কী আছে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার শান্তিচুক্তিতে

0

নাগরনো-কারবাখ অঞ্চল নিয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর শান্তিচুক্তি করেছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। এ চুক্তিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে আজারবাইজান। অন্যদিকে চুক্তির বিরুদ্ধে আর্মেনিয়ায় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

আজারবাইজানের অঞ্চলটি এতদিন আর্মেনিয়ার দখলে ছিল। মুখোমুখি লড়াইয়ের পর নাগরানো-কারবাখের বিশাল অংশ পুনর্দখল নেয় আজারবাইজান।

সেপ্টেম্বরে শেষের দিকে তীব্র লড়াইয়ে দুই পক্ষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর শান্তিচুক্তিতে সম্মত হয় সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশ দুইটি।

এরমধ্যে চুক্তি থেকে একাধিকবার সরে আসলেও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় মঙ্গলবার চূড়ান্ত শান্তিচুক্তিতে পৌঁছায় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া।

চুক্তি অনুসারে সংঘাতের সময় দখলে নেওয়া নাগরনো-কারবাখের অঞ্চল আজারবাইজানের কাছেই থাকছে। এ ছাড়া কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংলগ্ন আরও কিছু অঞ্চল থেকে আর্মেনিয়া সরে আসতে সম্মত হয়েছে।

আজেরি সংবাদমাধ্যম ট্রেন্ড জানায়, শান্তিচুক্তির পর আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমি একটি যৌথ বিবৃতি দেন।

চুক্তির বিস্তারিত উঠে এসেছে এই তিন নেতার বিবৃতিতে। এতে দেখা যায়, নাগরনো-কারবাখে সম্পূর্ণ যুদ্ধ বিরতি সম্পন্ন হয়েছে এবং এর মাধ্যমে অঞ্চলটিতে সব ধরনের সংঘাতের অবসান ঘটল। ১০ নভেম্বর প্রথম প্রহর থেকে এ চুক্তি বাস্তবায়ন হবে।

চুক্তি অনুসারে নিজেদের দখলে রাখা আগদাম জেলা এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চল আর্মেনিয়া ২০ নভেম্বরের আগে আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে।

একইভাবে ১৫ নভেম্বরের আগে আজারবাইজানকে কালবাজার জেলা ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া। ১ ডিসেম্বরের আগে লাচিন জেলাও আজারবাইজানের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

নাগরনো-কারাবাখের সংযুক্ত লাইন এবং লাচিন করিডোরে রাশিয়ার একটি শান্তিবাহিনী টহল দেবে। সেখানে  হালকা অস্ত্রসহ সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে মোতায়েন থাকবে প্রায় দুই হাজার রুশ সেনা।

তবে নাগরনো-কারাবাখের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আর্মেনিয়ার জন্য উন্মুক্ত থাকবে লাচিন করিডোর। করিডোরটিতে আর্মেনিয়ার বাণিজ্য যোগাযোগ ও নাগরিকদের যাতায়াতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে আজারবাইজান।

সংঘাতের ফলে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষেরা নাগরনো-কারবাখে ফিরে যাবে। এ ছাড়া বন্দী বিনিময়েও সম্মত হয়েছে দুই দেশ। লড়াইয়ে নিহত সেনাদের লাশও ফিরিয়ে দেয়া হবে। আর অর্থনৈতিক যোগাযোগের সবগুলো রুট উন্মুক্ত রাখা নিয়ে সম্মত হয়েছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। 

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দুটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান।

তবে নাগরনো-কারবাখ অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ বাধে। এ নিয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৯৪ সালে অঞ্চলটি দখলে নিয়ে নেয় আর্মেনিয়া।

যদিও নাগরনো-কারবাখ অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের এলাকা হিসেবেই স্বীকৃতি ছিল।

ওই যুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ মারা যায় এবং ১০ লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। এই উদ্বাস্তুদের চাপ তৈরি হয় আজারবাইজানের ওপর। ২০১৬ সালেও অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষ লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিল। সেসময় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছিল।

চলতি বছরের জুলাইয়ে সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে আজারবাইজানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন। সেই উত্তেজনা পরবর্তীতে তীব্র সংঘাত রূপ নেয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com