নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত খোকা
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নানা-শ্রেণিপেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে তার মরদেহ নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে আনা হলে অশ্রুজলে প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় তারা।
প্রথমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়াত নেতার কফিনটি দলীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর দলের পক্ষ থেকে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দেওয়া হয়।
কালো কাপড়ে মোড়া অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয় খোকার কফিন। নেতা-কর্মীদের কফিনের সামনে কাঁদতে দেখা যায়। বিএনপি মহাসচিবসহ নেতারাও অশ্রুসজল ছিলেন।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সকলের প্রিয় নেতা, দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা, দুই বারের নির্বাচিত ঢাকার সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এমন এক সময় চলে গেলেন যখন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তিনি তাকে শেষ দেখা দেখতে পারলেন না।
“আজকে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতনে সারা বাংলাদেশের মানুষ যখন অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, সেই সময়ে যে মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল সাদেক হোসেন খোকা তার অন্যতম। তিনি চলে গেছেন; তার বর্ণাঢ্য রাজনীতির কথা বলার সময় নয়।
তিনি বলেন, “সাদেক হোসেন খোকার এই অকালে চলে যাওয়ায় যে রাজনৈতিক শূণ্যতা সৃষ্টি হলো তা পুরণ হওয়ার নয়। আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করি তিনি যেন তার সকল গুনাহ মাফ করে দেন, তাকে বেহেশত নসিব করেন।”
দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খোকার বড় ছেলেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বাবার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চান।
এর আগে কার্যালয়ের সামনের খোকার জানাজায় ইমামতি করেন উলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক। এরপর তার কফিনে স্যালুট জানায় সেক্টার কমান্ডার শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
সকাল ৮টা থেকে নয়া পল্টনের অফিসের নিচতলায় কোরানখানি অনুষ্ঠিত হয়।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিবউন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসহ দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। ২০ দলীয় জোটের জামায়াতে ইসলামী অধ্যাপক মজিবুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ, শামীম সাঈদী, খোন্দকার লুফর রহমান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামসহ নেতারাও জানাজায় অংশ নেন।
নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত সড়ক ও তার পাশ-পাশের গলিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক জানাজায় দাঁড়ান। পুরো পল্টন রোড কানায় কানায় পূর্ণ হয়। তখন ফুটপাতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরাও মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানান।
বিএনপির কার্যালয় থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে সেখান জানাজা শেষে গোপীবাগে পৈত্রিক বাসভবনে কিছুক্ষন রাখা হবে খোকার মরদেহ। সেখান থেকে বাদ আসর ধুপখোলা মাঠে সর্বশেষ জানাজার পর জুরাইনে দাফন করা হবে এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে।