত্যাহার করে সামান্য কিছু রেখে গেলেও তা দ্ব্যর্থবোধকতা সৃষ্টি করতে পারে। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তখন অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই সৈন্য রেখে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। আর এতে করে আন্তঃআফগান ও যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তান কূটনৈতিক অগ্রগতিতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি এর জের ধরে নতুন করে সঙ্ঘাত বেধে যেতে পারে। ফলে নতুন কোনো জটিলতা সৃষ্টির চেয়ে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার একটি মডেল হতে পারে। এর রেশ ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ওই ধরনের মডেলের আমাদের ব্যাপকভাবে প্রয়োজন।

ক্রিসমাসে না হলেও নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের দিনের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সময় সূচি নির্ধারিত হতে পারে। আর এর মাধ্যমে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে একটি নতুন ও আরো শান্তিপূর্ণ যুগের সূচনা শুরু হতে পারে।

সূত্র : মিলিটারি.কম

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com