পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মুসলিম সমীকরণ

0

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ২০২১ সালের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য অ্যাসেম্বলি নির্বাচনের আগে ‘মুসলিম ভোটারদের’ ইস্যুটি অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের (এআইটিসি) উপর এটা বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম ইস্যুটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি।

২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা ২৭ শতাংশের একটু বেশি। অর্থাৎ রাজ্যের প্রতি তিনজন ভোটাদের একজন হলো মুসলিম, যাদের অধিকাংশই সুন্নি।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা প্রথমে কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়েছিল। এরপর সিপিআই-এমের নেতৃত্বাধীন বাম ফ্রন্ট এবং ২০১১ সাল থেকে তারা মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন দিচ্ছে। ২৯৪টি অ্যাসেম্বলি আসনের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই রয়েছে দক্ষিণ বাংলায়। ২০১১ ও ২০১৬ সালের রাজ্য নির্বাচনে মুসলিমরা সেখানে ব্যাপকহারে তৃণমূলকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে এসে এই তৃণমূলের ব্যাপারে এই সম্প্রদায়ের ধারণাটা বদলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। কলকাতার পূর্ব প্রান্ত ঘুরে অন্তত তেমনটাই মনে হয়েছে।

তোপসিয়া নিজেই একটা জগৎ। শুধু ইট সুড়কির তৈরি ভবনগুলোর বাতাসশূন্য ঘরগুলোতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করছে, দেশের ও বিদেশের বাজারের জন্য চামড়ার পণ্য সেলাই করছে তারা। নোংরা আবর্জনার এই পরিবেশের মধ্যে দেখা যাবে শহরের অভিজাত পাড়া থেকে মার্সিডিজে করে মানুষ আসছে তোপসিয়ায়। এদের একজন পঞ্চাশোর্ধ সাইয়েদ জামিরুল হাসান। অল ইন্ডিয়া মসলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিনের (আইমিম) আহ্বায়ক তিনি। ১৪টি কারখানা রয়েছে তার আর শীর্ষ চামড়াজাত পণ্য রফতানিকারকদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

হাসান একসময় নেহরু-গান্ধী পরিবারের বংশধর সঞ্জয় গান্ধীর জুনিয়র সহকারী ছিলেন। এখনো বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে তার। বাংলায় আইমিম দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল দলটির নেতৃত্বে আছেন হায়াদ্রাবাদ-ভিত্তিক লিঙ্কনের ব্যারিস্টার-রাজনীতিবিদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। অবাঙ্গালি হাসান বলেন : “আমি জানি না আইমিম এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেবে কি না, এটা ওয়াইসির সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। কিন্তু যদি তারা দেয়, তাহলে সেটা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি তারা না দেয়, তাহলে সমস্যাটা হবে আইমিমের, কারণ দারুণ একটা গতি সৃষ্টি হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আমাদের সমাবেশে যোগ দিচ্ছে”। এর আগে তিনি তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন।

হাসান বলেন, আইমিম প্রচারণা চালাচ্ছে, তবে প্রকাশ্য সমাবেশের মাধ্যমে নয়, সোশাল মিডিয়া ও মেসেজিং গ্রুপগুলোর মাধ্যমে, কারণ তারা দমন পীড়নের ভয় পাচ্ছে। “এমনকি আমাকে পর্যন্ত দুই সপ্তাহ আটকে রাখা হয়েছিল। বোঝা যাচ্ছে তৃণমূলের মধ্যে আইমিমকে নিয়ে গভীর ভয় তৈরি হয়েছে”।

বিজেপি হিন্দু পুনর্জাগরণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং তাদের উত্থানের পর ভারতে মুসলিম নেতৃত্বাধীন দলের প্রসার ঘটেছে। যদিও বেশির ভাগ দলই রাজ্য পর্যায়ের, তবে আইমিম জাতীয় পর্যায়ের দল।

১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সামনের সারিতে আছে আইমিম, বললেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মতিন। বাংলা ও ভারতে মুসলিম রাজনীতির পরিক্রমা নিয়ে গবেষণা করেছেন মতিন।

তিনি বললেন, “আইমিমের মতো মুসলিম-নেতৃত্বাধীন দলগুলোর উত্থান সর্বভারতীয় কোন ঘটনা নয়, বরং যে সব রাজ্যে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনগোষ্ঠি এবং তাদের একটা রাজনৈতিক ইতিহাস আছে, সেখানে এই দলগুলোর উত্থান হচ্ছে (যদিও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো উত্তর প্রদেশ)। পশ্চিমবঙ্গ আর আসামে এই ধরনের দলগুলো বাড়ছে”।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com