চীনের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে ‘টানেল প্রতিরক্ষা’ কৌশল নেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী
চলতি বছরের প্রথম দিকে চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের কাছে ভারতীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে মাইক্রোওয়েভ এনার্জি অস্ত্র মোতায়েনের খবর অস্বীকার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে তারা চীনা বাহিনীর যেকোনো ধরনের লঙ্ঘনের চেষ্টার বিরুদ্ধে টানেল প্রতিরক্ষা কৌশল অবলম্বন করবে।
স্পেশাল ফ্রন্ট ফোর্সের সহায়তায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যরা ১৯৬২ সালের পর আগস্টের ২৯-৩০ আগস্টেই প্রথমবারের মতো প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণে এলএসির বিশেষ অবস্থান দখল করে। ভারতীয় সৈন্যদের বিতাড়িত করতে পিএলএ মাইক্রোওয়েভ এনার্জি অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে অনেকের দাবি সত্ত্বেও ভারতীয় সেনাবাহিনী বলে আসছে যে তারা আগুয়ান অবস্থান বজায়ই কেবল রাখবে না, সেইসাথে চীনা সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা কৌশল অবলম্বন করবে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী, ভারতীয় সামরিক নেতারা দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সময় জাপানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে চীনারা সফলভাবে টানেল প্রতিরক্ষা কৌশল কিভাবে অনুসরণ করেছিল, তা তারা লক্ষ্য করেছে। দ্বিতীয় ইন্দো-চায়না যুদ্ধে (ভিয়েতনাম যুদ্ধে) আমেরিকান বাহিনীর বিরুদ্ধে ভিয়েতকংও একই কৌশল গ্রহন করেছিল। ভারতীয় বাহিনী সেগুলোও লক্ষ্য করেছে। জাপানিরা আইওয়ে জিমা ও অন্যান্য আইল্যান্ডেও এই কৌশল অবলম্বন করেছিল। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ানরাও কোরিয়া যুদ্ধের সময় এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল। উত্তর কোরিয়া এখনো ওই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এই পদ্ধতিতে ইলেক্ট্রিক্যাল লাইটনিং, অস্ত্র জমা করা ও ঘুমানোর ব্যবস্থাও থাকে।
পিএলও বিমান রাখার জন্য টানেল শেল্টার নির্মাণ করেছে লাসা এয়ারবেইজে। এমনকি দক্ষিণ চীন সাগরের হাইনান আইল্যান্ডসে পরমাণু ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন রাখার ব্যবস্থাও তারা করেছে।
সাম্প্রতিক পিএলএ টানেল ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর টানেলগুলো কেবল মাটির নিচে কিছু গর্ত নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী টানেলগুলো রক্ষার জন্য বিশাল ব্যাসের কনক্রিটের পাইপ বসিয়েছে। এগুলো শত্রুর আক্রমণ থেকে সৈন্যদের রক্ষা করতে পারবে। এসব পাইপ ছয় থেকে আট ফুট ব্যাসের। ফলে সৈন্যরা সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। এই যাতায়াত পথে তারা শত্রুদের গোলাবর্ষণের মুখেও পড়ে না।
টানেল কমপ্লেক্সের আরেকটি সুবিধা হলো, এগুলো উষ্ণও থাকে। ফলে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও সৈন্যরা নিরাপদে থাকতে পারে। উভয় পক্ষই লোকবল, সাজোয়া যানবাহনসহ নানা সামগ্রী জড়ো করেছে। বলা হচ্ছে, চীনা সৈন্যরা প্রিফ্যাবরিকেটেড থার্মাল শেল্টারে সজ্জিত। তাদের শেল্টারে ডরমিটরি, ওয়াশরুম, টয়লেট, ওয়ারহাউজও রয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্র মাইনাস ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও সচল থাকে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এতসব সুবিধা পাচ্ছে না। তারা আর্কটিক এলাকার তাঁবুতে থাকবে। প্রতি ৫ সৈন্যের জন্য একটি করে কেরোসিনের হিটার রয়েছে তাদেরকে উষ্ণ রাখার জন্য।
উত্তেজনা প্রশমনের আলোচনা চলার মধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনী তার অবস্থান জোরদার করে যাচ্ছে। তবে এসব প্রস্তুতি যুদ্ধের জন্য ফলপ্রসূ হবে কিনা তা আরেকটি বিষয় হবে। লাদাখের প্রত্যন্ত এলাকাটি দুর্দান্ত ট্যাঙ্ক কান্ট্রি হিসেবে অভিহিত করা যায়, আর টানেলগুলোকে আনায়াসেই জার্মানির সাথে থাকা ফরাসি সীমান্তের মাজিনো লাইনের সাথে তুলনা করা যায়। টানেলে থাকা সৈন্যদের আনায়াসেই এড়িয়ে তাদের ঘিরে ফেলা সম্ভব হবে।