যেভাবে যুদ্ধ করতে চান মোদি

0

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বন্ধু ও শত্রু সবাই জানেন, গুজরাটের এই লোকটির ব্যাপারে কোনো কিছুই অভাবিতপূর্ব নয়। তিনি তার বক্তৃতা অনুশীলন করেন, তার শব্দগুলো পরিমাপ করেন, তারপর সর্বোচ্চ প্রভাব সৃষ্টির জন্য বার্তা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহান্তে ঐতিহাসিক লাঙ্গেওয়ালে (১৯৭১ সালের সঙ্ঘাতে এখান একটি পাঞ্জাব রেজিমেন্ট কোম্পানি ও বিমান বাহিনীর হান্টারগুলো ৪০টি পাকিস্তানি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছিল) তিন বাহিনীর উদ্দেশে বক্তৃতকালে মোদি ভারতের যুদ্ধ কৌশল ব্যাখ্যা করেন। আর তা নিশ্চিতভাবেই শান্তিবাদী ছিল না। তিনি বলেন, ভারত বুঝতে আগ্রহী বা শত্রুকে বোঝাতে আগ্রহী। তবে শত্রু যদি ভারতের সামরিক বাহিনীর শক্তি পরীক্ষা করার চেষ্ট করে, তবে প্রচণ্ড প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। সাধারণভাবে বলা যায়, ভারত সঙ্ঘাত চায় না, তবে সঙ্ঘাত সৃষ্টি হলে ভারত তার অবস্থান ধরে রাখবে।

মোদির বক্তৃতায় দেশের ও বিদেশের উভয় শ্রোতাদের জন্যই বার্তা ছিল। দিওয়ালির দিনে ভারতীয় সৈন্যদের সাথে থাকার জন্য তিনি ইস্ট এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন এড়িয়ে গেছেন, সেখানে পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে।

মোদির অবস্থানে ধারাবাহিকতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোট হামলার সময়, পাকিস্তানি প্রপাগান্ডা মেশিন আটক ও রক্তাক্ত উইং কমান্ডার অভিনন্দনের ছবি প্রচার করতে থাকলে মোদি ইসলামাবাদকে বলে দেন যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলটের কোনো ধরনের ক্ষতি হলে ভারত ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে। তিনি রাজস্থান সেক্টরে ভারতীয় পৃথ্বি ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের নির্দেশ দেন। বার্তাটি এমনই প্রভাব সৃষ্টি করে চে মিগ ২১-এর ভারতীয় পাইলটকে পরের দিনই পাকিস্তান সরকার ফেরত দেয়।

লঙ্গাওয়ালে আগের মতোই প্রধানমন্ত্রী মোদি বর্তমান চীনা সরকারের (যদিও নাম প্রকাশ করেননি) সম্প্রসারণবাদী নীতির সমালোচনা করেন এই বলে যে এটি ১৮ শতকের জটিল মানসিকতার সৃষ্টি এবং ভারত দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। এটি ছিল দ্রুত উদীয়মান কোয়াড গ্রুপিং নিয়ে চীনা ভাষ্যের (চীন বলছিল ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত এই গ্রুপ হলো স্নায়যুদ্ধের মানসিকতার সৃষ্টি) জবাব।

লঙ্গেওয়ালায় মোদি আবারো জোর দিয়ে বলেন যে ভারত যুদ্ধকে শত্রুর কাছে নিয়ে যাবে বা ভারতের প্রতি হুমকিকে উৎসমূলেই ধ্বংস করে দেবে। ভারতের এই নতুন আক্রমণাত্মক-রক্ষণাত্মক মতবাদের সাথে যোগ হয়েছে আকাশ ও ত্বরিৎ শক্তি প্রক্ষেপণের সক্ষমতা। এর অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যতের যুদ্ধগুলো ভারতের মাটিতে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত হবে না। বরং ২২ অক্টোবর গঙ্গা নদীর তীরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং দিওয়ালির দিনে ইস্ট এশিয়া সামিটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যা বলেছেন, তার প্রেক্ষাপটে মোদির বক্তব্য বিবেচনা করা দরকার। ওই দুজনের কারো বক্তৃতাই চিনির আবরণযুক্ত ছিল না। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ভারত কী প্রত্যাশা করে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে নৌচলাচলের স্বাধীনতা প্রশ্নে এবং একে চীনা জলাশয়ে পরিণত করার যেকোনো চেষ্টা প্রতিরোধের তাই বলা হয়েছে।

বেইজিংয়ের সাথে কোনো ধরনের তিক্ততা বা সঙ্ঘাত কামনা না করেই শনিবার জয়শঙ্কর যা বলেছেন তা আসলে ২০১৪ সালে প্রথম শীর্ষ বৈঠকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের সাথে মোদির কথোপকথনের পুনরাবৃত্তি। ওই সময় মোদির কঠোর অবস্থান ভারতের অনেক ভারতীয় চীনা বিশেষজ্ঞকে সতর্ক করে দিলেও প্রধানমন্ত্রী তাতে সত্যিই অটল থেকেছিলেন। আর ইস্ট এশিয়া সামিটে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে জয়শঙ্করের অধিকতর উদার কণ্ঠ থাকা ভিন্ন বিষয়।

ভারত ও চীন পারস্পরিক সম্মতিতে পূর্ব লাদাখ থেকে সৈন্য প্রত্যহার ও উত্তেজনা হ্রাসের পথে থাকলেও নয়া দিল্লি বর্তমান সীমান্ত বিরোধ নিয়ে চীনের সাথে খুব বেশি আলোচনা করবে না বা ওই সীমান্তে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com