নেপাল: ক্ষমতাসীন দলের সঙ্কট আবারও গভীর হচ্ছে, দুই পক্ষই অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করছে

0

নেপালে ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান কে পি শর্মা ওলি আর অপর চেয়ারম্যান পুষ্প কামাল দহলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে দলের ভেতরেও সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে। 

সম্প্রতি দহল অভিযোগ করেন যে, ওলি সরকার ও দল পরিচালনার অযোগ্য এবং তার পদত্যাগও দাবি করেন তিনি। এখন নিজের অবস্থানকে সংহত করার জন্য দহলের বিরুদ্ধে কিছু একটা ব্যবস্থা নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। অথবা দহলকে আলাদা করে দেয়ার জন্য দল ভেঙ্গে দিতে হবে। 

সেক্রেটারিয়েটের বৈঠকের পরপরই ওলি এ ব্যাপারে তার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। সেক্রেটারিয়েটের নয়জন সদস্যের সাথে তিনি বালুওয়াটারে বৈঠক করেছেন। এরা হলেন মাধব কুমার নেপাল, বামদেব গৌতম, ইশ্বর পোখরেল, বিষ্ণু পাউডেল এবং রাম বাহাদুর থাপা। দুই চেয়ারপার্সনের লড়াইয়ে নেপাল আর গৌতম দহলের পক্ষ নিয়েছেন। অন্যদিকে থাপার অবস্থান স্পষ্ট নয়। পোখরেল আর পাউডেল স্পষ্টতই ওলির পক্ষে আছেন। 

স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও ওলির ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুবাস নেমবাং বলেছেন, “দহলের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ কেন সেক্রেটারিয়েটের বৈঠক ডেকেছে, সেটার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর দহলের মতামত যাই হোক, সেখানে দলের সেখানে পাঁচ সদস্যের সবার মতের প্রতিফলন হয়েছে কি না, সেটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়”।

সিনিয়র নেতা ঝালা নাথ খানাল আর দলের মুখপাত্র নারায়ন কাজি শ্রেষ্ঠও দহলের পক্ষে রয়েছেন। 

শুক্রবারের বৈঠকে দহল ১৯ পৃষ্ঠার রাজনৈতিক দলিল উপস্থাপন করেন, যেখানে বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ রয়েছে, যে সব ক্ষেত্রে ওলি তার আগের চুক্তি থেকে সরে গেছেন এবং যে সব ক্ষেত্রে সরকার চালাতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি দাবি জানিয়েছেন যাতে ওলি ‘ত্যাগ স্বীকার করেন’। অর্থাৎ ওলি যাতে দলকে রক্ষার জন্য এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। 

ওলি এর আগে হুমকি দিয়েছিলেন যে, তার বিরোধী পক্ষ যদি তার উপর বেশি চাপ দেয় এবং সরকার পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে তাহলে তিনি বড় ধরণের পদক্ষেপ নিবেন। 

ওলির ঘনিষ্ঠ স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সদস্য বলেন, “দহলের অশালীন পদক্ষেপটা অনেকটা পরিবার থেকে একজন সদস্যকে জোর করে বের করে দেয়ার মতো। রাজনীতি হলো বিভিন্ন সম্ভাবনার খেলা। যে কোন কিছু এখানে হতে পারে। এখন কিছু সময় অপেক্ষা করা দরকার। দেখা যাক কি ঘটে”।

কিন্তু দহলের ক্যাম্প ওলির পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছে এবং জোর দিয়ে বলছে যে, দলের বৈঠক হলেই কেবল সব মতপার্থক্যগুলোর সমাধান হতে পারে। যদিও বুধবার পরবর্তী সেক্রেটারিয়েটের বৈঠক হওয়ার কথা, কিন্তু ওলি তার রাজনৈতিক দলিল প্রকাশের পর সেই বৈঠকের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

সেক্রেটারিয়েটের এক সদস্য বলেন, “ওলির সমর্থক আর তার পদক্ষেপ আমরা দেখছি এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছি। নির্ধারিত দলীয় বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমেই সবকিছুর সমাধান করতে হবে”।

ওলির সমর্থকদের মধ্যে কিছু নেতা দাবি জানিয়েছেন যে, দহলকে তার দলিল প্রত্যাহার করে নিতে হবে কারণ ১১ সেপ্টেম্বর স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে, তার এই দলিল সেই আলোচনার চেতনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। 

লুম্বিনি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য শঙ্কর পোখরেল নির্বাহী চেয়ারম্যান দহলের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন যাতে তিনি তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছে যে, দলের প্রথম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগের মাধ্যমে দলের চেতনা এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। 

ওলির ঘনিষ্ঠ কিছু নেতাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে বলবেন, যেটা তার সাথে আলোচনা না করেই উত্থাপন করা হয়েছে। অথবা তিনি তার বিরুদ্ধে আনা মারাত্মক অভিযোগগুলোর জবাবও দিতে পারেন। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com