বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপবে ব্যবসায়ীদের ওপর

0

করোনা মোকাবিলায় কড়াকড়ি আরোপ ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে জাহাজজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশি ব্যবসায়ীদের কোনো হাত না থাকলেও সেখানে জাহাজজটের কারণে বাড়তি অর্থ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে ফিডার অপারেটররা। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ব্যয় বেড়ে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্য দেশের সমুদ্রবন্দরে সৃষ্ট জাহাজজটে সারচার্জের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়কে অযৌক্তিক বলছেন ব্যবসায়ীরা।

আগে বন্দরগুলোয় জাহাজ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বার্থিং পেত, এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২-৪ দিন। এ অবস্থায় ‘ইমার্জেন্সি কস্ট রিকোভারি সারচার্জ’ (ইসিআরএস) আরোপের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর ও কলম্বোগামী জাহাজের ফিডার অপারেটররা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘোষণা কার্যকর হলে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

সিঙ্গাপুর ও কলম্বো রুটে জাহাজ পরিচালনাকারী শিপিং লাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, বৈশি^ক মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে সিঙ্গাপুর বন্দরে। বন্দরে পৌঁছানো নাবিকদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের পাশাপাশি কভিড পরীক্ষার সার্টিফিকেটও দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া ‘পিক সিজন’ হওয়ায় সেখানে জাহাজের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ফলে আগে জাহাজ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই জেটিতে ভিড়তে পারত, এখন সেখানে লাগছে ৩-৪ দিন। অন্যদিকে জাহাজ বাড়ার পাশাপাশি একটি টার্মিনালে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কলম্বো বন্দরে বড় ধরনের জাহাজজট সৃষ্টি হয়েছে।

তাদের মতে, এসব বন্দরে অপেক্ষমাণ সময় বেড়ে যাওয়ায় জাহাজগুলোর ব্যয় বেড়ে গেছে। আর তা পুষিয়ে নিতে সারচার্জ আরোপ করছে বিভিন্ন ফিডার অপারেটর। ইতিমধ্যে মেইন লাইন অপারেটরদের (এমএলও) কাছে এ সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর-কলম্বোসহ বিভিন্ন রুটে জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ভাসি শিপিং (প্রা.) লিমিটেড আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে প্রতি টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস) পণ্যভর্তি কন্টেইনারে ৭৫ মার্কিন ডলার এবং খালি কন্টেইনারে ৩৭ দশমিক ৫ ডলার সারচার্জ আরোপের কথা উল্লেখ করে এমএলওদের কাছে।

ট্রান্সওয়ার্ল্ড ফিডারস গ্রাহকদের চিঠিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন কারণে কলম্বো বন্দরে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সাত দিন পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এ অবস্থায় বাড়তি ব্যয় পুষিয়ে নিতে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে প্রতি টিইইউস পণ্যভর্তি কন্টেইনারে ৭৫ ডলার এবং খালি কন্টেইনারে ৩৭ দশমিক ৫ ডলার ইসিআরএস আরোপ করবে তারা। একইভাবে চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর ও চট্টগ্রাম-পোর্ট কেলাং রুটে আগামী ২০ নভেম্বর থেকে পণ্যভর্তি কন্টেইনারে (প্রতি টিইইউস) ৭০ ডলার ও খালি কন্টেইনারে ৩৫ ডলার সারচার্জ আরোপ করা হবে।

ফার শিপিং লাইন্সও একই ধরনের চিঠি পাঠিয়েছে এমএলওদের কাছে। চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে পণ্যভর্তি কন্টেইনারের ওপর ৭৫ ডলার ও খালি কন্টেইনারের ওপর ৩৭ দশমিক ৩৫ ডলার সারচার্জ আরোপ করার  ঘোষণা হয়েছে।

মহামারীর মধ্যে ফিডার অপারেটরদের এ ধরনের সারচার্জ আরোপের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে জাহাজজটের মাশুল বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কেন দেবে? এটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনায় জাহাজগুলোকে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং ও পেপিলাস বন্দরের ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব বন্দরে এভাবে সারচার্জ আরোপ করা হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পণ্যমূল্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বে কোনো ব্যবসাই এখন লাভজনক নয়। এমন অবস্থায় সারচার্জ আরোপ করা মানে বিশ্বকে মন্দার পথে আরও একধাপ এগিয়ে দেওয়া। ফিডার অপারেটরদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কন্টেইনার জাহাজে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে চারটি বন্দরের ওপর চট্টগ্রাম বন্দরকে নির্ভর করতে হয়। এগুলো হলো সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং ও পেপিলাস বন্দর। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দর হয়েই আনতে হয় ৮১ শতাংশ পণ্য। তাই এ দুই বন্দর কেন্দ্র করে ফিডার অপারেটররা সারচার্জ আরোপ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com