ট্রাম্পের হঠকারিতার মূল্য গুনবেন বাইডেন?

0

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর চুক্তির ধারাবাহিকতায় জাপান বড় কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি না করে আমেরিকান প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তার আশ্রয়ে থেকেছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই বলেন যে নিরাপত্তা ছায়ার জন্য মিত্র দেশগুলোকে আমেরিকানদের মূল্য শোধ করতে হবে। এই অবস্থায় জাপান ভেতরে ভেতরে চীনের সাথে বিনিয়োগ ও নিরাপত্তার ব্যাপারে এক ধরনের সমঝোতায় চলে গেছে। অস্ট্রেলিয়াও ট্রাম্পের চাপে পড়ে যতই ‘কোয়াড’ জোটভুক্ত হোক না কেন আমেরিকার কথায় চলতে গিয়ে অর্থনীতিকে চীনা বয়কটের বিপদে ফেলতে চায়নি। আর চীনের সাথে দক্ষিণ চীনসাগর নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরোধের মধ্যে থাকা ভিয়েতনামও চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বাণিজ্যযুদ্ধে নিজের বিপদ দেখতে পেয়েছে। মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া ফিলিপাইন থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোও বাস্তবতার বাইরে যেতে পারেনি। তাদের সামনে করোনা-উত্তর অর্থনৈতিক বৈরিতাকে সামাল দিতে চীনা নগদ অর্থ বিনিয়োগের মূল্য অনেক বেশি মনে হয়েছে।

টিপিপি থেকে সরে আসার বিপ্লবী বা হঠকারী ঘোষণা দেয়ার সময় বারাক ওবামা নিজেও এর পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আমেরিকান থিংকট্যাংকগুলোর বক্তব্যকে ডেমোক্র্যাট ভাবনার প্রতিধ্বনি হিসেবে চিহ্নিত করে ট্রাম্প প্রশাসন উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ট্যাম্পের বিদায়ের সময় ফুরিয়ে আসার আগেই সেই দৃশ্যপটটিই সামনে চলে এলো যার আশঙ্কা ওবামা-বাইডেনরা করেছিলেন।

জো বাইডেনকে ঠাণ্ডা মাথার পরিণত বয়স ও চিন্তার মানুষ হিসেবে সবাই জানেন। তিনি এশিয়ান মিত্রদের আস্থা ফেরাতে কতটা কী করতে পারবেন বলা মুশকিল। আর বাণিজ্যবলয় তৈরির মতো উদ্যোগ রাতারাতি পরিণতি পায় না। বাইডেন বিকল্প কোনো কিছু নিয়ে হয়তো আসবেন। অথবা টিপিপিতে যোগ দিয়ে এর আগের অবয়বকে ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু সময়টাতো নদীর চলমান পানির মতো। একবার নদীর স্রোত লোনা দরিয়ার সাথে মিশে গেলে সেটিকে আর ফেরানো যায় না। তবুও দেখতে হবে দায়িত্ব নেয়ার পর জোশেফ বাইডেন কী করেন। তবে চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ যুদ্ধে তিনি যে মাত্রাতেই হোক না কেন ক্ষান্ত যে দেবেন তা বুঝা যাচ্ছে। নতুন ১৫ জাতির বাণিজ্যচুক্তির পর সেটি সম্ভবও হবে না।

মোদির আশার গুড়ে বালি!
চীনের বিশেষ সমর্থনে যে মহা বাণিজ্যবলয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার সাথে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নেই। ভারত এই উদ্যোগ থেকে সরে আসার কারণে সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে এই মুহূর্তে এর অংশ করার ব্যাপারে বেইজিং তাড়াহুড়া করেনি। তবে চীনবিরোধী বিনিয়োগ ও বাণিজ্যযুদ্ধের যে আশায় দলে দলে বিশ্ব পুঁজির মালিকরা ভারতে এসে বিনিয়োগ করতে লাইন দেবেন বলে প্রত্যাশা মোদি করেছিলেন সেই আশার গুড়ে বালি পড়ার আশঙ্কাই প্রবল মনে হচ্ছে। ভারতের দুই ‘কোয়াড’ অংশীদার জাপান ও অস্ট্রেলিয়া নতুন বাণিজ্যবলয়ের দুই প্রধান স্তম্ভ। তারা চীন থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে কেন ভারত বা বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করতে যাবেন? এ কারণে ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার দেশ চীন থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার নয়, নতুন বিনিয়োগ করতে চায় ভারত বা বাংলাদেশে। তবে ১০ পয়সার লাভ ছেড়ে ২ পয়সা লাভের জন্য জাপান চীন ছেড়ে ভারতে বিনিয়োগ করতে যাবে এমনটি মনে হয় না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com